কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৪

০১) সুজিৎ মুখোপাধ্যায়



সুজিৎ মুখোপাধ্যায়

সার্থক জনম আমার

[ চরিত্র : ১) অশোক – বয়স ৩৫, উচ্চপদস্থ অফিসার ২) অনন্যা – অশোকের স্ত্রী, কবিতা লেখে, কিছুদিন হলো প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ৩) জয়ন্ত – অশোকের বন্ধু, কবিতা লেখে ৪) বিরাজবাবু – প্রতিষ্ঠিত কবি, বয়স ৬৫, কিছুদিন আগে তাঁর একটি কাব্যগ্রন্থের জন্য পুরষ্কৃত হয়েছেন ]
{ স্থান : অশোকের ফ্ল্যাট। অশোক ধোপদুরস্ত পাজামা-পাঞ্জাবী পরে একটি বই পড়ছে। অনন্যা সুন্দর শাড়ি পরে ঘরের গোছানো আসবাবকে আরও সুন্দর ভাবে গুছিয়ে রাখছে। কলিং বেলের আওয়াজ হলো। অশোক দরজা খোলে। জয়ন্ত প্রবেশ করে }
অশোক - (হাতঘড়ি দেখে)প্রায় আধাঘন্টা লেট। জীবনে কোনোদিনই ঠিক সময়ে পৌঁছতে পারলি না! বারবার বলেছিলাম, আজ অন্তত ঠিক সময়ে আসিস্‌!
জয়ন্ত - ওরে বাবা, রাস্তায় যা জ্যাম! চাইলেও কেউ কোনোদিন ঠিক সময়ে কোথাও পৌঁছতে পারবে না।
অশোক – (হেসে)খুব হয়েছে! চুপ কর! সারাটা জীবন এইসব উল্টোপাল্টা  অজুহাত দিয়ে চালিয়ে গেলি। এই শহরে কেউ যেন ঠিক সময়ে কোথাও পৌঁছচ্ছে না!
অনন্যা – এই শুরু হলো! তুমিও পারো বটে জয়ন্তদার পেছনে লাগতে।
জয়ন্ত - দেখছো তো অনন্যা, ওর যত হম্বিতম্বি সব আমার ওপর। ওদিকে ওর অফিসে কেউ কিন্তু কোনোদিনও সময়ে আসে না। তখন একটা কথা বলারও মুরোদ নেই।
(অশোক কিছু বলতে যাচ্ছিল, অনন্যা বাধা দিয়ে বলে)
অনন্যা – জয়ন্তদা, এবার কিন্তু আপনি শুরু করলেন!  
অশোক – (ঘড়ি দেখে) অনন্যা, বিরাজবাবুর আসার সময় তো হয়ে গেছে, তাই না?
(অশোকের কথা শেষ না হতেই কলিং বেল বাজলো। এবার অনন্যা দরজা খুললো)
অনন্যা – আসুন আসুন বিরাজদা!
(বিরাজবাবু ঘরে ঢুকলেন। সাদামাটা চেহারা। নিখুঁত ভাবে দাড়ি কামানো। কাঁধে কোনো ব্যাগ নেই। সাদা ধুতি পাঞ্জাবী পরেছেন।)
বিরাজবাবু – ভালো আছ অনন্যা?
(অশোক ও জয়ন্ত উঠে দাঁড়িয়ে নমস্কার জানায়। অনন্যা পরিচয় করিয়ে দেয়।)
অনন্যা – আমার স্বামী অশোক, ইনি জয়ন্তদা, ভালো কবিতা লেখেন। আমাদের পারিবারিক বন্ধু।
বিরাজবাবু – অনন্যা, তোমার মেয়ে দেবর্পিতা, ওকে দেখছি না!
অনন্যা – ওর পরীক্ষা চলছে তো, ঘরে বসে পড়ছে।
বিরাজবাবু – ও তাই বুঝি! চলো, ওর সঙ্গে আগে দেখা করে আসি।
(ফিরে আসার পর)
অনন্যা – অশোক আর জয়ন্তদা, দুজনেই আপনার লেখার খুব ভক্ত।
বিরাজবাবু – তাই বুঝি? আমার পরম সৌভাগ্য।
জয়ন্ত – আপনি অবাক হচ্ছেন? কিন্তু এটাই তো স্বাভাবিক। আপনি খ্যাতিমান কবি, আপনার অগণিত ভক্ত থাকবে না তো কার থাকবে!
বিরাজবাবু – (হেসে) আমার অগণিত ভক্ত আছে কিনা, জানি না। তবে অগণিত ভক্তের আমার দরকার নেই। আমার কবিতার যদি মুষ্টিমেয় কয়েকজন সিরিয়াস পাঠক থাকেন, তাহলেই মনে করব আমার কবিতা লেখা সার্থক। আমার কবি হওয়া সার্থক।
জয়ন্ত – আমরা কয়েকজন মাঝে মাঝে এই অশোক-অনন্যার ঘরে সারাটা সন্ধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। মূলতঃ সাহিত্য নিয়েই আলোচনা হয়। প্রসঙ্গক্রমে আপনার কবিতাও কয়েকবার আলোচনা করেছি আমরা।
অনন্যা –  বিরাজদা, আপনারা গল্প করুন, আমি চা নিয়ে আসছি। আজ অনেকক্ষণ আড্ডা দেওয়া যাবে। কাল রোববার, বেলার দিকে লাঞ্চ করলে আপনার কোনো  অসুবিধা নেই তো!
বিরাজবাবু – বেশ তো, তাই হবে। আচ্ছা অশোকবাবু, আপনি আমার কোনো কবিতা পড়েছেন?
অশোক – (হেসে) খুব বেশি পড়িনি। তবে আপনার শেষ কাব্যগ্রন্থের প্রায় সব কবিতাই পড়েছি। কয়েকটি বেশ ভালো লেগেছে। কয়েকটি আবৃত্তির উপযোগী বলে দাগ দিয়েও রেখেছি।
বিরাজবাবু – আপনি কবিতা আবৃত্তি করেন?
জয়ন্ত – বিরাজবাবু, অশোক খুব ভালো আবৃত্তি করতে পারে। বহু কবিতা ওর কন্ঠস্থ।
বিরাজবাবু – (উচ্ছ্বসিত হয়ে) তাই নাকি? দারুণ ব্যাপার! কই, অনন্যা তো কোনোদিন আমায় সেকথা বলেনি! আচ্ছা অশোকবাবু, আমার কবিতার কোনো বৈশিষ্ট্য আপনার চোখে পড়েছে?
অশোক – (একটু ভেবে) আপনার কবিতার সবথেকে বড় বৈশিষ্ট্য, বা বলতে পারেন,  যেটা আমার সব থেকে ভালো লেগেছে, তা হলো অধিকাংশ কবিতাই কয়েকবার পড়লেই বোধগম্য হয়। ইদানীং কালের অনেক কবিতাই অনেক চেষ্টা করেও ঠিকঠাক বুঝতে পারি না।
বিরাজবাবু – আপনাদের সান্ধ্য আলোচনায় এই নিয়ে আলোচনা করলে, আমার মনে হয়, এই বিষয়ে জয়ন্তবাবু ও অনন্যা আপনাকে কিছু বলতে পারবে।
জয়ন্ত – অশোক আলোচনায় উপস্থিত থাকে, তবে খুব একটা অংশগ্রহণ করে না। তবে অশোক অনন্যাকে লেখার ব্যাপারে খুব উৎসাহ দেয়। আমাদের সবার জন্য এখানে সর্বদা অবারিত দ্বার। আমাদের যে ত্রৈমাসিক কবিতাপত্রিকা প্রকাশিত হয়, তার আর্থিক দিকটা বলতে গেলে অশোকই দেখে।
বিরাজবাবু – বাঃ বাঃ, অনন্যা ভাগ্যবতী। আপনাদেরও বন্ধুভাগ্য খুব ভালো বলতে হবে।
অশোক – (অপ্রতিভ হয়ে) দেখুন, আসলে কি জানেন, সবার দ্বারা তো সব কিছু হয় না। আমি কবিতা লিখতে পারি না, তাই জানি, কবিতা লেখা যে সে লোকের কম্মো  নয়। তাই এই কাজটি যারা পারে, তাদের একটা বিশেষ ক্ষমতা আছে, একথা আমি বিশ্বাস করি। আর তা ছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হলো, গল্পকার ও ঔপন্যাসিকের তুলনায় কবির পাঠকভাগ্য ও অর্থভাগ্য দুটোই অকিঞ্চিৎকর। তাসত্ত্বেও যাঁরা নিরন্তর কাব্যচর্চা চালিয়ে যান, তাঁদের কৃতিত্ব মানতেই হবে। এ ব্যাপারে আমার কাজ শুধু কাঠবিড়ালির।
বিরাজবাবু – অশোকবাবু, আপনি বয়সে আমার থেকে অনেক ছোট। তবু বলি, আপনার এই মানসিকতাকে আমি শ্রদ্ধা করি।
অশোক – আরে না না, ও কিছু নয়। ওভাবে বলবেন না। আচ্ছা বিরাজবাবু, একবার একটি কবিতার অর্থ বহু চেষ্টাতেও ধরতে না পেরে জয়ন্তকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম; ও  তার উত্তরে বলেছিল, কবিতার কোনো অর্থ হয় না। আপনি এ ব্যাপারে কি বলেন?
বিরাজবাবু – (দু’এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে) দেখুন, যে কোনো বিষয়ে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন ভাবনা চিন্তা মতবাদ থাকতেই পারে, যা তার নিজস্ব। আমার সে বিষয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না। কিন্তু আমারও এ বিষয়ে নিজস্ব চিন্তা ভাবনা যুক্তি আছে।
(অনন্যা চা খাবার নিয়ে প্রবেশ করে)
অনন্যা – বিরাজদা চা নিন, জয়ন্তদা আপনারাও নিন।
জয়ন্ত – অনন্যা, তোমার রান্নাঘরের কাজ কি এখনও বাকি আছে?
অনন্যা – না না, সে সব সারা হয়ে গেছে।
জয়ন্ত – তাহলে বসো।
অনন্যা – এই বসছিআপনারা চা খেতে খেতে আলোচনা চালিয়ে যান। কি নিয়ে কথা হচ্ছিল?
অশোক – আজকাল কোনো কোনো কবির মত হচ্ছে, কবিতার নাকি কোনো অর্থ হয় না। আমি বিরাজবাবুর কাছে এ বিষয়ে ওনার মতামত জানতে চেয়েছি। বিরাজবাবু আপনি বলুন!
বিরাজবাবু – দেখুন, প্রথমতঃ যদি কথাটা এমন হয় যে, ‘কবিতার কোনো অর্থ হয় না’, তাহলে এই কথার যে অর্থ দাঁড়ায় তা হলো, যে কবিতার অর্থ হয় সেগুলো  কবিতাই নয়আমার মনে হয়, একথা কেউই মানতে চাইবেন না। কারণ তাহলে  কবির তালিকা থেকে অধিকাংশ বড় বড় কবিদের নাম কেটে দিতে হয়। কেননা তাঁদের কবিতার অর্থ আছে। দ্বিতীয়তঃ বাংলায় ‘শব্দ’ কথার দুটি অর্থ আছে ইংরেজিতে; তার একটি অর্থ হচ্ছে Sound, আর অপরটি হচ্ছে Wordএখন Sound নিয়ে যে শিল্পীরা শিল্পচর্চা করেন, তাঁদের আমরা সঙ্গীতশিল্পী বলি; আর Word  নিয়ে   যাঁরা বাক্য তৈরি করে শিল্পসৃষ্টি করেন, আমরা তাঁদের কবি-সাহিত্যিক-লেখক বলি।  এখন যেহেতু প্রতিটি শব্দের এক বা একাধিক অর্থ আছে, তাই তা দিয়ে সৃষ্ট বাক্যেরও অর্থ থাকা স্বাভাবিক, অবশ্য যদি না তাদের এলোমেলো বা অসংলগ্ন ভাবে বসানো হয়।
জয়ন্ত – আচ্ছা বিরাজদা, মানুষের জীবনেরই কি কোনো অর্থ আছে? আপনি কি বলেন? যদি কোনো মানুষ মনে করে এই জীবনটাই অর্থহীন, তখন তার কবিতায় এই প্রভাব পড়তে বাধ্য। কারণ বিশুদ্ধ কবিতা মানুষের মনের ও মননের প্রতিচ্ছবি।
বিরাজবাবু – আচ্ছা জয়ন্তবাবু, জীবনটা যদি অর্থহীন হয়ও, তাহলেও কোনো সুস্থ  মানুষ অর্থহীন কোনো কথা বলতে পারে? আমার তো মনে হয়, পারে না। কবি যা কিছু বলুন না কেন, তা তাঁর ভাবনার প্রতিফলন। ভাবনা জটিল হতে পারে, একটু অগোছালো হতে পারে, কিন্তু অর্থহীন কখনও হতে পারে না।
অশোক – অর্থাৎ আপনার মতে, কবিতাও কখনও অর্থহীন হতে পারে না!
বিরাজবাবু- (হেসে) যদি না জোর করে তা অর্থহীন করার চেষ্টা হয়। তবে হ্যাঁ, অর্থ বলতে আমরা সাধারণত যা বুঝি, কবিতা সেভাবে বুঝতে গেলে চলে না। আবার একেক জন পাঠক একই কবিতা থেকে নিজের মনের মতোন একেক রকম অর্থ বের করে আনন্দ পান। যেমন ধরুন সুকুমার রায়ের একটি অতি পরিচিত কবিতা – “ভালো রে ভালো / এই দুনিয়ার সকল ভালো, / আসল ভালো নকল ভালো, / সস্তা ভালো দামীও ভালো...” ইত্যাদি। শেষে লিখেছেন – “কিন্তু সবার চাইতে ভালো / পাঁউরুটি আর ঝোলাগুড়”। আপাত দৃষ্টিতে এটি একটি সুন্দর মজার কবিতা বলে মনে হয়। আমার কিন্তু মনে হয়েছে, কবি এখানে বাঙালির Sense of  proportion- এর অভাব নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন। আমাদের কাছে সব ভালোই সমান ভালো। যে জন্য আমরা রবীন্দ্র-নজরুল জন্ম-জয়ন্তী একসঙ্গে উদযাপন করে থাকি। তরুণ প্রতিভাবান বা সম্ভাবনাময় কোনো সঙ্গীতশিল্পীর সঙ্গে রবিশঙ্করকে একাসনে বসিয়ে পুরস্কৃত করার নামে অপমান করার কথা ভাবি।
অনন্যা – সত্যি বিরাজদা, এই কবিতার এমন অর্থ হতে পারে, ভাবাই যায় না। পুরো কবিতাটি এখন আমার কাছে একেবারে অন্যরকম মনে হচ্ছে। খুব ভালো লাগছে।
বিরাজবাবু- (হেসে) কবিতা পড়ে এইরকম অর্থ খুঁজে পাওয়া, তৃপ্তি পাওয়া, একমাত্র বোধহয় কবিতার পাঠকরাই পেয়ে থাকেন।
অনন্যা – তবে সব থেকে কখন হতাশ লাগে জানেন, যখন দেখি কবিতার পাঠক প্রায় নেই বললেই চলে। আবার যাঁদের আমরা মনে করি কবিতার নিয়মিত পাঠক, তাঁদের মধ্যে দেখা যায়, প্রায় ৯০% আসলে পাঠক হওয়ার ভান করেন।
বিরাজবাবু- অনন্যা, তুমি শুধু এই কথা বলছ, আবার উল্টোটা দেখ, অসংখ্য কবি  ভুরিভুরি কবিতা লিখছেন, তাঁদের মধ্যে ৯০% আদৌ কবিতা লিখতে পারেন না। আবার যাঁরা পারেন, তাঁদের মধ্যেও সবার কবিতা উৎকৃষ্ট নয়। আমি তো মনে করি, একজন কবি যদি সারা জীবনে দশ-বারোটি উৎকৃষ্ট কবিতা লিখতে পারেন, তাহলেই তাঁর কবি হওয়া সার্থক। আর অনন্যা, তোমার হতাশ হওয়ার কিছু নেই।  যিনি প্রকৃত কবি, তাঁর তো কবিতা না লিখে কোনো উপায় নেই, তিনি কবিতা  লিখবেনই। যে মুষ্টিমেয় পাঠক উৎকৃষ্ট কবিতা পাঠ করে অমৃতের আস্বাদ পেতে চান, তাঁরা শত শত মামুলি কবিতার ভিড়ে উৎকৃষ্ট কবিতার খোঁজ ঠিকই করবেন। আর সেই কয়েকজন প্রকৃত কাব্যরসিকের জন্যই তো আমাদের কবিতা লেখা।
অশোক – আমার মনে হয়, কবিতা দিন দিন এত দুরূহ ও দুর্বোধ্য হয়ে উঠছে যে,  পাঠক তার কোনো মর্মোদ্ধার করতে পারছে না। আর সে জন্যই কবিতাবিমুখ হচ্ছে অনেকেই।
জয়ন্ত – অশোক, আমি এ ব্যাপারে তোর সঙ্গে একমত হতে পারলাম না। কারণ   তাহলে তো ক্ল্যাসিকাল সঙ্গীতের চর্চা করাও উচিৎ নয়। আর অশোক, দুরূহ ও দুর্বোধ্য এক ব্যাপার নয়। বিরাজদা আপনি কি বলেন?
বিরাজবাবু- হ্যাঁ, অবশ্যই দুটো আলাদা ব্যাপার। অত্যন্ত মামুলি কবিতাও দুর্বোধ্য হতে পারে; কিন্তু গভীর ও মননশীল কবিতা, তার মর্মোদ্ধার করে পরম তৃপ্তি লাভ করা যে সে লোকের কম্মো নয়। শিক্ষিত, বুদ্ধিমান ও প্রকৃত কাব্যরসিক অতি সন্তর্পণে পড়ে যার মর্মোদ্ধার করতে পারেন, তাকেই দুরূহ কবিতা বলা চলে।
অনন্যা –  আমার খাবার রেডি। রাত হয়েছে। বিরাজদা, চলুন খেতে খেতে গল্প করা যাবে।
অশোক – বিরাজদা, আর সব ভাষার মতো বাংলা কবিতারও ফর্ম, স্টাইল যুগে যুগে পরিবর্তিত হয়েছে, হচ্ছে, হবে। আমার কিন্তু মনে হয়, ইদানীং বাংলা কবিতার মান পড়ে যাচ্ছে। রবীন্দ্রনাথের অন্যান্য কবিতার কথা বলছি না, কিন্তু বোধহয় একেবারে শেষে লেখা তাঁর কবিতা “তোমার সৃষ্টির পথ” পড়ে যেন চোখের সামনে থেকে পর্দাটা সরে যায়। কিংবা প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘ভৌগোলিক’ পড়ে নিঃসন্দেহে মনে হয়, এরকম একটি কবিতা বিশ্বসাহিত্যে অতুলনীয়। আবার জীবনানন্দ দাসের ‘বোধ’ কবিতাটি বারবার পড়েও যেন সাধ মেটে না। এসব ছাড়াও বাংলা ভাষায় এমন অনেক উৎকৃষ্ট কবিতা আছে যা পড়ে এত আনন্দ হয় যে, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করে,  বাঙালির ঘরে জন্ম দেওয়ার জন্য।
বিরাজবাবু- (হেসে) কেন ইংরেজ হয়ে জন্মালে বুঝি ভালো কবিতা পড়তে পারতেন না? আমাদের সাহিত্যের সিংহভাগ তো ওদের কাছ থেকেই পাওয়া। এবং আজও তা সমানে চলেছে।
অশোক – তা নয়, ইংরেজরা তো বাংলা সাহিত্যের রসাস্বাদন করতে পারে না, আমরা কিন্তু দুটোই পারি, তাই আমরা বেশি ভাগ্যবান।
বিরাজবাবু- (অশোকের কাঁধে হাত রেখে) অশোকবাবু, আমরা কবিরাও খুব ভাগ্যবান। কেন জানেন? আপনার মতো কাব্যরসিক কয়েকজন আছেন বলে। আপনাদের জন্যই তো আমাদের কবিতা লেখা। তবে সবচেয়ে কে বেশি ভাগ্যবান বলুন তো? (সবাই চুপ)(হেসে বললেন) অনন্যা।
অনন্যা – (অবাক হয়ে) কেন? আমি কেন?
বিরাজবাবু- কারণ, অশোকবাবু আর কারও নয়, শুধু তোমার বলে।
জয়ন্ত – ও সব জানে! জেনে ন্যাকামি করছে।  
অনন্যা – জয়ন্তদা, ভালো হবে না কিন্তু, বলে দিচ্ছি!
(সবাই হাসতে থাকে)


  

1 কমেন্টস্:

  1. যে সমস্যা নিয়ে হামেশাই নবীণ ও প্রবীণ কবির (ও পাঠকের) ঝগড়া লড়াই চিরদিন চলে, অনুরংগের বিষয়টি সেই পর্যায়ভুক্ত বলে ভালো লেগেছে। (১) "কবিতার কোনো অর্থ হয়না'

    উত্তরমুছুন