কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ৩০ মে, ২০১৪

০৭) মোহাম্মদ হোসাইন

রাত্রিকে

রাত্রিকে জড়িয়ে ধরি। তার কান্না গলনের সুষমা
মমির উদ্ভাস; নিঃসীম শূন্যতা হয়ে যখন ঝরে
সে কান্না মানুষের ভাষা পায়; দেখি পৃথিবীতেও তার
চিহ্ন পড়েছে।

ওষ্ঠপুটে চুমু খেতে খেতে নদীও দূরে চলে যায়
যখন বাঘডাঙা তীরের কাছে কদাচিৎ ফেউয়ালিরা আসে
জ্বরাগ্রস্থ সময়ের কাছে - তখন কী করে পৌঁছায় বিনয়?

আমিও ঘাটের মরা আঘাটায় আছি পড়ে কতকাল!
হয়তো ঝাউবনে অযথাই খুঁজি অতুলপ্রসাদের গান,
মন্দাক্রান্তা বাতাসের কাছে দিই খুলে অসিতবরণ বুক
তবু পিঠাপিঠি বেঁচে থাকি দুঃখ ও বেদনার বোন; রাত্রিকে

বলি - ও শ্যামা মেয়ে মুছে ফেলো পিঁচুটি চোখের,
দ্যাখো ঐ পাখি ডাকছে, জেগে ওঠছে কমলা রঙের রোদ...



লাউয়াছড়া

ভেতরে যেতে যেতে মনে হলো - বনেরও কান আছে
বনও কথা বলতে জানে; সেগুন, চাপালিশ, রক্তন
হঠাৎই আমাকে ইশারায় ডাকলো, কতক বনঘুঘু দূর থেকে
বলল, হাই! মুহূর্তে আমিও যেন ঘনবনে রূপান্তরিত হয়ে গেলাম।

চৈত্রের দুপুরকে পাশে নিয়ে যে অজগরটা হাই তুলছিল
এতক্ষণ - একটা কাঠবিড়ালি এসে কানে কানে কিছু বলে
যেতেই দেখলাম কয়েকটা বেজির চৌকস আনাগোনা
হয়তো গোপন কোনো মিশন ভেতরে ভেতরে ক্রিয়াশীল ছিল...

দূরে তখন তাতানো মধ্যাহ্নের ঘনসবুজ নির্জনতা;
আমি আমাকেই পাঠ করছিলাম অজস্র ঝরাপাতার মুখরতায়
আর বনের বুক বরাবর তিরতির বয়ে চলা জলের আয়নায়
দেখে নিচ্ছিলাম লাউয়াছড়ার বিম্বিত ক্যামোফ্লেজ, নিরালম্ব
হাওয়ায় কেঁপে কেঁপে ওঠা বনতুলসির বিরল উচ্ছ্বাস!

একদল শ্রীমতি বানরকে দেখলাম স্পেক্টাকলস পরিহিত
আমাদেরকে আদ্যোপান্ত স্ক্যানিং করতে করতে এক গাছ
থেকে অন্য গাছে লাফালাফি খেলছিল; হয়তো এটিই
তাদের মৌল ম্যানুয়েল, জীবনের স্বতঃসিদ্ধ অকুটিল প্রণোদনা।

ফিরতি পথে সুতপার কথা মনে পড়ল - মনে পড়ল সুতপাও
কি গভীর অরণ্যের মতো দিকচিহ্নহীন? অতল, অবয়ব? কিংবা
খাসিয়াপুঞ্জির বৃষ্টিহীন - জলহীন ম্রিয়মান পানপাতা! আর তখনি-
কে যেন সুদীর্ঘ লাউয়াছড়ার বুক চিরে অনন্ত উচ্চারণের মতো
বলতে লাগলো - হৃদয়ও কোনো না কো্নোভাবে গভীর নবন
অবোধ শূন্যতা যার নাম...


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন