কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৩

কাজল সেন

দখল
কাজল সেন



আমি এতটা ভাবিনি। ভাবতে পারিনি। কিন্তু দু’আঙুলের ফাঁক দিয়ে যখন ঝরে গেল অনেকটা ঝুরোবালি, তখন ভাবতেই হলো চারিদিকের দিগন্তবিস্তৃত এই বালিয়াড়ির কথা। এখন কথা হচ্ছে, এই বালিয়াড়ির দখল নেবে কে? কার আছে সত্যি সত্যিই এতটা বুকের দাপট! চোয়ালের চওড়া একরোখা ঋজুতা! না, আমার হয়তো ছিল না কোনোদিনই। কিন্তু সমরেশ, তোরও কি ছিল কোনোদিন? শ্রীতমার জন্য তুই কতদূর ছুটিয়েছিস তোর ঘোড়া? উত্তপ্ত বালি খুঁড়ে কতটা তুলে সাজিয়ে রেখেছিস জল? অথচ সেই ঘোড়ার পিঠেই তো সওয়ার হতে চেয়েছিল শ্রীতমা! সেই নিবিড় পাতালের জলেই তো শান্ত করতে চেয়েছিল শ্রীতমা তার গভীর স্তনের উষ্ণতা!

রাতের সেই বালিয়াড়িতে কেটে গেছে আমাদের কত রাতজাগা সময়। দিনের ফুটন্ত বালি তখন ঘুমিয়ে থাকতো স্নিগ্ধ শান্ত হয়ে। আমরা খেলা করতাম সেই স্নিগ্ধতায়। আমি, শ্রীতমা আর সমরেশ। কত রাতে আমরা তিনজন গড়াতে গড়াতে চলে যেতাম সেই ডিঙি নৌকোটার কাছে। কেউ কোথাও নেই। শুনশান চারিদিক। আমরা ডিঙি নৌকোটা ভাসাতে চেষ্টা করতাম অকূলের উদ্দেশ্যে।

শ্রীতমা গান ভালোবাসতো। সে গান গাইতো। অনেক অনেক গান। সমরেশ খুব ভালোবাসতো কবিতা। সে একটার পর একটা কবিতা গভীর আবেগে উচ্চারণ করে যেত। আমি শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতাম। আমার খোলা চোখের ক্যানভাসে সেই নিটোল নিকষ অন্ধকারে একটু একটু করে ফুটে উঠতো দিগন্তবিস্তৃত নগ্ন অসংলগ্ন বালিয়াড়ির অভূতপূর্ব রূপ ও সৌন্দর্য। আর সেইসঙ্গে ফুটে উঠতো আমার, শ্রীতমার ও সমরেশের উদার উন্মুক্ত শরীরের প্রতিটি জ্যামিতিক বাঁক এবং ভাঁজ। উদ্বেলিত যৌবনের মায়াময় উচ্ছ্বাস।

না, তবুও আমি বা সমরেশ, কেউই সম্পূর্ণ দখল নিতে পারিনি সেই দিগন্তবিস্তৃত বালিয়াড়ির। আমরা কেউ নিরঙ্কুশ দখল নিতে পারিনি শ্রীতমারও। আসলে আমরা কি আদৌ ছুঁতে পেরেছিলাম শ্রীতমার শরীরের ভেতরের শরীরকে, মনের ভেতরের মনকে? হয়তো শ্রীতমাও চায়নি কেউ ছুঁইয়ে ফেলে তার ভেতরের সবকিছু! নিজেকে কোথাও আড়াল করেছিল সে। আমরা ছিলাম সেই আড়ালের বাইরে।

আর আমিও তো সেভাবে বালি খুঁড়ে সঞ্চয় করতে পারিনি পর্যাপ্ত জল। শ্রীতমার জন্য ঘোড়া ছুটিয়েও কোনোদিন অতিক্রম করতে পারিনি ডিঙিনৌকোটার

শ্রীতমা খুব গান ভালোবাসতো। শ্রীতমা গান গাইতো –- ‘জীবনের পরম লগন, কোরো না হেলা, কোরো না হেলা...’। না, আমরা তিনজনই তো জীবনকে কখনো অবহেলা করিনি। তবুও সেই পরম লগন আর এলো কই!


1 কমেন্টস্:

  1. Kajol Bhai, besh bhalo laaglo. Shudhu aapnaaraa keno, keu ki baa kaukhono ki kono Seetomaa ke puropuri chhnowaa jaay? Ei apurnotaa taa i to jeeboner saundarjyo.

    উত্তরমুছুন