কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৩

০১ সমীর রায়চৌধুরী

ডগমগপুর
সমীর রায়চৌধুরী


হাংরি মামলায় সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়কে সাক্ষ্য দিতে হয়েছিল। তিনি সেই সাক্ষ্যে বলেছিলেন, তিনি একবার মাত্র হাংরি বুলেটিনে লিখেছেন, আমন্ত্রিত লেখক হিসেবে। কিন্তু আমার কাছে ফাইলের স্তূপের মধ্যে আমি খুঁজে পেলাম যে, সন্দীপন হাংরি বুলেটিনে লেখার জন্যে দেবী রায় অর্থাৎ হারাধনবাবুকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ভরে অনুনয় বিনয় করেছেন। হাংরি আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সেই চিঠিটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। চিঠিটির পাঠ এইরকম :

প্রিয় হারাধনবাবু, হাংগ্রি জেনারেশনের জন্য লেখা পাঠালাম। প্লট, কনটেন্ট, ক্রাফট এসব বিষয়ে ডেফিনেশন চেয়েছেন। আপাতত অন্য কতকগুলো ডেফিনেশন পাঠালাম, ওগুলো পরে লিখবো। প্রকাশযোগ্য কিনা দেখুন।

১) ছাপলে সবকটি একসঙ্গে ছাপতে হবে – নইলে খাপছাড়া লাগবে।

২) শেষের তারিখটা রাখবেন।(লিখে, কেটে দিয়েছেন)

৩) ছাপার ভুল যেন বেশি না থাকে, দরকার মনে করলে অনুগ্রহপূর্বক একটা ফ্রেশ কপি করে প্রেসে দেবেন।

‘অমৃত’তে আমার বইয়ের যে বিজ্ঞাপন বেরিয়েছে, দেখেছেন? নইলে পাবলিশারের কাছে গিয়ে তার একটা কাটিং পাঠাবার ব্যবস্থা করলে খুশি হই। ঐ বিজ্ঞাপনটাই ‘দেশ’এ বেরুবার কথা আছে – যদি বেরোয়, তার প্রুফটা কাইন্ডলি দেখে দেবেন। ‘আনন্দবাজার’এ লেখকদের কোনো বিবৃতি বেরিয়েছিল নাকি? তাহলে তারও একটা কাটিং পাঠাবেন।

সামনের মাসে বাড়ি পাল্টাবো। আরও একমাস থাকবো বা ততোধিক। সহজে যাব না। শরীর ভালো। ছোটগল্পের আবার লেখা দিতে পারলাম না, সম্ভব হলে ক্ষমা করবেন। ভালোবাসা নিন।

সুনীলবাবুকে (হাজরা) প্রীতি জানাচ্ছি। ইতি --

ডগমগপুর / ২৬-১১-১৯৬২ সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়

* হাংগ্রি জেনারেশনের একটা সিম্বল করবেন বলেছিলেন। কী হলো? পাঁচ নঃ পঃ করতে পারেন।

* কমাগুলো ভেবেচিন্তে দিয়েছি, ঐগুলোই আসল জিনিস, যেন থাকে।

* শেষের তারিখটা যেখানে আছে, ওখানে প্রকাশের তারিখ দেবেন।

* ‘অভিযান’ ‘পূরবী’তে হয়েছিল তো?

চিঠির বাঁদিকে মার্জিনের পাশে লিখেছেন :

আগামী সপ্তাহে নতুন ঠিকানা পাঠাবো। তার আগে চিঠি দিলে, কুমুদ বাংলো, রুম নম্বর ৫, Tikore, চূনার, মির্জাপুর – এই ঠিকানায় চিঠি দেবেন। ‘আক্রমন’ বানানটা কি – ‘ন’ না ‘ণ’?

পুনশ্চ : লেখাটা প্রকাশ হবার আগে আপনি ছাড়া কেউ যেন না দেখে। অনেক বাদ দিয়ে খুব নরম করে সব দিক বাঁচিয়ে লিখেছি, ভয় নেই।

(নোট : এই চিঠির সঙ্গে দশটি কবিতা পাঠিয়েছিলেন। একটি কবিতা নিচে রাখা হলো।)



বেশ্যা

“বেশ্যার ঘরে আয়না থাকবেই, দেওয়াল-জোড়া আয়না, ছোট বড়, নানা সাইজের দামি বা সস্তা আয়না, একেকটা কারুকার্য করা। খাদ্যদ্রব্য কদাচিৎ দেখেছি, তবে বাসন থাকে। কাচের, কলাইয়ের, কাঁসা ও পিতলের বাসন। বেশ্যা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় কটি তথ্য এই হতে পারে যে, ১) সে উপহার পেতে ভালোবাসে ২) তার soul আছে ৩) তার লজ্জাহীনতা সত্যের মতো ৪) সে মৌলিক নির্বোধ ৫) সামনে কোনো সময় নেই, এমন মানুষ যদি ভাবা যায়, সে সেইরকম।

তার সম্পর্কে একটি কথাই গভীরতর ভাবে ভেবে জানার। তার শরীর যখন একজন ভোগ করে, কী মানসিক অবস্থায় সে থাকে! লোক এলে সে সুখী হয়, বিরক্ত হয়, ঘৃণাও করে। লোককে হিংসা সে কখনও করে না। যখন লোক তাকে উলঙ্গ করে, সে বিরক্ত হয়; একবার উলঙ্গ হলে স্বস্তি বোধ করে, আর তার সহজ লাগে। কিন্তু বেশির ভাগ লোক একসঙ্গে উলঙ্গ হয় না, আলো নেভার আগে অন্তত আন্ডারওয়ার বা গেঞ্জি পরে থাকে। তার নগ্নতা সে দেখে, তাকে দেখতে দেয় না। তারপর কতকগুলি নিয়মকানুন তারা মানে, বেশ্যারা, সে সময় শয়তান তাদের সাহায্য করে বা ঈশ্বর, সে জন্য তারা কদাচিৎ ক্ষতিগ্রস্ত হয়”।

(নোট : এরপর আর এক প্যারাগ্রাফ তিনি লিখেছেন এবং কেটে দিয়েছেন, তাই তা আর উদ্ধৃত করা যাচ্ছে না।)

এমনই ছিলেন আমার প্রিয়বন্ধু প্রয়াত সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়।

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন