কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০১৪

০৭) অনুপম মুখোপাধ্যায়

কেশব রহস্য



২১শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ( সকাল ৮টা)

কেশব।
এই পবিত্র শব্দটি আজ অকস্মাৎ ‘বেশ্যা’ রূপে প্রতিভাত হইল আমার চক্ষুর সম্মুখে। প্রভাতে উঠিয়া কম্পিউটারে এক দুষ্প্রাপ্য বৈষ্ণব গ্রন্থ পি ডি এফ-রূপে পাঠ করিতেছিলাম। সেইখানে এই শব্দটি পাই। আমার হ্যালুসিনেশন হয়।
ইহা জীবনে প্রথম ঘটিল।
ইহার পূর্বে whole পড়িতে গিয়া whore পড়িয়াছি, এরূপ কোনো স্মৃতি আমার নাই।
বিভ্রান্ত বোধ করিতেছি। চশমার প্রতিও কি আর আস্থা রাখা চলে না! এমন কিছু বয়স আমার হয় নাই। সদ্য ২৭ বর্ষে পদার্পণ করিয়াছি। পিতামাতার প্রভূত অনুনয়ের পরেও এখনও বিবাহ করি নাই। শরীরে অমিত শক্তি। নিত্য জিমন্যাশিয়ামে যাতায়াত করি। তবু পাঠকক্ষে চশমা ব্যতিরেকে প্রবেশ করি না।
চক্ষু আমার সহিত এরূপ কলহ কেন করিতেছে?
ওই শব্দটির মধ্যে বিরাজমান আছেন আমাদের জাগ্রত কূলদেবতা। তাঁহার পূজা না হওয়া ইস্তক আমরা জলগ্রহণ করি না।

শব্দটিতে আমাদের সমাজের এক মহাপুরুষেরও বাস। কেশবচন্দ্র সেন। আমাদের এক পূর্বপুরুষ কেশব সেনের বাটিতে নিত্য যাতায়াত করিতেন শুনিয়াছি। কিন্তু তিনি ব্রাম্ভ ছিলেন না। ধর্ম আলোচনার জন্য যাইতেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের নিকটেও উভয়ে একদা একটি ছ্যাকড়া গাড়িতে একত্রে গিয়াছিলেন। সারা সন্ধ্যা পরমহংসের সান্নিধ্যে কাটাইয়া তাঁহার মনে অভূতপূর্ব ভাবের সঞ্চার হয়। বিবাহের উদ্যোগ চলিয়াছিল। কিন্তু আমাদের পূর্বপুরুষটি আজীবন ব্রক্ষ্মচর্যের সংকল্প গ্রহণ করেন। বিবাহ ভন্ডুল হইয়া যায়। যতদূর জানি, সেই কন্যাটি আত্মহননের প্রয়াস পাইয়াছিল, কিন্তু সেই সংবাদেও ওই মহাত্মার তেজস্বী হৃদয় দ্রবীভূত হয় নাই।

ইহা লইয়া আমাদের পরিবারে শ্লাঘা আছে।
এই শব্দ আমাদের মস্তক উন্নত রাখে।
শব্দটি কি অপমানিত হইল! শান্তি পাইতেছি না।
এই রহস্যের সমাধান করিতেই হইবে।



২১শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ( রাত্রি ১১টা)


জীবনে এরূপ অভিজ্ঞতা এই প্রথম। আজ সারাদিনে আমার বহুবার লিঙ্গোত্থান হইয়াছে। অসহ্য উত্তাপ বোধ করিতেছি সারা দেহে।
এ আমার হইল কী!
সকাল দশটায় স্নান করি প্রত্যহ। তখন শরীরের অপ্রয়োজনীয় বীর্য নির্বিকারে বাহির করিয়া দিই। মলমূত্র ত্যাগের সহিত তাহার তফাৎ করি না। আজ কী দুর্ঘটনা ঘটিল, অভূতপূর্ব পুলক অনুভব করিলাম! লিঙ্গটি মার্জনা করিতে করিতে বহুক্ষণ অতিবাহিত হইয়া গেল। স্খলন ঘটিল না।
আরো কয়েকবার প্রয়াস পাইয়াছি। ফল হয় নাই।
আমি কি চরিত্র হারাইতেছি!
বিশ্বাসঘাতক অঙ্গটি আমার সহিত এ কী করিতেছে?
হে কেশব, এ তোমার কী লীলা!



২১শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ( রাত্রি ১১টা ৪৫)

এইমাত্র বীর্যত্যাগে সক্ষম হইলাম। অতিরিক্ত ঘর্ষণের ফলে লিঙ্গে অসহনীয় পীড়া। কিন্তু এ তাহার নির্লজ্জ অপরাধের শাস্তি।
বাকি দেহে এখন শীতল বোধ করিতেছি।
আগামীকল্য প্রাতে এই রহস্যের সমাধানে ব্রতী হইব।
আমাকে বুঝিতেই হইবে ইহা কী করিয়া ঘটিল! আমার নির্মোহ জিতেন্দ্রীয় শরীরকে কে কী প্রকারে বিপথে চালিত করিল!
এ কি কোনো অপদেবতার লীলা!
তুমি যেই হও, দেবতা, রাক্ষস বা যক্ষ, আমার হস্ত হইতে তোমার নিস্তার নাই।



২২শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ( সকাল সাড়ে ৯টা)
       
আমার শরীর মন অবশ হইয়া আছে। এই রহস্যের সমাধান না হইলেই হয়তো মঙ্গল ছিল।
সকালে উঠিয়া অন্যমনস্কভাবে বারান্দায় গিয়াছিলাম। সম্মুখের বিশাল হোর্ডিংটি দেখিবামাত্র বুঝিতে পারিলাম, আমার চিত্তচাঞ্চল্যের হেতু কী হইতে পারে। অধুনা ওই স্থলে স্থানীয় সিনেমা হলটি বিজ্ঞাপন দিতেছে। আসন্ন চলচ্চিত্রটির নায়িকার প্রায় বিবসনা একটি মূর্তি বিরাজ করিতেছে। তাহার নাম সম্ভবত সানি লিওন। সে এদেশীয় নারী বলিয়া মনে হয় না।
স্মরণ আছে, গতকল্য প্রভাতে অনেকখানি বিতৃষ্ণার সহিত তাহাকে অবলোকন করিয়াছিলাম।



তাহার পরেই পাঠকক্ষে প্রবেশ করিয়া কম্পিউটার সচল করিয়াছিলাম।
এই তাহলে রহস্য!
কিন্তু, আমার সহিত এই অঘটন কী প্রকারে সম্ভব হইল!
নাকি, এ কোনো প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত?
ভাবিতেছি।
ভাবিয়া কুলকিনারা পাইতেছি না।


২২শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ( রাত সাড়ে ৯টা)

অনেক ভেবেচিন্তে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলাম।

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন