কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৪

১৪) সাঁঝবাতি


কোলগেট

(১)
সবুজ বলে আমায় মহামেডান বলতবাবা মাও বলত, আস্তাকুঁড় থেকে কুড়িয়ে  পাওয়া... অমন সবুজ ক্যাটক্যাটে রঙ... এসবের মধ্যে দিয়ে আমি বড় হয়ে যাচ্ছিলাম। মাথার স্পাইক চুল স্টাইলাচ্ছিলাম। ওমনি কোথা থেকে আমাদের মাঝখানে ছটফটে একটা ছোট্ট লাল উড়ে এসে জুড়ে বসল আমা থেকে ‘দের’ উঠে গিয়ে ‘র’ কত বেশি একা হয়ে গেলাম। তখনই বুঝলাম, বড় হতে চাওয়া কক্ষনো ভালো নয়।  বড় মানে একা হয়ে যাওয়া। বাবা-মা-নতুনভাই একসাথে প্লাস্টিকের মগে দাঁড়িয়ে  সুখি ফ্যামিলির বিজ্ঞাপন দিত, ঠিক সেইসময় বড় হয়ে যাচ্ছে আমিকে বেসিনে টেনে  নিয়ে গিয়ে, চুল টেনে দাঁত ভেঙিয়ে বুলি করেছে ওরা। শেভিংক্রিম, চিরুনি, পেস্ট, ব্লেড সব্বাই মিলে আমায় বলেছে মহামেডান! তারপর যা হয়! পড়েই থাকতাম। পাপ্পুও বোধহয় ঘেন্না পেত আমায় দাঁতে ঠেকাতে। পাপ্পু যত বড় হচ্ছিল আমার তত হাসি পাচ্ছিল... জীবন যখন হাসছিল সেই মুহূর্তে পাপ্পু আমায় ছুঁড়ে ফেলে দিল ‘ইউস মি’তে। মাম মাম তাও আমায় উঠিয়ে রেখেছিল চিরুনি পরিষ্কার করার জন্যে। হাতির দাঁতের চিরুনির হাড়ে হাড়ে এত জ্বালা, আমার মাথায় বারবার দাঁত বসিয়ে  দিত। আর কী! চুল তো ছেতরে যাচ্ছে আমার। আজকাল কেউ আমায় দেখে না।  ইউ নো হোয়াট, আই হেট মহামেডানস্‌।
 
(২)
খুব জ্বর হয়েছে আমার। বোধহয় যৌবন চলে যাচ্ছে। মাথার চুল অল্প অল্প করে উঠে যাচ্ছে। গায়ে দাগড়া দাগড়া... এই সময় রেশমা এসে আমায় চুপিচুপি উঠিয়ে নিলো। পাপ্পুর মা রেশমাকে আর কাজে রাখবে নামুখে পাইরিয়া। এত রক্ত আর গন্ধ!  ঝুপড়ির এককোণে গিয়ে একটা ভাঙা কাপে ঢুকলাম। আসতে আসতে সেরে উঠি পাশে পাশে একটা নীল চিকনাই... আমি তাকাই না। আমি দূরে দূরে থাকি। আর রেশমা  কাছে কাছে, রেশমা যত্ন, রেশমা দশ টাকার টুথপেস্ট, রেশমা সকাল সন্ধ্যে রাতে ব্রাশ এবং রেশমা রক্ত। আমি হিন্দুর রক্ত না মেখেও মহামেডান। রঙরঙ্গ নাকি কিনে রেখেছে সমস্ত জাত! আমি জাতের নাম জানি না, এবার মহামেডানের রক্ত মেখে  দেখলাম গরীবের রক্ত কী খেতে শালা! গরীবের আবার খুন, রঙ, জাত যাহ! সেই  থেকে আমার নাম রাখলাম রেশমা। আমারও তবে ডাকার মতো একটা নাম হলো এতদিনে! মহামেডান ছাড়া।   

(৩)
রেশমাদি ভুলে যায়। কখনও আমায়, কখনও আলিকে ইউজ করে ফ্যালে। একই খুনে দুজনে লালাই। নীল আলির শক্ত চিকনাই চুল। রেশমাদির লাগে। এবং একদিন লাগতে লাগতে ছুঁড়ে ফেলে দ্যায় আলিকে, ‘শালা, বড়নোকের ভাত হামার কেনে সযযি হবেক...!’ আমি দূর থেকে দেখি- চিরুনি, পেস্ট, ব্লেড মায় ভাঙা চুলও ওকে বুলি  করতে থাকে। এই হিন্দু ওই হিন্দু... দূর থেকে আমি, কাছ থেকে আমি... দেখি 

(৪)
উঠে যাওয়া ঢিব কপাল নিয়ে মাথা নিচু করে আমি একদিন আলিকে বলেই ফেললাম...
‘মানুষ হবি?  
আমার...’

(৫)
দুটো বাচ্চা আস্তাকুঁড়েতে বসে বসে দুটো টুথব্রাশ নিয়ে খেলা করছিল। ওরা দুজন বুটপালিশ করে। ওরা সেইখানে বসে যেখানে মন্দিরের পাশে একটা ভাঙা কবরখানা আছে...  
কত রকম মানুষজন যায় আসে! আসে যায়!



1 কমেন্টস্:

  1. eta tor lekha sob golper modhye amar priyo.. osadharon concept... temon lekha.. darun!! aro lekh.. aro bhalo lekh...
    -Alokparna

    উত্তরমুছুন