কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

০৮) মাসুদ খান


ডালিম

যুগে যুগে বহু বিষণ্ন বিবর্ণ মানুষের দীর্ঘনিঃশ্বাসের সাথে
নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড-
তা-ই থেকে তিলতিল কার্বন কুড়িয়ে
জমাট বাঁধিয়ে, কাষ্ঠীভূত হয়ে
তবে ওই সারি-সারি দিব্যোন্মাদ ডালিমের গাছ।
বৃক্ষের যতটা সাধ্য, তারও বাইরে গিয়ে
তবেই-না ওই টানটান বেদানাবৃক্ষ, ব্যাকুল বেদনাকুঞ্জ,
মায়াতরু... রূপাঙ্কুর... রূপসনাতন...
পাতার আড়ালে ফাঁকে-ফাঁকে ফলোদয়
থোকা-থোকা গুপ্ত রক্তকূপিত উত্তপ্ত বিস্ফোরণ
রামধনু রঙে, মগ্নছন্দে
ফলিয়ে ফাটিয়ে তোলে ডালে-ডালে লালাভ ডালিম।

বসে আছি ম্রিয়মাণ... বেদনাবৃক্ষের নিচে, পড়ন্ত বেলায়।
সামনে খুলে মেলে-রাখা একটি ডালিমফল, তাতে
প্রভূত বেদানা-দানা, নিবিড় বেদনাকোষ... আর,
বেদানার দানারা তো আর কিছু নয়, জানি-
টলটলে করুণ চোখে রক্তজমা চাবুক-চাহনি...

ভাবি,
এতসব ডালিমকোষের মধ্যে
ঠিক কোন কোষটি রচিত 
আমারই সে ন্যুব্জ ব্যর্থ বিষণ্ন পিতার বাষ্পঠাসা দীর্ঘশ্বাসের কার্বনে!
ঘনীভূত হয়ে ওই বায়ব অঙ্গার, তিলে-তিলে, অনেক বছর ধরে...


জ্বরের ঋতুতে

তখন আমাদের ঋতু বদলের দিন। খোলস ত্যাগের কাল। সুস্পষ্ট কোনো সর্বনাশের ভেতর ঢুকে পড়তে চেয়েছিলাম আমরা দুজন। তার আগেই তোমার জ্বর এলোধস- নামানো জ্বর। তুমি থার্মোমিটারের পারদস্তম্ভ খিমচে ধরে ধরে উঠে যাচ্ছ সরসর করে একশো পাঁচ ছয় সাত আট... ডিগ্রির পর ডিগ্রি পেরিয়ে... সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী তাপের সহগ হয়ে উতরে উঠছ তরতরিয়ে সেইখানে, যেখানে আর কোনো ডিগ্রি নে, তাপাঙ্ক  নেই... তাপের চূড়ান্ত লাস্যমাত্রায় উঠে ঠাস করে ফারেনহাইট ফাটিয়ে বেরিয়ে আসছে থার্মোমিটারের ফুটন্তঘন তরল আগুন...

তীব্র, ধস নামানো জ্বরেও নারীরা ধসে না। কেবল তাদের কিছুটা কদাকার দেখায়, আর কিছুটা করালীর মতো। যত রূপসী তত করালী, জ্বরে...

একসময় মাথা-ফেটে-যাওয়া থার্মোমিটারকে ব্রুমস্টিক বানিয়ে তাতে চড়ে উধাও উড়ালে অস্পষ্ট অঘটনের দিকে হারিয়ে যাচ্ছ হে তুমি প্রিয়তরা পিশাচী আমার।

জীবনে প্রথম মুখোমুখি এরকম সরাসরি স্পষ্ট বিপর্যাস...
মিটারের জ্বালাখোঁড়ল থেকে ঝরছে তখনো টগবগ-করে-ফোটা ফোঁটা-ফোঁটা রেতোনির্যাস।


দীক্ষা

পথ চলতে আলো লাগে আমি অন্ধ, আমার লাগে না কিছু

আমি বাঁশপাতার লণ্ঠন হালকা দোলাতে দোলাতে চলে যাব চীনে, জেনমঠে
কিংবা চীন-চীনান্ত পেরিয়ে আরো দূরের ভূগোলে
ফুলে-ফুলে উথলে-ওঠা স্নিগ্ধ চেরিগাছের তলায় বসে মৌমাছির গুঞ্জন শুনব
নিষ্ঠ শ্রাবকের মতো, দেশনার ফাঁকে ফাঁকে
মন পড়ে রইবে দূরদেশে সাধুর বেতের বাড়ি পড়বে পিঠে,
দাগ ফুটবে সোনালু ফুলের মঞ্জরীর মতো শুদ্ধ সালঙ্কার... 

দীক্ষা নেব বটে মিতকথনের, কিন্তু
দিনে-দিনে হয়ে উঠব অমিতকথক,
নিরক্ষর হবার সাধনা করতে গিয়ে আমি হয়ে উঠব অক্ষরবহুল
এই হাসাহাসিভরা ভুঁড়িটি ভাসিয়ে গল্প বলে যাব
কখনো প্রেমের ফের কখনো রাগের...
অথবা ধ্যানের, কিংবা নিবিড়-নিশীথে-ফোটা গভীরগন্ধা কোনো কামিনীফুলের...

ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ঝরবে মঠের মেঘলা আঙিনায়
ওদিকে অদূরে লালে-লাল-হয়ে-থাকা মাঠে পুড়তে থাকবে ঝাঁজালো মরিচ
সেই তথ্য এসে লাগবে ত্বকে ও ঝিল্লিতে
আমি সেই মরিচ-পোড়ার গল্প বলব যখন-
উত্তেজিত হয়ে তেড়ে গিয়ে যুদ্ধে যাবে এমনকি বৃদ্ধরাও
যখন প্রেমের গল্প-  আঙুর পাকতে শুরু করবে সোনাঝরা নরম আলোয়
আবার যখন গাইব সে-গন্ধকাহিনী, সেই ভেজা-ভেজা রাতজাগা কামিনীফুলের-  
ঘ্রাণের উষ্ণতা লেগে গলতে থাকবে মধুফল দেহের ভেতর
 

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন