কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৪

০৮) অরুণাভ ঘোষ

এক চরিত্র কাল্পনিক



ঠিক সন্ধ্যা সাতটা বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট একুশ সেকেন্ডে শেয়ালদা স্টেশনের ভয়ানক ভিড় সামলে চারের ‘এ’ প্ল্যাটফর্মে এসে এক চরিত্র চিন্তা করছিলেন যে, যাঁরা আত্মহত্যা করেন, তাঁরা ঠিক কেন আত্মহত্যা করেন এবং তাঁর নিজের ভাবনা তাঁকে এ ব্যাপারে খুব একটা আশার আলো না দেখালেও তিনি নিজেকে আত্মহত্যার চরিত্রের জায়গায় বসিয়ে ভাবতে শুরু করেন এবং ভাবতে থাকেন, যদি তিনি নিজে আজ ট্রেনের তলায় ঝাঁপ দিয়ে নিজেকে শেষ করে দেন, তবে দুনিয়ার কাছে তিনি কতটা স্বার্থপর ও এসকেপিস্ট প্রমাণিত হবেন, তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান তাঁর মৃত্যুর পরে ঠিক তাঁর জন্য কাঁদবে, না আকস্মিক নিরাপত্তার অভাবে কাঁদবে, — কারণ প্রায় তিপ্পান্ন বছর আগে পৃথিবীতে এসে এবং তিপ্পান্ন বছর ধরে পৃথিবীর জল হাওয়া ভোগ করে তাঁর কাছে পৃথিবীটা এই ভিড়ের মতোই অসহ্য লাগছে এবং একটা পানসে খাবারের মতোই জীবনটাকে বয়ে বেড়াতে তাঁর আর ভালো লাগছে না এবং আত্মহত্যার পদ্ধতি নিয়ে যে দু’চার কথা তিনি আগেও ভেবেছেন তাতে ‘ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু’তে বেশ একটা অ্যাক্সিডেন্ট অ্যাক্সিডেন্ট ভাব থাকায় তাঁর এটাকেই পছন্দ হয়েছে এবং যদিও খবরের কাগজে মাঝেমাঝেই এই ধরনের দুর্ঘটনার খবর তিনি ‘এক নজরে’ জাতীয় কলামের মধ্যে পড়ে থাকেন, তিনি জানেন বা বিশ্বাস করেন যে, সেগুলি আসলে অ্যাক্সিডেন্ট নয়, হাতে মোবাইল বা কানে হেডফোন থাকলেও তা কেবল আত্মহত্যাই, শুধু একটু অনিচ্ছাকৃত আত্মহত্যা, যেখানে চরিত্রেরা জীবনটাকে আর বয়ে বেড়াতে চায় না, কিন্তু তাঁদের নিজেদের কাছেও ব্যাপারটা পরিষ্কার নয় এবং এবং ঠিক এই সময়েই তিনি লক্ষ্য করলেন যে, একটি ফাঁকা ট্রেন — ফাঁকা অতএব কারশেড থেকে এসে

— প্ল্যাটফর্মে ঢুকছে এবং লোকজন মারামারি করছে তাতে আগে ওঠার জন্য...



সংবাদপত্রে প্রকাশ, ‘ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু’। শেয়ালদা স্টেশনের কাছে, নারকেলডাঙা কারশেডের সামনে এক প্রৌঢ়ের ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে। বয়স আন্দাজ পঞ্চান্ন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে যে, তাঁর নাম অসিত হালদার। তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে আছে। তিনি খড়দহের বাসিন্দা ছিলেন। ব্যাপারটি আত্মহত্যা কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে, কারণ ময়না তদন্তে প্রাপ্ত তাঁর মৃত্যুর সময়ে রোজকার মতো তাঁর শেয়ালদা থেকে ট্রেন ধরে বাড়ি ফেরার কথা। কারশেডের কাছে তিনি কী করে গেলেন বা কেন গেলেন, তার কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি...



সেদিন ঠিক সন্ধ্যা সাতটা বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট বাইশ সেকেন্ডে শেয়ালদা স্টেশনের ভয়ানক ভিড় সামলে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসে আমাদের চরিত্রটি চিন্তা করছিলেন যে, আপ ‘কল্যাণী সীমান্ত’ লোকালে তিনি বসার জায়গা পাবেন কিনা...


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন