কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০১৫

রত্নদীপা দে ঘোষ

নিম্বাস


(এক


ডাটাপ্যাক শেষ 
পোষ্টঅফিসকে দিয়েছি ছুটি
সার্বজনীন করে দিলুম না
লেখা ডাকবিভাগ

আমি ঠিক আমারি মতো  
চিঠিপাড়ায় ফুটছি ফুটছি
অথচ প্রকাশিত হইনি আজকাল

শুধু জন্মে আছি
মৃত্যুর পাশের কবজে

(দুই)


ঘুম পায়
অথবা ঘুম পায় না

চোখ জেগে থাকে
আক্রমণ করে
জলের তোড় তারানা
আমাকে তাড়া করে

আমারও চোখ পায়
চোখ পায় খুব

টপলেস মনিটর জেগে থাকে
কানে কানে তাকে বলি
এ চোখাচখির ভাগ হবে না


বর্ষা – ১


সবসময় একটা বর্ষাআমার সঙ্গে পৃথিবী যখন খুব ভোরখুব মেঘ অচেনার ফুলকতভাবে ভরিয়ে দিচ্ছে তীব্র কোহলের ভালোবাসাবাসিনিভৃত যতনে অই যে আন্তরিক হয়ে উঠছ ক্রমশ আর চারপাশের দড়ি দড়া নলখাগড়া... উপশম দিচ্ছে চোখের পলকপাতার ফাঁকে বর্ষার নিজস্ব ক্যামেরা। ঈশ্বর ডালপাতার আড়ালেলুদ সবুজ টিয়াপাখির গুরুভার স্তন
কবিতা লিখছি যেন অল্প অন্ধকারে...
আজ বোধহয় খুব বৃষ্টি। তোমাকে জ্বালাচ্ছে খুব। গোপন কখনো নতুন থাকে নাআর নতুনদের থাকে না গোপন করার গয়নাগয়না বলতেই মনে পড়লো বৃষ্টির জাতীয় সড়ক। সংরক্ষিত কবিতার শীর্ষতুমি বুঝি তাকে আর বৃষ্টির বৃতিতে খুজেও পাও নামি এখানে আবছা ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছিছাপার অক্ষরে অলঙ্কার হতে মন করছে খুব
পৃথিবীর সব কবিতাই কি বৃষ্টির পরে  মসৃণ পাথরের বুক? পাখিদের মতো বন্দী। অসহায় ঝর ঝর নিনাদ 

বর্ষা -২


বর্ষাকালের আসবাবগুলি ভারি চমৎকার। নরম কাণ্ডের আবেশ। স্বাদু ঠাণ্ডা ধুনআজ বুঝি বিরহ জড়িয়ে আছ বনদেবীর ভেজা বরসাততোমাকে এই সময় ঘিরে ধরে আছে কয়েক জন বর্ষাআদুরে মেয়েরা তোমাকে টেনে ধরছে লাল নীল হলুদ হাতেছাতার ঝুঁটি ধরে তুমি গুলিয়ে ফেলছ দিক। তোমাকে দোষই বা দিই কেমন করে... যত বৃষ্টিতে ধুয়ে যাছে আষাঢ়ের ক্যাপশন। ততো মল্লিকার কৃষাণী আলোটি... তোমারও তো ছাতিম রঙের ব্যাস্ততা আছে... আগুনে লোকাল হরদম আছে। জানি তো, তোমার জানালার মেহগিনিতে আজ রওশন রওশন খুব...
কবিতার জন্মান্তরে তুমি কি আমায় শিখিয়ে দেবে কীভাবে তোমাকে ছুঁয়ে বর্ষা হয়ে  যায় অলীক জন্মতারিখ... কীভাবে লাল টকতকে স্বরলিপি থেকে চাঁদ এসে নামে মউন্সিন্রামের নাব্যতায়...  
হাত রাখি তবে। হে গ্রহান্তের মেঘকুমার, ফেলে আসা বর্ষামুখর তারমিনাস কি এখনও কাঁপাচ্ছে তোমায়? তুমি ভিজে যাচ্ছ সম্পূর্ণ... আর মোহমণ্ডলের দিগন্ত কারাবাসে একটি ঢেউ বসে আছে শুধু তোমার জন্য... এখনো অনেক নদীরা চুমুর গন্ধমাখা... পাখনাদের সেলাই মেশিন খুলে জপিয়ে নিচ্ছে কারণবারির আকাশ। তুমি আজ পর্যাপ্ত। আমাকে আজ কোনো দরকারই নেই তোমার...  

বর্ষা- ৩


নাকি ময়ূর জুড়ে সাজানো তোমার কমা ড্যাশ কোলনের অনুচ্ছেদ। আমার মুখের আধখানা বৃষ্টিকবে হারিয়ে গেলাম তোমার এক টুকরো বাঁশী... রাতের কোথাও কবিতার ডাঙা নেই... জলের বাঁদিকে নেই নৌকোস্রোতের চোরাআজ ধূমবৃষ্টির ব্রেসিয়ারে ঝিরিঝিরি হাস্নুহানা হলে ভালো হতো খুবআমরা এলোপাথারি রঙ ছুঁড়ে  দিতামবিদ্যুতের কৌতুকে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়তাম এক অন্যের আয়োজনেআমাদের কেউ বর্ষাঋতুর শালিখ বলে ভুল করতকেউ বলত আজ কি মীরাবাঈয়ের জ্যোৎস্না বসেছে, ভিয়েন জুড়ে কিসন... কানহাইয়ার হাত দুটি আমাদের কাঁধ বরাবর ডানা করে দিচ্ছে... আজ থেকে আমরা যা কিছু গানবো... আঁকাঘ্রাণে বুঝে নেব কথা... আজ থেকে আমাদের সমস্ত  মাদল ঝরবে প্রজাপতির বাদলা সারেন্দায়...
কীভাবে বর্ষার ফাঁদে তোমার সঙ্গে জড়িয়ে পড়লুম আর কচি কচি তেপান্তর বৃষ্টির  গাছ হয়ে আমাদের পাহারা দিতে শুরু করল। কাবেরী আর ঊষার সঙ্গমেও এমন  ভিড় হয়নি। আমরা কি তবে ইমন আর মল্লার? কত্থকের বিলাবলে মন পড়ে থাকছে আমাদের... শরীর। তবু শরীর নয়কত কবিতা যে শ্রাবণময় থইথই যৌনতাযে সব বৃষ্টিরা হেরে গেছে অথবা হেরে গিয়েও জেতেনি তাদের অরণ্যটুকু বালুচরির  কোয়া খুলে কেউ দুঃখ... কেউ সুখ... কেউ জরিপনার দুফোঁটা অবুঝ জামা...

বর্ষা – ৪


খুলে ফেলি তবে। এই নাভি এবং নীল। এই সারং এবং ই বৃন্দাবনএই গোকুল এবং এই চন্দ্রের অববাহিকা। এখানে বৃষ্টিপাথর। এখানে রোম রোম শিকার। উত্তেজনা। অস্তাচলে ঘাম হয় খুব। পিয়াসাদুপাশে অনেক শহর থেকেছিল আমাদেরঅনেক গ্রাম বন্দী করেছি ঘাসের তালুতে। অনেক শামুকনদী নোলক দুলিয়ে, তোমার রাঙা হয়ে গেছে উলুধ্বনিআমিও ছড়ার বৃষ্টিতে কবিতা বাঁধতে লেগেছি ঝুমঝুমবিশল্যকরণীর খোঁজে আমাকে কেউ ধনুক করেছে... কেউ প্রহরের আরতিকার ঘণ্টাধ্বনিতে বেজেছে শুধু অন্ধকার... 
তোমার গায়ের বৃষ্টি ঘষে মেজে রামধনু শেখার ছল? তুমিও কি এমনি করেই ভাবো? আর দিন পনেরোর তর্সায় ঝাঁক ঝাঁক বর্ষায় উড়ে যাও... বুদবুদের বর্ষায় ভেঙে যেতে যেতে আমি নাম ধরে ডেকে উঠছি তোমার... ওগো বাউলখেলার নক্ষত্র, ওগো প্রিয় বর্ষার রসিকবিল...

বর্ষা -৫


অনেকদিন পর তোমার সাথে দেখা। এক বছর। আমি এসেছি তুলারাশির জাতক থেকেকবিতাকে গুজব ভেবে উড়িয়ে দিয়েছি তোমার সাম্প্রতিক গদ্যকথা। তখন আমার ঘোরঋতু। বর্ষার পঞ্জিকায় সজিয়েছি ঘর। এক বিন্দু মহাকাশ, শালপাতার মালসায় ডুমো ডুমো মহাকালআমি তোমার সমস্ত ফন্দীফিকির চিনে গেছিবুঝেছি দুটি অলকানন্দার মায়াজালে আটকে থাকা বর্ষার অর্গান। এ বুঝি তুমি বাকিটুক। আরও শব্দ করচিবুকের তলায় ধরো মোমবাতির অযুত ভাইরাস... কীভাবে ঝর  ঝর সহকারে লাজুক উজানের পিছল জোনাকিরা কাম হয়ে এলো... কীভাবে  কাঁথাস্টিচের প্রেমপত্র দাউদাউ জ্বলে উঠল... আমাদের স্বেদরক্ত... গলে গেল স্মৃতিকাতর ফর্সায়...  
   





0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন