কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৩ মার্চ, ২০১৩

চৈতী আহমেদ


বৃষ্টির আঁচল


দুদিন ধরে এমন নাকি কান্না কাঁদছে আকাশ! ওমা কাঁদবো না? এতো আমার কান্নারই দিন, শ্রাবণ মাস! তাতে কী, এমন প্যান্‌প্যানে কান্না আমার একেবারেই না পছন্দ, পথ ঘাট তোমার এমন সিকনী কান্নায় ঘিনঘিনে হয়ে উঠে! চলাফেরা দায়, কাঁদবেই যদি বুক ভাসিয়ে কাঁদ না কেন? তোমার বুকের গুমোটও কেটে যাবে, সমাজসেবাও হবে, মানে এই নগরের মানুষ কাজের ফাঁকে ফাঁকে রাজপথেই নৌকা ভ্রমণের সুযোগ পাবে। শুনে ওর সেই যে হেঁচকি উঠলো, থামার নামটি নেই। ত্যাক্ত হয়ে বেরিয়ে এলাম রাস্তায়। কাঁহাতক আর ঘরে বসে থাকা যায়!

জরুরি কেনাকাটা বাকি, নাটক সরণীতে যেই পৌঁছলাম, ওমা ওর যেন রোখ চাপলো, দীর্ঘদিনের জমানো শোক বুঝি আমার অপেক্ষাতেই ছিলো, বাগে পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো মাথার উপর, কিছু বুঝে উঠবার আগেই আমাকে ভিজিয়ে দিলো। আমি কোনো দোকানের বারান্দায় আশ্রয় নেবার জন্য ইতিউতি তাকালাম। উঁহু কোথাও দাঁড়াবার জায়গা নেই, আর ভিজেই তো গেছি! কী হবে আর বারান্দায় উঠে! অনেকদিন মানে অনেক বছর, তাও না, কয়েক যুগই হবে এমন ঝুম বৃষ্টিতে ভিজি না আমি। একেবারে গহীনের, যাকে তুমি বলতে ছেলেমানুষ, জেগে উঠলো ছলবল করে। বারান্দায় দাঁড়ানোদের তাকানো দেখে মনে হচ্ছে, তারা যেন বাংলা সিনেমার শুটিং দেখছে। কী করবো, ভিজে ভিজেই এগোতে লাগলাম। আগে ভিজতাম তোমার সাথে লুকিয়ে বাড়ির ছাদে, বাগানে, মাঠে। এখন একা, রাজপথে। অবশ্য এটাকে এখন পথ না বলে আমাদের ছোট নদী বলাই যায়। হাঁটু পানি ভেঙে ভেঙে এগোচ্ছি। হঠাৎ দেখি লোডশেডিংয়ের মধ্যে ফুলের দোকান আলো করে বসে আছে দোলন! আহা, কতদিন দেখিনি তাকে, দোলন আমার প্রিয় দোলন! জীবনের প্রথম লেখা গল্পের প্রথম লাইনটি লিখেছিলাম ওকে নিয়ে। তুমিও ছিলে সেই গল্পে। ‘দৈনিক পূর্বকোণে’ ছাপা হয়েছিলো। বৃষ্টিতে ভিজে কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল সে। আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভিজছি, আর আমার এতো কাছে দোলন, আমার আর তর সইলো না। জলকন্যার মতো ভেজা শরীরেই ছুটে গেলাম দোকানের ভেতর। দোকানীর হাতে টাকা গুঁজে দিয়েই সবগুলো দোলনকে বুকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে আবার নেমে গেলাম ছোট নদীতে। হাঁটু জল ভেঙে ভেঙে বুকের মধ্যে অনেক স্মৃতির বুদবুদ নিয়ে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে ভাসিয়ে ঘরে ফিরলাম। কেউ টের পেলো না। এই দোলনচাঁপার ভেজা পাপিড়তেই আঁচড় কেটে তুমি জলরঙে লিখেছিলে 'ভালোবাসি'।

কতদিন পর আমি মনের সুখে কাঁদলাম! শ্রাবণের বৃষ্টি, তুমুল বৃষ্টি দিব্যি গিলে ফেললো আমার চোখের নোনা পানি। কেউ কিচ্ছুটি টের পেলো না। শ্রাবণের বৃষ্টি কেবল জেনে গেল আমারও গহীনে তার মতো এমন কান্না থাকতে পারে। অন্যরা দেখে ভাবলো, আমি বুঝি এই ঝুম বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়েছিলাম সাদা ধবধবে ন্যাতানো ফুলগুলো কিনতে। ওরা কি আমায় পাগল ভাবলো! ভাবুক যা খুশি। তুমি তো জান, দোলনচাঁপা আমাদের প্রিয় প্রিয়তম স্মৃতিময় ফুল! বর্ষা আমাদের বুকের ভেতর প্রিয় প্রিয়তম ঋতু! বর্ষণ! প্রিয় ফুল,ঋতু ফেলে রেখে কেন চলে গেলে! মৃত্যু মায়াপুরীতে আছে কি বর্ষা? সেই বর্ষার ঝুম বৃষ্টিতে দোলনচাঁপা কি মেলে রাখে তার প্রেমময় শুভ্র হৃদয়ের আঁচল কারও অনন্ত অপেক্ষায়? আমার মতো কেউ কি ওখানে বৃষ্টির আঁচলে কান্না লুকোয়!


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন