কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০১৫

লিপিকা ঘোষ

দেশ  



‘পেটওয়ালা মাগীদের মতো বিষ-টক কুল গুলোন গিলছে দ্যাকো’
‘অ মেজো, তুই কি লা? যকন দ্যাকো তকন খালি ছোটর পেচনে পড়ে থাকিস। কাজ কাম নাই?’
‘না নাই গো বড়দি, আমার তো তোমাদের মতো ভাতার বেঁচে নেইতিনি থাকলে আমারো কাজ কাম থাকত
‘আ মোল যা, এই ভর দুকুর বেলা শাপমন্নি করিসনি মেজ, ভাতারখাগি মেয়েছেলে  কোথাকার’

যার বিষ-টক কুল গেলা নিয়ে এত কথা, সেই এ বাড়ির ছোটবউ তখনও তেতলার ছাদে রেলিংএ ভর দিয়ে ছ্যাঁচা কুলগুলো মন দিয়ে খেয়ে চলেছে, আর দুই জা-এর কথা কাটাকাটি শুনে হাসছে
‘দাঁত বের করে হাসিসনি ছোটএই জন্যি মেজ তোকে দেখতে পারে না তা হ্যাঁ লা, পেট বাঁধালি নাকি লা?’ বড়গিন্নি তার তেতলার ছাদ থেকে জিগোয়। একই ছাদ, রেলিং দিয়ে ভাগ করা
‘আহ বড়দি, চুপ কর’ ছোটবউ জবাব দেয়।
‘চুপ করব কি লা? এর আবার চুপ করা-করির কি আচে? বে হতে চলল বাপু  সাড়ে তিন মাসএর মদ্যি কোনো খবর নেই!’
ওদিকে মেজগিন্নির কান খাড়াগায়ে গা লাগা তিন ভাগের বাড়ির মাঝখানের উঠোন থেকে জবাব করে, ‘শোন লা ছোট, এ মাসেও যদি ন্যাকড়া কানি ভিজিয়েছিস, তালি তোকে বাড়ি ছাড়া করব’ 
‘কোরো’, হেসে ওঠে ছোটবউ
‘আহ মেজ, অমন বলিস না! ও শওরের মেয়ে। শিক্ষিতও কি আর আমাদের মতো মুখ্যু? বুঝে সুঝে নেবেখনআমরা তো টের টি পেলুম না, কোতা থেকি কি হলো, পেট বাঁধিয়ে ফেলেছিলুম’
এতক্ষণে ছোটবউ তৃপ্তি করে কুল ছ্যাঁচা খাওয়া শেষ করে কাত হয়ে ভর দিয়ে রইল তেতলার রেলিং ঘেঁষে। আকাশ পানে মুখঐ তো একটা এরোপ্লেন মেঘ কেটে কেটে ভেসে যাচ্ছেযেন ছোটবেলায় ওর বাবার তৈরি কাগজের উড়োজাহাজচাইলেই ধরে ফেলতে পারবে ও

ছোটকত্তা রাত করে বাড়ি ফেরে। কোনো নেশা ভাং নেই। মেয়েছেলের দোষও নেই তবু রাত করে বাড়ি ফেরেতা বলে পেট বাঁধানোর চেষ্টা কি হয় না? হয়। রোজ নিয়ম করে, ঘুমোতে যাওয়ার আগে ছোটকত্তার স্পার্ম লেভেল খুব লো। এই তিন মাসের মধ্যে দুবার ডাক্তার দেখানো হয়ে গেছেদুবার ডাক্তার বদলও হয়েছে। ছোট কত্তা ওসব ওষুধ খাবেন না। জড়িবুট, জ্যোতিষ টোতিষ, আর গুচ্ছের তাবিজ  মাদুলি

আকাশের দিক পানে চেয়ে থাকে ছোটবউএরোপ্লেনটা মেঘ কেটে কেটে মিলিয়ে গেছেশুধু কাটা মেঘগুলো গুচ্ছ হয়ে আছেওর ইচ্ছে করে ঐ মেঘের মধ্যে ঢুকে পড়তেওই প্লেনটার পিছু পিছু ডানা মেলে উড়ে যেতে

বিদেশ কেমন? ছোটবউ জানে নাস্বদেশ দেখাই হলো না, তো বিদেশ! বিয়ের ঠিক  আগ দিয়ে ছোটবউ-এর এক বন্ধু জুটেছিলমাঝে মধ্যে মোবাইলে কথা-টথা হতো তারপর একদিন উড়ে গে ছেলেটা। গাঁয়ের ছেলেপড়াশোনা শিখে বাপ মা’র মুখ উজ্জ্বল করতে বিদেশে উড়ে গেল ছেলেটা। সেখান থেকে মোবাইলে মেসেজে কথা  হতোএখন তো ইন্ডিয়াতে দুপুর, কি করছ?’ হাসত ছোটবউগাঁয়ের ছেলে দেশ বলতে ভুলে গেল? ইন্ডিয়া বলে! দেশ মানে তো অনেক বড়! দেশ মানে, যার কোনো বিদেশ নেই। ইন্ডিয়ার বিদেশ আছে ছোটবউ দেশ দেখতে বেরোবে

শেষ কুলের আঁটিটা অনেকক্ষণ মুখে রাখা স্বভাব ছোটবউ-এর ওর দিদিমা খুব বকুনি দিতএখানে বড় জা বকে, ‘মরবি ছোট কুলের আঁটি গলায় গেঁথে, আমাদেরও মারবি, ফ্যাল মুখ থেকে!’  
থুঃ করে ছিটকে ফেলে আঁটিটাকে দূরেহাউসকোটের পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে মেসেজ টাইপ করে ওর এক দাদাকে, ‘কাল রওনা হচ্ছি। তুমি আমায় দেশ দেখাবে বলেছিলে...’



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন