কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৪

২০) পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়



(এক পুরুষ
এক জাতিচ্যুত পুরুষ
জন্নত থেকে নেমে আসে আলো রাতে
মুখোশে ঢাকা দুনিয়াটা দেখে নিতে
না বলা তার কথা শোনে রাতের শরীর
মৃত্যুর পর পাওনা বুঝে নিতে
বারবার ফিরে আসে বেদুইন বীর)


পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়

বেদুইন গাঁথা

ফুটপাতে আয়না দেখি রাত
ভাঙা আয়নার দেওয়ালে-
দলবাঁধা ফড়িং-এর গান
রূপোলী রাতের মাঝে নোয়ানো দরজা কত
স্বর্গের সিঁড়ি বেয়ে এক নিশাচর দড়ি টপকালাম
দেখি কালো ঘাসে সাদা পোকা গিজগিজ
সন্তর্পণে পা ফেলি
মাইনাস চোখ সাইনাস নার্ভ তোলপাড়
তবু তলোয়ারে রাখি কাটা প্রেম
আমি গালাবেয়াহীন বীর বেদুইন
মানবতাবাদী ফ্রেম।

তারপর খানিকটা বেঁচে যাওয়া রাতে
আমি বিচ্ছিন্ন বেসামাল হলাম ওগো না-পাক-
রাতের কুসুম
পরাগ ওড়াও আরও প্রজাপতি
ক্ষয়রোগে আয়ু যায়
ফেরেস্তারা গুটিসুটি।

আমার কতিপয় নস্টালজিয়া ছিল নাবিক
পকেট থেকে পকেটে ঘুরেছে সব
দেখেছি কখনো হাড়িয়া খাওয়া দাঁতালের উল্লাস
রাস্তার সাঁওতালি হার্টথ্রব

পিঠে ঝোলা আর বুকে গোলা নিয়ে
আমি একা বেদুইন ফিরি
মাকালের দেশে যৌবন শেষে
পদাবলী ঘেঁটে রাতের বীর্যে ভোরের সূর্য গড়ি

আমি বীর বেদুইন একা
আমি আমার জন্য হাঁটি
আমি সেই হাড়িয়ার হাড়ি
মারিয়ার প্রেমে ঔরস
আমি ভোলাভালা জিভে
সবটা চেখেছি
অমৃত থেকে পৌরুষ।

হাঁটছি একা
মাথার ওপর মধ্য রাতের হাসি
রাতের রাস্তা বড় কোলাহলময়
বাতাসের শ্বাস তীব্র ঝাঁঝালো
মরা ঠোঁটে শুখা রক্তের বাঁশি

তবু গত গেরস্থে নামাজ দেখেছি আমি
ঘুঁজিপথ থেকে এঁটো কুড়িয়েছি চাঁদ
গোঙানির ভাষা তুমি তো বুঝেছো
বীরের বুকেতে কষ্টের বাজিমাত

শেয়ালের রাজা মিথ্যে বুলি আওড়েছে কতকাল
শিরা বেয়ে মাথায় রক্ত চড়েছে
বঞ্জরদেশে ভেড়ার পাঁজরে খঞ্জরখানা বিঁধেছি
আহত সুখের চারপাইতে আড়মোড়া ভাঙে মহাজন
ঝাপসা আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি

জন্নতে গেছি
আর্গা দেখেছি ঝুলতে
ছিনিয়ে নিয়েছি দু-খণ্ডে কাটা প্রেম
দুনিয়াদারির কতটা দেখেছো নূর?
দৌড়েছি আমি তোমার জন্য একা
পায়ের তলায় বেঁধেছি ঘোড়ার খুর

আবার এক আলো আলোরাত আজ
পোশাকে তোমার অপেক্ষার লাল জড়ি
বাইরে জাঘারিদ পাগল আনন্দ ছোটে
আমি তোমার বীর বেদুইন হতে পারলাম কই?
খিদে হাতড়ালে এখনও স্মৃতির খাদ্য জোটে

পিঠের ঝোলায় স্বপ্ন ঠেসে
আমি একা রাতে হেঁটে যাই
নিঃস্ব পৃথিবী! গোটা মরুদেশ তোমার গর্ব জানি
অনন্ত দরজা তার কোনো ছিটকিনি নেই

দশচক্রের দরাজ হাতে
সারা গুলবাগ ঘুরে
কেন্দ্র বিমুখ আমি বেদুইন
আমার পাপড়িতে রক্ত ঝরে

ওহে তুন্দিভ
আমি চৌকাঠে দুর্বৃত্ত
খিল আঁটো যত পারো
আমি রাত্রি রক্তে সিক্ত

গত জন্মের জাতিচ্যুত আমি
বিষণ্নতার খুব লেখাওয়া বাড়ি
আর বস্তাপচা ছুতমার্গ ছিল ঘরে
সময় তুফান, জীবন তুবড়ি জেনো
মনে পড়ে?
ফুটপাতে একা বীর বেদুইন
কুকুরেরা শুঁকে বলেছিল গেছে মরে


*****************************************
গালাবেয়া বেদুইনদের এক প্রকার আলখাল্লা জাতীয় পোশাক
আর্গা বেদুইন কনেদের মুখ ঢাকবার বস্তু
জাঘারিদ মূলত আনন্দানুষ্ঠানে আরবের বেদুইন মহিলাদের আনন্দসঙ্গীত
******************************************



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন