কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০১৫

সুমন ধারা শর্মা

রং নাম্বার


এটা গল্প কি না জানি না। তবে, একটা ঘটনা তো বটেই। সেটাও আবার একটা উটকো লোককে নিয়ে। লোকদেখানোও বলা যেতে পারে। যারা মোবাইলে, আই-ফোনে গল্প করতে করতে হরদম ট্রামে-বাসে উঠে যায়, অনায়াসেই, এটা সেরকম  লোকের গল্প। লোকটা বাসস্ট্যান্ডের বাঁদিকে দাঁড়িয়ে আছে। কাঁধে বিচিত্র এক ঝোলাব্যাগ। হাতে একটা আউটডেটেড মোবাইলসেট। লোকটা মোবাইলে কথা বলছে।  অনর্গল। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর মনে হলো, এ কেমন মোবাইল? এত ব্যাটারিলাইফ? অথচ, লোকটা আমার দিকে একবারের জন্যও তাকায়নি। আমিই তার  দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিলাম। সে এবার তাকাল। গলাটা উঁচু করে আমায় জিজ্ঞেস করল, কেমন আছেন, সুনীতবাবু? আমার নাম! অথচ, লোকটার নাম জানি না।  সে আমার নাম জানে। বেশ মজার তো! ঘটনাটা এতটা শোনার পর পারিজাত জিজ্ঞেস করল, নাম না জানলে সে তোমার খবর নিতে গেল কেন? আর হাবলার মতো ‘কেমন  আছেন’ জিজ্ঞেস করারই কী দরকার হয়ে পড়ল? পারিজাতের কথায় হাসলাম। জানতাম,  কেউ এমন প্রশ্ন করতেই পারে। লোকটা মুখচেনা, পারিজাতকে ম্যানেজ দিলাম। যদিও আমি কস্মিনকালে লোকটাকে দেখিনি। পারিজাত একটা ছোট্ট ‘ও’ বলে উঠে চলে গেল। বোঝা গেল, উত্তর পছন্দ হয়নি। সুনীতবাবু, সিগারেট চলবে? আবার, একটু দূর থেকেই ছুঁড়ে দেওয়া প্রশ্ন। বললাম, চলতে পারেসে বলল, একটু দাঁড়ান তাহলে। একটা ফোন আসছেলোকটা এরপর ফোন করতে করতে বেমালুম একটা  বাসে উঠে চলে গেল। একটা ছোট করে উইশও করল না। বেশ মজার তো! পারিজাত আবার এসে বসেছে। বেশ হয়েছে! তার বোধহয় মজা লেগেছে। লোকে  আমাকে পাত্তা না দিলে পারিজাতের আনন্দ হয়। কেন? এটা এখনও বোঝা যায়নি। তবে, লোকটাকে তারপর থেকে আর কখনও দেখিনি। পারিজাতকে সে কথাও বললাম। ডাহা মিথ্যে কথা! পারিজাতের দেখাদেখি সোহমও ছোট্ট করে ঝাড়ল।  ‘এরকম হয় নাকি? হয় হয় বাওয়া, কিছুই তো জান না!’ চায়ের কাপে একটা  ছোট্ট চুমুক দিতেই দেখলাম আকাশে মেঘ করেছে। সাঁই সাঁই হাওয়া দিচ্ছে। ঝোড়ো হাওয়াবললাম, খিচুড়ি চাপা পারিজাত! সে স্বভাবসিদ্ধ মুখ বেঁকিয়ে, আমার বয়েই গেছে, বলে উঠে চলে গেল। বৃষ্টি নামল তেড়ে। একটা সিগারেট ধরিয়ে  ব্যালকনির দরজাটা বন্ধ করতে যাব, এমন সময়ে দেখলাম, ছাতা মাথায় সেই লোকটা যাচ্ছে। ব্যালকনিতে আমাকে দেখে বলে উঠল, কী খবর সুনীতবাবু? সেদিন  রাগ করে চলে গেলেন যে বড়? হাঁপিয়ে উঠছি দিনদিন। কে এই সুনীতবাবু?  আমার নাম তো অপরেশ বিশ্বাস। যতীন দাস লেনে থাকি। তাহলে, আমাকে বারবার ‘সুনীতবাবু’ বলছেন কেন ভদ্রলোক?



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন