কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ২৯ জুন, ২০১৪

১১) সোমনাথ রায়


সনেট

তৃষাতুলি
জন্ম নির্ধারণ করে দিতে ব্যর্থ হয়েছে তোমাকে নারী অথবা পুরুষ
অদৃশ্য চোখের জলে, শিহরণে, আদরে ডেকেছে কেউ, বুলবুল-বুলবুলি
বড় হতে হতে ধরা পড়েছে মেয়েলি ঝোঁক, নাম রাখা লো তৃষাতুলি;
ভর্তি করা লো তারা সুন্দরী বালিকা বিদ্যালয়ে; আস্তে আস্তে জাগে হুঁশ
তোমার অন্তরে, শাড়ি পরে সাজো বউ তবু আুগুন জ্বলে না, ভিজে তুষ
ঢেকে রাখো, বুকে মাংস জমে না বান্ধবীদের মতো, দুঃখে মায়ের কাঁচুলি
টেনে নাও আলনা থেকে, তার মধ্যে দলা করে ছোট ছোট রুমালের গুলি
ভরে উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মহাবিদ্যালয় পার হয়ে এখুন একুশ

অনেক পুরুষ ছোঁক ছোঁক করে তোমার পেছনে, জেনে গেছ তার স্বাদ
পা রেখেছ থিয়েটার থেকে সিরিয়ালে, নাম হচ্ছে, তুমি অভিনেত্রী ভালো
তবু কানাঘুষো কানে আসে, তারা বূহন্নলা বলে ডাকে আড়ালে আবডালে
তোমার ভেতরে বাড়ে আগুনের তৃষ্ণা, শূন্য থেকে পরিত্রাণে অবসাদ
মক্তি পেতে চায়, দুটো অপারেশনের পরে, আরো দুটো সার্জারী জোরালো
হয়ে গেলে তুমি পূর্ণ নারী হবে, পুরুষ শয্যায় নারী জন্মের আকালে

                               
কোল্ডস্টোর
আলু পটলের পাশে রাতের বাজারে যারা পেতেছে শরীর
তারা কবে টাট্‌কা ছিল ভুলে গেছে, তবে তারা কিন্তু বাসি নয়
প্রতিদিন অন্ধকারে ঠাণ্ডা মেরে থাকা ঘর থেকে বার হয়
উজ্জ্বল অথচ সস্তা আভরণে মুড়ে রাখা বুকের চৌচির
ফাটল লুকিয়ে ওরা লোকাল ট্রেনের তাজা তরিতরকারির
ঝাঁকায় হেলান দিয়ে চাহনি ছড়িয়ে নামে শিয়ালদহয়।
মাঝে মাঝে ব্যাগ থেকে রুমাল চিরুনি টেনে নির্দিষ্ট আলোয়
নিজেকে গুছিয়ে নেয়, আকর্ষণে তারা থাকে ভীষণ অস্থির।

প্রতিরাতে খদ্দের জোটে না, চোখ বুলিয়ে অনেকে চলে যায়
কেউ কেউ নেড়ে চেড়ে ফষ্টি-নষ্টি করে আড্ডা মেরে কেটে পড়ে।
অনেকে তাদের নিয়ে পাশের হোটেলে তোলে কোনো কোনো রাতে
অভিজ্ঞতা জন্ম নেয় নতুন নতুন ঘন্টা মাপা বিছানায়।
কোনো রাতে স্পর্শহীন বুকে শূন্য মানিব্যাগ নিয়ে ট্রেন ধরে
ঠাণ্ডা ঘরখানা আরো ঠাণ্ডা হয়ে টুঁটি টপে ধরে ঠাণ্ডা ভাতে।

         
মূর্ত করে বিমূর্তানুভব
অপূর্ব সহাবস্থানে পুরুষ হয়েছে নারী, নারীটি পুরুষ
ছায়া দিতে ভালোবাসে কেউ, অন্যজন ছায়া হতে ভালোবাসে।
নিবিড় দাম্পত্যসুখ অনুভব করে সমলিঙ্গে, অনায়াসে
তারা খুঁজে পায় একে অপরের স্বাভাবিক সান্নিধ্য জৌলুস।
বিপরীতে আশঙ্কিত যারা কিংবা তৃপ্ত নয় যে সব মানুষ
তাদের প্রকৃতি টেনে নিয়ে যেতে চায় সমকামিতার পাশে।
অন্ধকার থেকে তারা ক্রমশ বেরিয়ে আসে আলোয় বাতাসে,
তাদের ভালোবাসার আগুন পোড়াতে চায় সামাজিক হুঁশ।

পৃথিবী উত্তাল আজ প্রকৃতির মানবিক অধিকার বোধে।
প্রথম বিশ্বের মুখ তৃতীয় বিশ্বের বুকে নেমে কড়া নাড়ে।
দ্রুত তারা সংগঠিত হতে চায়, দ্রুত তারা ভীষণ সরব
আদালতে সরণিতে মিছিলে গুন্ঠনহীন তীব্র কোনো রোদে।
কখনও ঘৃণিত হয় তারা কখনও বা তারা প্রশ্রয়ানুসারে
ছায়া বন্ধনের তলে আলিঙ্গনে মূর্ত করে বিমর্তানুভব।

         
ভারসাম্য
আম কাঁঠালের পাশে কদর পেলে না তুমি উপবাসী নিম
অথচ তোমার যত্নে প্রকৃতির বাতাস বিশুদ্ধ ও নির্মল
তোমাকে আগাছা ভেবে আঁস্তাকুড়ে উপড়ে ফ্যালে মনের শৃঙ্খল।
গোপনে পাচার করি, ভেষজ চাহিদা দেশ-বিদেশে অসীম—
কন্যা সন্তানের জন্ম হলে যে রকম ঘরে জ্বলে না পিদিম
পুত্র সন্তানের পাশে তার জন্য খাদ্য কম শিক্ষাও নিষ্ফল
পরীক্ষায় জানতে পারলে মোটা অর্থে হত্যা করি সেই বিষফল
নতুবা পাঠিয়ে দিই বেশ্যালয়ে ঘরে ঢোকে নোটের আফিম।

প্রতিদিন ক্ষয়ে যাচ্ছে ভারসাম্য পৃথিবীর বাতাসে মননে
এক পাল্লা শূন্য করে অপর পাল্লায় বাড়িয়ে চলেছি চাপ
চোখে জমছে অন্ধকার, হাতে বাড়ছে নখ, দাঁতে নির্ভয়ের হাসি—
কে আমাকে প্রতিরোধ করবে! আমি যতক্ষণ আত্মসচেতনে
একবার না বলি, হে নিম, ওগো নারী, তুমি মুক্ত করো পাপ
তোমাকে রক্ষার দায় আমারও রয়েছে, তোমাকেও ভালোবাসি।
    


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন