কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০১৩

১৭ ভূদেব ভকত

নোট
ভূদেব ভকত



কাছারি পাড়ায় মাঝে মাঝে উকিলবন্ধু যদুনাথ দত্তের ভাঙাচোরা চেম্বারের কাঠের বেঞ্চিতে গিয়ে বসতাম। কাছারি চত্বরটি হলো গল্পের মহানদী। আর আমি গল্পের রুই কাৎলা ইলিশ ধরবার জন্য বঁড়শি হাতে সদা তৎপর।

একটা স্পেশাল কাটিং চা নিয়ে একদিন বসে ছিলাম। কাটিং চা মানে একটা চা দু’ভাগ করা। বেঞ্চিটা যেন ফোকলা দাঁতে সব সময় হাসছে। আর দত্ত বাবুর চেয়ারখানা যেন মডার্ন আর্ট। ঐ চেয়ারটিও টেবিলের পায়ার সঙ্গে চেন দিয়ে তালামারা। টেবিলের ওপরের চাদরখানার বয়স আর দত্ত উকিলের ‘ল- সার্টিফিকেটের বয়স একই। লন্ড্রিতে দিলে ময়লার বদলে শুধু গল্প বেরিয়ে আসবে। টেবিলে একখানা তালাহীন তোবড়ানো বাক্সে মক্কেলদের প্রাণভোমরা রাখা আছে।

সেদিন একটা স্পেশাল কাটিং চা নিয়ে বসে আছি। একজন আদ্দির পাঞ্জাবি পরা মক্কেল এলেন। টেনিদা মার্কা, কালো লম্বা চেহারা। দত্ত উকিল আমার দিকে না তাকিয়েই মৃদুস্বরে বলল –- ‘কিছু দেখতে পাচ্ছিস্‌?’ আমি ছোট্ট করে বললাম -–‘না!’ -- ‘পাঞ্জাবির বুকপকেটে একখানা নোট দেখতে পাচ্ছিস্‌? বল তো পঞ্চাশ না একশো?’ আমি আড়চোখে দেখে ফিসিফিস করে বললাম –- ‘মনে হচ্ছে একশো!’ যদু উকিল বলল -– ‘তোর চোখ তাহলে এখনও ফোটেনি। ওটা পঞ্চাশ’। আমি বললাম -– ‘তাতে কী হয়েছে?’ দত্ত উকিল বলল –- ‘ঐ নোটখানা যতক্ষণ না ওর পকেট থেকে আমার পকেটে আসছে, আমার ঐকান্তিক চেষ্টা চলবে’।

আমি বসে থাকতে থাকতেই দেখলাম, একসময় নোটখানা দত্ত উকিলের পকেটে চলে এলো। কিন্তু আশ্চর্য, পঞ্চাশ টাকার নোটটির পেছনে আরো একখানা বিশ টাকার নোট ছিল, যা আবছা আবছা উঁকি দিচ্ছে। আমার উকিল বন্ধুর জিভে জল। সেই কালো ভদ্রলোক চলেই যাচ্ছিলেন, হঠাৎ যদু উকিল বলল –- ‘দাদা, আরো কিছু লাগবে যে!’ ভদ্রলোক থমকে দাঁড়িয়ে বললেন –- ‘আবার কিসের জন্য?’ দত্ত বলল –- ‘আসলে জানেন তো, কাছারিতেও একটা অ্যান্টি করাপশন্‌ ডিপার্টমেন্ট হয়েছে, সেখানে বিশ টাকা না দিলেই নয়!’ অগত্যা ভদ্রলোক সেই বিশ টাকা বের করে বেজার মুখে যদুনাথ দত্ত উকিলের হাতে দিলেন।

হেনরি পিটার ব্রুহাম এক জায়গায় বলেছেন –- ‘প্রতিপক্ষের হাত থেকে আপনার সম্পত্তি উদ্ধার করে যিনি নিজেই সেই সম্পত্তি ভোগ করেন, তাঁরই নাম উকিল’।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন