কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০১৩

০৬ সোনালি বেগম

স্কার্ফ
সোনালি বেগম



মোমবাতি-আলোয় ঝলমল করে উঠছে জন্মদিনের কেক। শুধুই অপেক্ষা...
‘হ্যালো, কখন আসবে? সকলে অপেক্ষা করছেন’, উদ্বিগ্ন ঝর্না

‘অপেক্ষা করো’ নিস্তেজ কণ্ঠস্বরে আবীর ‘কতক্ষণ...’ ঝর্নার ক্রন্দনরত কণ্ঠস্বর উন্মাদগ্রস্ততায় মোমবাতি জ্বেলে দিয়েছে ঝর্না, গলে পড়ছে গরম মোম কেকের নরম শরীরে ----

বেঁচে থাকার সামগ্রীগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে ---- আলু পেঁয়াজ রসুন খাট পালঙ্ক মোবাইল... চোখের প্রান্ত ঘিরে তছনছ রাজনীতি সমাজনীতি ধর্মনীতি। একসময় নাম-করা নায়ক আবীর হুইস্কির বোতল শেষ করে পড়ে থাকে বিছানায়। ‘শোনো, নিজেকে এভাবে শেষ কোরো না,’ ঝর্নার কণ্ঠে উদ্বেগ ‘আমাকে বার বার বিরক্ত কোরো না, প্লিজ’ ‘তোমার ফ্যান্স তোমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান’ ‘মারো গুলি, ফ্যান্স, হাঃ হাঃ হাঃ...’ আকাশে মেঘ গর্জন শুরু হয়ে যায়, অঝোর বৃষ্টির জলে ভেসে যায় জানালার কাচ। ঝর্না ছুটে এসে জানালা বন্ধ করে দেয়। অসহ্য গরমে বৃষ্টির দাপট ভালো লাগে। গ্রীষ্ম-বসন্তে পুরুষ কোকিলের কুহু-কুহু ডাকে ভরন্ত বাতাস। কোকিলের অনেক জাত আছে। নিউজিল্যান্ডের সাইনিং কোকিল ফ্লাইক্যাচারের বাসায় ডিম পেড়ে পালিয়ে যায় হাজার হাজার মাইল দূরের দ্বীপে। বাচ্চারা প্রতিপালিত হয় পালক পিতা-মাতার কাছে। তারপর সহজাত প্রবৃত্তির জোরে আবার ফিরে যাওয়া ---- পাখির ডানায় ভর দিয়ে ঝর্না উড়ে যায় দেশ দেশান্তর। জীবনটা যদি নিজের মতো সাজানো যেত! ভুল শত শত ভুল! গাড়ির হর্ণ শোনা যায় বাইরে। ‘চলো, একটু ঘুরে আসি,’ নরম গলায় ঝর্না ‘কোথায়?’ বিরক্তির চরম প্রকাশে আবীর ‘তোমার একটু ট্রিটমেন্ট দরকার’ ‘ছাড়ো তো-----’ চেহারায় একটা স্কার্ফ জড়িয়ে নিল আবীর। বছর আশির আবীর আর পঁচাত্তরের ঝর্নার সংসারে তৃতীয় জন আর কেউ নেই।                                                

মনোবিদ ডক্টর ঘোষ নানান খুঁটিনাটি প্রশ্ন করলেন ঝর্নাকে। এই নিয়ে বেশ অনেকগুলি সিটিং ইতিমধ্যে হয়েছে। ডক্টর ঘোষ আশ্বস্ত করলেন, ‘চিন্তার কিছু নেই। নায়ক আবীর তাঁর বর্তমান বৃদ্ধাবস্থা সহ্য করতে পারছেন না। যৌবনের সৌন্দর্যকে উনি অসম্ভব ভালোবেসেছেন। বয়সকে মেনে নিতে না পারা, ব্যক্তিত্বের দুর্বলতা। মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায়, একে বলা হয় নার্সিসটিক পার্সোনালিটি। তাই উনি নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চাইছেন।’

ঝর্না শক্ত করে আবীরের হাত ধরলো। গাড়ির কালো শার্সি উঠিয়ে রাতের অন্ধকারে ছুটে যেতে থাকলো তারা...                                                                                 

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন