কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ৩০ মে, ২০১৪

১৫) শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ

সত্তরের কালী



ঢ্যামকুড়কুড় ঢ্যামকুড়কুড় ঢ্যামকুড়কুড়...

ক্যাথারিনের ল্যাপটপ বেজে চলেছিল। ঘরের আলোটা দিনের বলে কৌণিক দেখতে হচ্ছে স্ক্রীন। কৌণিক কত কিছুই দেখার! স্ক্রীণের দেওয়াল পেরিয়েই ক্যাথারিনের ঝুলকো বুকগুলো। সাদা মেয়ের বুকের উপরের অংশটা বাদামী, নিচের ব্রা খিল দেওয়া অংশটা সাদা, যেটা এখন দেখা যাচ্ছে। ঢাক বাজছে থেকে বুক বাজছে থেকে ক্যাথির বুক বাজাবে অনিন্দ্য অব্দি গিয়ে বাক্যটা তুরীয় দশা প্রাপ্ত হয়। তখন বাক্যটাকে ভেঙে নিতে হয় ছাতের মতোন। ছোট ছোট হাতুড়ির ঘায়ে বারান্দার উপরের ছাতটা না ভাঙলে ফ্ল্যাটের বাড়তি অংশটার ছাত হবে না। একটা টানা বিম, ঢ্যামকুড়কুড় করে চলে আসবে ডানদিক থেকে বাঁ দিকে, যদিও কলকাতা ক্রমশ ডানদিকে ঝুঁকে গিয়েছে, বামেরা ডান হয়ে ডানেরা বাম সেজে, সাজারা আদালতে জামিন হয়ে, জামিনেরা ভাগলবা হয়ে, সে এক ক্যাচাল চলছে যখন, তখন আসবে বিম, তার ভাই পিলার হবে, অনিন্দ্যর এই মুহূর্তে ঢাকের মধ্যে দিয়ে বাজতে বাজতে তেল ছাড়া সাপ দাঁড়াচ্ছে যেমন বুকঝোলা দেখে, লছমনঝোলায় ঝুলতে ঝুলতে পতনহীনতার জন্য ভক্তি নিয়ে গঙ্গা মাইয়াকে বইয়ে দেওয়ার ইচ্ছে নিয়ে, ক্যাথিকে শুইয়ে দেওয়ার ইচ্ছে নিয়ে অনিন্দ্যর পিলার দাঁড়াচ্ছে যেই মতোন, তথাগত বললেন কাম ভাব ত্যাগ করো, ক্যাথি খ্রীষ্টান, ক্যাথি ক্যাথলিক, ক্যাথি ইতালি হলেও ক্যাথি আমেরিকান বাপের মেয়ে, ক্যাথি ওয়াশিংটন ডিসি, তুমি - তথাগত বললেন - ভাবে কাম ত্যাগ করো, মহাবীর বললেন করোকে ভাবনা করো, শঙ্কর বললেন ভাব করো, বাৎসায়ন বললেন অভাব যদি বোধ করো তাহলে বই পড়ো, বই বললেন বাক্য গড়ো, বাক্য বললেন ধ্বংস করো, ধ্বংস বললেন ছাত গড়ো, ছাত বললেন পুনরুত্থানের প্রার্থনা কর, প্রার্থনা বললেন হে সর্প তুমি শুইয়া পরো, শুইয়া জানাইলেন তাঁর একলা শয়নে ক্যাথি ধর, ক্যাথি বললো, ক্যাথিড্রাল ছাড়ো কালী ধরো, কালী বললেন ল্যাপটপে আমার পূজার খুব আওয়াজ করো, আওয়াজ বলল, তাহলে সত্তরকে খোঁজ করো, খোঁজ বললো, ফাটাকেষ্টকে ধরো, ফাটাকেষ্ট বললে নকশাল শালা সব মারো, নকশাল বললো রাষ্ট্র খতম করো, খতম বললো এশিয়াকে সূর্যালোকিত করো, সূর্যালোক বললো ল্যাপটপ কোণাচে করো, কোণা অনিন্দ্যকে বললো ওখানে বসে পড়ো।

টাকেরেটাকেরেটাক ঢ্যাকেরেঢ্যাকেরেঢুম



ক্যাথি, ক্যাথারিন, ল্যাপটপের উপর দিয়ে ভেসে গিয়ে অনিন্দ্যর মুখে ললিপপের মতোন বাঁ বুকটা পুরে দিয়ে বললো,

- ওহ মীও দীও!

অনিন্দ্য শুনলো দিও! দেবে বলেই তো আসেনি তবু দিতে হবে। যদিও দেবুদা বলেছিল দিতে হবে। কালি নিয়ে জ্ঞান দিতে হবে। দিতে হবে যখন তখন না দিয়ে যাওয়া মানে অনর্থক পৃথিবীতে শব্দের বোঝা বাড়ানো। না বাড়িয়ে দিয়ে যাবে। সাদা মেয়ের বাদামী গলার সাদা বুক এক ধরনের বর্ণ-সংকরের আভাস দেয়। শাস্ত্রে আছে বর্ণসংকর ভালো না। কিন্তু শাস্ত্রে থাকলেও ক্যাথারিনের গলা, পেট, হাত সমস্ত কিছু ট্যান হয়েছে ইন্ডিয়ার রোদে। ক্যাথি এখানে থাকলে, মাদার ইন্ডিয়া হয়ে থেকেছিল ক্যাথি এখানে, উল্টো দিকে! এশিয়া মাইনর থেকে কিছু ইন্ডো এরিয়ান, এখানে ইতালিতে যেখানে সেখানে গিয়েছে। আইন ছিল না, পাসপোর্ট ছিল না, ভিসা ছিল না, ক্রেডিট কার্ড ছিল না, মুদ্রা ছিল না, মার্ক্স ছিল না - হারামজাদারা যেখানে সেখানে গিয়েছে গো!



-হ্যাঁ অতুর মা, মনিষ্যিদের ভাবসাব দেখো! কেষ্ট রক্ষিত, বাবু, বুঝুন একবার! ইহাদিগকে এই সব ইতিহাস কে পড়াইয়াছে? তাহাদিগের মুণ্ডচ্ছেদ না করিলে ট্যাঙ্গরা থেকে ভাতিণ্ডা সব শেষ করে দেবে। ব্রহ্মা তারপরে ঘোর অন্ধকারে নিজে নিজে বীর্য ফেললেন, ছ্যাঁৎ, তপ্ত তাওয়ার মতোন ব্রহ্মাণ্ড তখন। বীর্য ডিমের প্যাতলানো চেহারার মতোন এদিক ওদিক সেদিক লেবড়ে গেল। বীর্য থেকে টপাটপ সপ্তর্ষি উঠে দাঁড়ালেন, বললেন 'হুকুম আকা'!

আগে বা পরে এই কাহিনীর কেউ বলেছিল Let there be light and there were light মনষ্যি! আলোতে ব্রহ্মা হুকুম করলেন যাও প্রজা বানাও। ধানেদুব্বে প্রজাতে দেবে দানবে অসুরে মানবে পাঁঠাতে গরুতে ছাগলে দুধে সোমে ক্ষীরে বাঘে হাতিতে গন্ডারে হিন্দুতে বিশ্ব ভরে গেল। যত্ত রাজা আছে সক্কলে বিশ্বজয় করে। ধরুন গিয়ে দক্ষ, সেও বিশ্বজয় করলো। ফিরলো। আণ্ডাবাচ্চা পয়দা, দেশ শাসন কত্ত কী সেরে-টেরে টেঁসে গেল। দক্ষের ব্যাটা রাজা হলো। ধরুন সে হারিত। সেও আবার বেরোলো বিশ্বজয়ে। কাহিনীকার সকলের বেলায় বলেন, দেশে সত্যযুগে অগাধ শান্তি ছিল। তাহলে বিশ্ব বারেবারে জয় করতে হচ্ছে কেন? মানে জয় করলেই থাকছে না? বিদ্রোহ হচ্ছে? আবার জয় করতে হছে?

- থাকবে কী করে কুরুবক, বিশ্ব ঘোর মায়া। চেতন, যে প্রাথমিক ও মৌলিক বস্তু, সে ঐ বস্তুরই উৎপাদন বা একই বস্তুর শক্তির বিষয়! ডিমের বিষয় যেমন মুরগী, মুরগীর বিষয় যেমন ডিম। তাহলে কে কার বিষয়?



- ভগবৎ বলছে সৃষ্টি শ্রীকৃষ্ণ থেকে! তিনিই পরম ব্রহ্ম!

(উপরের কথাগুলো ভাবে হাফ কাঁদো কাঁদো হয়ে কথকতার ভঙ্গীমায় বলতে হবে)

"বদন্তি তৎতত্ত্ববিদাস

তত্ত্বম যৎজ্ঞানম্‌অদ্বয়ম

ব্রহ্মেতি পরমত্মেতি

ভগবান ইতি শব্দ্যতে"



ভগবৎ বলছে। ভগবান শব্দ হলেন এইভাবে। যে যেমন ভাবে দেখেছে তেমন পেয়েছে ব্রহ্ম! অন্নব্রহ্ম, ব্রহ্ম পরম, পরম ব্রহ্ম, কণা ব্রহ্ম- ক্যাথারিন ব্রহ্ম, অনিন্দ্য ব্রহ্ম! এই ভারতের মহামানবের মিলন ভূমে!



- মার খানকীর ছেলেকে!



লাল-সাদা সুতো দিয়ে পেটো বানাতে হয়! বারুদ ঠেসে ভেতরের টিনের কৌটোটা ভরতে হবে ভালো করে। ঠাসা উল্টাপাল্টা হলে চলবে না। এ ময়দা বা বুক ঠাসা না যে যেমন খুশী করবে। মাপে মাপে আঙুল নড়বে চড়বে। কেউ কেউ বাইরে স্‌প্লিন্টার দেবে পেরেক থেকে কাচের টুকরো - কার্ডবোর্ড লাগাবে, কেউ কেউ ভেতরেই ঠেসে দেবে। তারপরে লাল-সাদা সুতো দিয়ে ভালো করে বাঁধতে হবে কৌটো। চাপ মাপ মতোন না হলে বানাতে বানাতেই ফুটিয়ে দেবে রস ফেটে। তামার পাতও ঠাসে কেউ কেউ। খুব কাজের না। এ ছাড়াও আছে মলোটভ ককটেল। পেট্রোল বোতলে ভরে তাতে চওড়া সুতলি দিয়ে আগুন লাগিয়ে ছুঁড়ে দাও। পড়বে যখন মাটিতে ফাটবে। পেটোও চার্জ করতে হয়। ঠিক মতোন ঠাসা না হলে চার্জ হলেও ফাটবে না। ঠাসা বিষ্ফোরণ ঘটবে। পাইপগান আছে। দেশি মাল নিতান্ত! শালারা ব্রাস পাইপেও বানিয়ে আঙুল পোড়ায়। ওয়ান শটার এখানের থেকে মুঙ্গেরের ভালো। কিন্তু টাকা ভালো লাগে। ডাকাতি করে যা ওঠে তা দিয়ে হচ্ছিল না তেমন। চীনের চেয়ারম্যান যতই আমাদের চেয়ারম্যান হোক না কেন, চীনের অটো মাল তখনো এ বাজারে আসেনি। দু’চারটে ইছাপুর গান এণ্ড সেল থেকে বেরোতেও পারতো, বেরোয়নি!



কং মালেরা তখন পাড়ায় শুধু আওয়াজ দিতে হলে স্‌প্লিন্টার কম রাখতো। নকশাল মারতে হলে বেশি ঠাসতো। বুকটা মুখে আর আরেকটা হাতে ঠাসতে ঠাসতে অনিন্দ্য বলছিল। মুখ থেকে সরাচ্ছে আর ইংরিজিতে বলছে। কী কষ্ট! ভেবে ভেবে বলতে হচ্ছে। ক্রীড়া সাংবাদিক হয়েছে সে। এককালে নকশাল নকশাল ভাব করতো বলে দেবুদা ইষ্টবেঙ্গল টেন্ট থেকে গাড়ি দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে সত্তরের দশকে কলকাতায় কেন কালীপুজো বাড়লো এই ইতালিয়ান থিসিসের রূপকারের সার্ভিসে। ক্রীড়া সাংবাদিক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ইতালিয়ান বৌ-এর প্রয়াত শাশুড়ির দলের বিভিন্ন সাইজের হাফ ও ফুল মস্তানদের কালীপুজো বলবে বলে চলে এসেছিল। কয়েকদিন ধরেই বলেছে। কালীপুজোর থেকে কালীর নগ্নিকা মূর্তি, কালীর যৌনতা নিয়ে বেশি আলোচনা করেছে। সাদা মেয়ে বিছানায় পেলে বন্ধুদের মধ্যে কলার তুলে ঘুরবে। একটা পাসপোর্ট বাগাতে পারলে ইতালিতে গিয়ে দেশি বান্ধবীর ফোন ধরে ফেলিনির ছবির নায়কের মতোন বলবে,

-প্রোন্তো!

- They were hounded by the other parties, may it be Congress, may it be CPIM! Umm...Usch...!

(ব্যাকগ্রাউন্ডে ওহ, ওহ শব্দটা খেলানো যায় ব্রহ্মের মতোন)



তারপরে তো পাড়ার ছেলেপুলেদের আনন্দ দিতেই হবে পলিসি হলো। বিরাট করে কালীপুজো মানে বিরাট করে শক্তি প্রদর্শন। মদ, মাংস, সারারাত উত্তমকুমার-সুচিত্রা সেন! সিদ্ধার্থশঙ্কর মিনিস্ট্রি নাকি বলেছিল, মাঠ থেকে সুভাষ, সুরজিৎ, হাবিব কিচ্ছু ছাড়া যাবে না। ছেলেরা নইলে খেলা দেখতে আসবে কেন? পার্কস্ট্রীট রাত্তিরে খোলা থাকবে। মিস শেফালি ক্যাবারে নাচবেই। রাসবিহারী সরকার তুমি ক্যাবারে নামাও। মানিক রায় তুমি একটা সিনে হলেও লা নোত্তের মতোন ক্যাবারে দেখাও। কি? ওতে দেখায়নি? মালটাকে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড দিবি না! ইন্টারন্যাশনাল মেকার? এই ইন্টারন্যাশনাল বলছিস, নকশাল নাকি? সোমেনের বাড়ির নিচে পাঠিয়ে দেব চেম্বারে?



ক্যাথারিন গাঁজা খেতে খুব ভালোবাসে। গাঁজা খাইয়েছে। ক্যাথারিন সোনাগাছিতে গিয়ে ওয়াও বলে। সোনাগাছিতে নিয়ে গিয়েছে। ক্যাথি ফুটপাতে ভিখিরীর বাচ্চাকে গাল টিপে আদর করে, ছবি তুলে দিয়েছে। কালীবাড়িতে নিয়ে গিয়ে প্রসাদ খাইয়েছে, পুজো দিইয়েছে। কালীঘাটে স্পেশাল ব্যবস্থা করে মাথা ঠুকিয়েছে। বাংলা খাইয়েছে। শান্তিনিকেতন নিয়ে গিয়েছে। শক্তির কবিতা ইংরেজীতে অনুবাদ করে পড়িয়েছে। শক্তি শুনলে আত্মহত্যা করতো। এ সমস্ত কিছু করে ক্যাথারিনের ভিডিও ক্যামেরায় কালীপুজো রেকর্ড করেছে। ঢাকের বাজনা রেকর্ড করেছে। শ্যামাসঙ্গীত ব্যাকগ্রাউন্ডে স্লো বোলে চলবে না। তাই ঢাকিকে পঞ্চাশ টাকা দিয়ে আলাদা করে নানা বোল তুলিয়েছে ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজবে বলে। ক্যাথারিন, বুকঝোলা ক্যাথি, দুপুরে গাঁজা খেয়ে, মদ খেয়ে তার কোলে বসে মাই খাওয়াচ্ছে, যেন তার মা! যেন ম্যাডোনা! যেন ম্যাডোনা দ্য সিঙ্গার! অনিন্দ্য ব্রহ্ম এবং ক্যাথারিনের সঙ্গে লীলা করতে করতে কালীকে বলে,

-যাই বলো আমার কিন্তু পাছাটা সবচেয়ে ভাল্লাগে ওর!

ক্যাথি হাসে।

-হোয়াট? ফাছা?

- নো! পাছা! Bum!

- Naughty!



কালী লজ্জা পেয়ে জিভ কাটে। এই ফ্ল্যাটে সে নতুন কাজ ধরেছে। পুলিশ কমিশনারের মেয়ের বান্ধবীর ফ্ল্যাট। ইতালিয়ান বান্ধবীর ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাটে এই দাদা থাকে আজকাল। একসঙ্গে। সে গ্লাসে করে জল দিতে এসেছিল। দুপুরবেলাতেই এই সব কাণ্ড! মা গো, লজ্জাশরম নেই গো? গাঁয়ের দেশ হলে তো দিনে মুখ দেখাতি পারতো না! ঝে লক্কণ তাতে ভালো ঠেকছে না! কোনোদিন না ওর দিকেই হাত বাড়ায়! দেবে বঁটির এক কোপ! বিচি কেটে হাতে ধরিয়ে দেবে। বিকেলের লক্ষীকান্তপুর লোকালের দিকে ফিরে যায় কালী। ক্যাথারিন উঠে ফ্ল্যাটের বারান্দার দিকের পর্দা টেনে দেয়। অন্ধকার নেমে আসে ঘরটায়।

সঞ্জাত ভগবৎ-শাক্ত্য

তত-কালম কিলা চোদিতা

শিষ্রক্ষয়ম মতিম চক্রে

পূর্ব-সংস্কার-সংস্কৃতা

দদর্শ কেবলম্‌ ধ্বন্তম

নান্যৎকিমঅপিসর্বতঃ!

পদ্ম থেকে বেরিয়ে পূর্বধারণানুযায়ী সৃষ্টি করতে গিয়ে ব্রহ্মা দেখলেন চারিদিক অন্ধকার। অন্ধকার ছাড়া আর কিছু নেই।




0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন