কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৩

সমীর রায়চৌধুরী

প্রস্রবণ
সমীর রায়চৌধুরী



চাইবাসায় ফিরে যাব। দু’দিন হয়ে গেল। শক্তি আর আমার ভালো লাগছে না। সোনুয়া থেকে রওয়ানা হবার সময় ফরেস্টার কুতুদাকে পেয়ে গেলাম। তিনি জঙ্গলের ভেতরের পথঘাট ভালো ভাবে চেনেন। লালমাটির রাস্তা। তবে পাকারাস্তা দিয়ে ফেরার চেয়ে অনেক কম সময় লাগে। জঙ্গল আর জঙ্গলের জীবনকে আরও কাছ থেকে জানা যায়। আমাদের জিপে তিনি উঠে গেলেন। তাঁর সাইকেলটিও গাড়িতে তুলে নেওয়া হলো। ড্রাইভার ছাড়া খালাসীও রয়েছে।

আমাদের রুটে যেসব গ্রাম পড়বে তার নামগুলো কুতুদা পরপর লিখে দিলেন। শক্তি জেনে নিল কোথায় ভালো মহুয়া বা রসম্‌ পাওয়া যায়। গাড়ি রওয়ানা দিল। আমার স্বভাবমতো আমি কিছু লজেন্স সঙ্গে নিয়েছি। ওয়াটার বটলে জল আছে। পথে একুশটা গ্রাম। গ্রামগুলোতে মানুষ ঘনিষ্ঠ হয়ে পাশাপাশি ঘর বানিয়ে থাকে। কেননা, জল যেখানে পাওয়া যায়, সেখানেই মানুষ ভিড় করে। ফরেস্টার বললেন, এই অঞ্চলে প্রচুর প্রস্রবণ রয়েছে। বনবিভাগ সেগুলো দেখাশোনা করে। বেশিরভাগ প্রস্রবণ অর্জুন গাছের শিকড়ের জায়গা থেকে বেরিয়েছে। সকালের দিকেই প্রচুর জল পাওয়া যায়। তারপর বেলা যত বাড়ে, জল কমে যায়। অনেকটা কর্পোরেশনের টাইম কলের মতো।

পাঁচ ছ’টা গ্রাম পেরোনোর পর কুতুদা নেমে গেলেন। ড্রাইভার এবং আমাকে পরিষ্কার করে রুটচার্ট বুঝিয়ে দিলেন। ড্রাইভার অবশ্য বলল, ‘পুরানা সাহেবকো লেকর হম ইস রাস্তা সে লৌটে’। শক্তি আমার দিকে চেয়ে বলল, ‘আমাদের গায়ে প্রচুর লালধুলো জমেছে। তোয়ালেটা দিয়ে ভালো করে ঝেড়ে দে’। আমাদের দুজনের চোখেই চশমা, এই একটা সুবিধে।

এই রুটের শেষ গ্রামটা আমার আর শক্তির চেনা। সেখানকার অনেক লোকজন আমাদের চেনে। কাছাকাছি ওরা সরকারী স্কিমে মাটি কাটার কাজ করে। শক্তি ইতিমধ্যে তার মহুয়া পেয়ে গেছে। গ্রামগুলো দেখতে দেখতে যেতে আমাদের ভালো লাগছে। প্রত্যেক গ্রামে একটা বা দুটো প্রস্রবণ। প্রস্রবণের জায়গাটা ছায়ায় ঘেরা। জলও তাই ঠান্ডা থাকে।

শেষ গ্রামটার নাম তোন্তো। তার খুব কাছাকাছি পাকারাস্তা। পথে আমরা বেশ খানিকটা মাছ কিনলাম। প্রথমে আমরা গেলাম চাইবাসার মধুটোলার বাড়িতে। ওরা কিছুটা মাছ আমাদের ভেজে দিলেন। কথা বলার সময় শক্তি খুব দূরত্ব রাখছে। কেননা, ইতিমধ্যে খানিকটা মহুয়া তার পেটে গেছে। শক্তি এখন নিজেই এক অন্তঃপ্রস্রবণ। ওর কথাগুলোও এখন কবিতার ভাষায়। জল দিয়ে ভালো করে চোখমুখ ধুয়ে নিল।

নিমডি যাওয়ার পথে আমরা একটা বড় পাউরুটি কিনলাম। আমি শক্তিকে বললাম, ‘সময়টা দেখতে দেখতে কেটে গেল। আমরা নিমডির বাড়িতেও ফিরে এলাম’। শক্তি বলল, ‘সেদিন সেই যে লিখলাম না –- ‘দিন চলে যায় কালের পাতায়’ –- কিন্তু আজ জঙ্গলের ভেতর দিয়ে আসার সময় মনে হলো –- ‘দিন চলে যায় শালের পাতায়’...

1 কমেন্টস্:

  1. তপনকর ভট্টাচার্য১৬ এপ্রিল, ২০১৩ এ ৭:১৭ PM

    স্মৃতিচারণা যেন।শেষ কয়েকটি টাচ,অসাধারণ ঝুরোগল্প।

    উত্তরমুছুন