কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০১৫

রাজিয়া সুলতানা

ফেরা


আমার কি এভাবেই হেঁটে আসার কথা ছিল
পাখির স্বর কন্ঠে গেঁথে মাঝরাতে আলপথে?
বৃষ্টি-নিবিড় সন্ধ্যা হারিয়েছে পথ কোন দূরে
বাতাসে ধানের গন্ধ ছড়িয়ে।
আকাশ সরিয়ে ছুঁয়েছি মেঘের বোতাম--
বৃষ্টি বুঝি আসে কাশবনে।
আমার কি এভাবেই ফিরে আসার কথা ছিল
জ্যোৎস্না নেভানো রাত আঁধার শয়ানে?  


কতদূর


আলপথ উঠে এসে প্রধান সড়ক-
আরো কিছু এগিয়ে -চৌরাস্তা।
পাশে বাঁক নেয়া নদী
এইখানে ভঙ্গুর তটরেখা
খোলস ভেঙেছে কার অমোঘ নিয়তি।
এইখানে রাত আড়াল গভীর
সিঁধ কেটে গর্ভকেশর
কে ছিঁড়ে ফেলেছে বধির?
রাতের বিরতি শুধু ডেকেছিল দিন
চোখের গভীরে স্বপ্ন ছিল কারো
নিশুত পোয়াতী, মউকুফ হয় যদি খেলাপীর ঋণ।

আরো কিছুদূর, আরো কিছু পথ
পার হয়ে হয়ে কেন পথ আরো বাকি?
শৈশব কৈশোর
রঙিন মলাট ছিঁড়ে
কার হাতে যৌবন দিয়েছিল ফাঁকি?
পাখির ঠোঁট গেঁথে নিয়েছিল
মিহিদানা শস্যের ফুল
চিকন সুরের এক রক্ত-মেলোডি।
পূর্ণ অঞ্জলি কেন বন্দনাহীন
কদম-কামিনী
বয়ে কি বেড়াবে শুধু
শ্রাবণ রাত্রি-ভার, বর্ষার বিষণ্ন দিন?  


সভ্যতা


লাসভেগাস চোখে স্বপ্ন
ঘুমিয়ে পড়ল ভোরের আলোয়।
রাতে--
অন্য আকাশ ছিল
চাঁদ ছিল
তারা ছিল
জোৎস্নাও ছিল
রাতের খেলাটা জমানোই কাজ
তাও ছিল ঠিকঠাক।
রাতে--
রক্তাক্ত ছুরি হাতে
হোপ নামের মেয়েটি
ভীড়ের মধ্যে নিজেকে খুঁজছিল


এখন না হলে আর কখনো নয়  

এখন তো তুমুল নেমে যেতে পারো
গভীরে, জমিনে, শেকড়ে, অতলে,
এক স্রোতে --
এখন না হলে আর কখনো নয়
স্বপ্নের সীমানায় আড়ি পাতা মুহূর্ত ডেকে যায় --
কাঁটা তার নেই সেখানে।
এখন তো দেখে নিতে পারো
কোথায় উড়ছে পুষ্পমাখা রোদ ধূলির ওপর
ভ্রমর করে না ভুল শ্রমে
পিঁপড়ে জানে শীতের সঞ্চয়।
সবুজ পাতাও খোঁজে হরিণ-গন্ধ বাতাস
এখন তো ডেকে নিতে পারো মৃত্যুসুখ শিল্প-লগ্ন
কাচের মতো ভেঙে দেহের কপাট।


দু'জনে


সামান্য ভালোবাসা দিলাম--
দেখি মন্ত্রমুগ্ধ সাপের মতো প্রথমে
গা বেয়ে উঠলে
তারপর--
ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে শুয়ে গেলে। অথচ
এক আশ্চর্য আলো্য় তোমার আপাদমস্তক জ্বলজ্বল করছে
এবং তোমার চোখ পৃথিবীর সব সুখ কিনেছে।
ভালোবাসা এক যাদু-
তোমাকে ছুঁয়ে দিতেই নিজেও আক্রান্ত হলাম।
মাঘের মধ্যরাত
উঠোনে রান্না শেষ, হেঁসেলে ছাইচাপা আগুন-ফিসফাস--
পাশে রাত শুয়ে নিশ্চুপ
ভেতরে উড়ছে তুমুল কার্পাস
আয়োজন শেষ --
যৌথ খামারে এখন
ফুলের সব বিষে হবে মধু সম্পাত।


অন্যজীবন


ঘুমের আড়াল আনো
কিছুটা অন্ধকার দাও
আলোতে বিচ্ছুরিত দেখি তোমাকে - মগ্ন হতে পারি না।
স্বপ্ন সন্মোহন দাও
কিছু শ্রম, কিছু ঘ্রাণে
ছাড়িয়ে নিই দুই হাতে
খনিতে জড়িয়ে থাকা হীরের আকর।
বিমূর্ত উদ্ভাসে
শিল্প-রস, নির্যাসে ঢাকো,
কিছুটা নিমগ্ন থাকো, ঊষর নীরবতা
শ্রাবণ মেঘে ভিজে -
আমাকে আসতে দাও, আসতে দাও, আসতে দাও বিনম্র-ক্ষিপ্র।
চোখ খুললেই সূর্য প্রখর।
স্বপ্ন হারিয়ে যায়।
প্রভাত ফুরিয়ে যায়।
মুহূর্ত-জাল ছিঁড়ে যায় 
আধেক জীবন থেকে
ছাড়িয়ে নিতে নিতে
ছেঁড়াখোঁড়া উন্মূল এই আমাকে শেকড়ে বাকড়ে তুমুল জড়াতে দাও।
আমি তো জানি না কোনো সুর
শিখিনি কোনো গান তোমাকে ছাড়া-
নগ্ন হুল্লোড়ে হারাবার ভয়
যা কিছু হাতের মুঠোয়, সে আমার নয়।

পুষ্প আহ্লাদে জাগা সূতো-বাঁধা প্রাণ  
রোদে জলে একদিন হয়ে গেলে ম্লান
আধেক মরণ এসে ছুঁয়ে দিলে দেহ
ঋণ যদি হয় কিছু শোধ- পাবো পরিত্রাণ।




0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন