কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০১৫

মধুছন্দা মিত্র ঘোষ

হৃদয় বসন্তবনে
              
পাশ দিয়ে কোনও সুদর্শন পুরুষ হেঁটে গেলেই বুকে কেমন আনকোরা একটা ধাক্কা খায় চুয়া। এমনকী এখনও, এই মধ্য চল্লিশেও
সেই যখন সে নেহাৎই পনেরো-ষোলোর কোঠায়সে অর্থে প্রেম তখনও কড়া নাড়েনি, তবে কোচিং ক্লাসের সুপ্রতিমদা প্রতি একটা একতরফা আলগা ক্রাশ ছিল। মনটা গুনগুন। ফ্রক ছেড়ে ডিজাইনার স্কার্টে পৌঁছে, ভালো লাগার অনুভূতিও  মাথাচাড়া দিতে লাগল। সদ্য কলেজে ঢুকে টি কে বি- ক্লাসে, তাঁর সেই ভরাট গলায় পড়ানো শুরু হতেই কী চাপা উত্তেজনা, কী রোমাঞ্চ! টল ডার্ক হ্যান্ডসাম  বলতে যা বোঝায়টি কে বি একেবারে খাপে খাপ। আর কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্ট্যান্ডের ধারের টি-স্টলে আড্ডা দিতে থাকা সুদর্শন ইন্দ্রাশিস কাকুকে দেখে কত রাত যে স্রেফ ঘুমোতে পারেনি চুয়া! ইন্দ্রাশিস কাকুকে একদিন না দেখতে  পেলেই মনটা কেমন গুমোট হয়ে যেত
আরও একটু পরে বাস্তব মানুষগুলোকে বাদ দিয়ে চুয়ার ক্রাশ শুরু হলো সেলেব্রিটিদের  প্রতি। রবি শাস্ত্রী, রাহুল দ্রাবিড়, সলমন, আমির, কমল হাসান, সন্তুরের শিবকুমার শর্মা, তবলার জাকির হোসেন। সেই টিন এজ জীবনে আরও কত যে ক্রাশ ছিল!
বিয়ের পর এক সন্তানের মা চুয়া। পাশ দিয়ে কোনও সুদর্শন পুরুষ হেঁটে গেলেই আজও অদ্ভুত ভাবে হৃদয়ে সামান্য একটু দোলা লাগেই। হয় এখনও এমনটাই হয়।  এমনকী, সাত পাকে ঘোরা বর সত্রাজিৎ পাশে থাকলেও হয়। একটু আড়চোখে দেখা। একটু বড় শ্বাস। তাৎক্ষণিক ভালোলাগা
তবে ব্যাপারটা মোটেও কিন্তু সে অর্থে পরকীয়া ঘেঁষা নয়। অমন ভুলভাল প্রেমে এখন সে মোটেই পরতে চায় না। ওই মনে মনে, তখন তখন একটু ফ্যান্টাসাইজ করা আর কী! ওতেই যা একটু স্পাইস আপ
চুয়া বেশ বোঝে, এর সঙ্গে বিবাহিত জীবন, সন্তানপালন বা শারীরিক সম্পর্কের যোগ নেই। কিশোরীবেলায় যখন কারও প্রতি ক্রাশ জন্মাত, তখন তাকে নিয়ে মনে কতই না আকুলিবিকুলি এস্রাজ বাজত। তাকে নিয়ে স্বপ্ন ঘোরে বিভোর হয়ে থাকত কিছুদিন। তারপর কখন সেই ইনফাচুনেশন কেটেও যেত
বিবাহিত চুয়ার চরিত্রগত পরিবর্তন আসাটাই স্বাভাবিক। স্বামী সত্রাজিৎকে নিয়ে দিব্যি খুশিও সে। জ্ঞানপাপী চুয়া এটাও বোঝে, ক্রাশ তো আসলে আধা-বাস্তব আধা- ফ্যান্টাসির এক রূপকথার মনোজগৎ। ওসব নেহাৎই সাময়িক। ওতে প্রভাবিত হতে নেই
সত্রাজিতের সঙ্গে এর মধ্যেই একদিন সামনের 'ভ্যালেন্টাইন ডে' উপলক্ষে ক্রেডিট কার্ড পাঞ্চ করে, নামি সোনার দোকানেরদ্যুতি ডায়মন্ড কালেকশনথেকে হিরের আংটিটা কিন্তু বছরের উপহার হিসেবে আদায় করতেই হবে। কোনও জারিজুরি শুনবে না সে


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন