কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৫

**** কালিমাটি অনলাইন / ২৪ ****

সম্পাদকীয়

  
আমরা, যারা বাংলা ভাষায় কথা বলি, বাংলা ভাষায় গান করি, বাংলা ভাষায় পড়াশোনা করি ও সাহিত্যচর্চা করি; কয়েকশ বছর আগে বাংলা ভাষায় এমন একজন মহান কবিকে আমাদের মধ্যে পেয়েছিলাম, যাঁর জন্য আমরা আজও গর্ব বোধ করি এবং ভবিষ্যতেও করব, হিমালয় সদৃশ উচ্চতায় ও গভীরতায়। কেননা সেই কবি  তাঁর পদাবলীতে একটি চিরকালীন সত্য উচ্চারণ করে গেছেন সামগ্রীক বিশ্বের মানুষের উদ্দেশ্যে। “সবার উপরে মানুষ সত্য...”। আমরা সেই প্রণম্য কবি চন্ডীদাসের অনন্য পংক্তিতে আজকের পরিপ্রেক্ষিতে আরও দুটি শব্দ সংযোজন করতে আগ্রহী – “সবার উপরে মানুষ সত্য... এবং মনুষ্যত্ব”। কেননা মানুষের সভ্যতার ইতিহাস পাঠ ও পর্যালোচনা করে একটি ব্যাপারে সবাই সহমত পোষণ করবেন যে, কোনো মানবীর গর্ভে মানুষের মতো শারীরিক গঠন ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রতিপালিত হয়ে ভূমিষ্ঠ হলেই সে যে মানবিক গুণ ও মনুষ্যত্বের অধিকারী হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর এই পৃথিবীতে যে মনুষ্যত্বহীন মানুষের আকার বিশিষ্ট প্রাণীর সংখ্যা ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে, একথাই বা কে অস্বীকার করবেন! না, এটা শুধুমাত্র কোনো হতাশা এবং নিরাশার  কথা নয়; বরং এখানে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যাঁরা জন্মগত সূত্রে মানুষের শারীরিক গঠন লাভ করার পর মনুষ্যত্ব অর্জনের জন্য নিরন্তর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের সম্পর্কে আমরা কতটা ওয়াকিবহাল এবং কতটা শ্রদ্ধাশীল? কতটা সহযোগিতার হাত প্রসারিত করার জন্য আগ্রহী ও উদ্যোগী আমরা?

সাম্প্রতিক একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যাক। ঝাড়খন্ড রাজ্যের বোকারোর সোনালি মুখোপাধ্যায়। যখন তাঁর বয়স মাত্র আঠারো, দুষ্কৃতীর অ্যাসিড হামলায়   সাংঘাতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তাঁর মুখমন্ডল। সেই নৃশংসতায় যেন হারিয়ে যেতে বসেছিল জীবনের সব রঙ ও স্বপ্ন। কিন্তু না, তা হারিয়ে যায়নি। হারিয়ে যেতে দেননি সোনালি মুখোপাধ্যায়। কেননা হেরে যেতে তিনি শেখেননি কখনই। নিজেকে মানুষ রূপে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য লড়াই চালিয়ে গেছিলেন অদম্য সাহস ও আত্মবিশ্বাসে। শিক্ষাজীবন শেষ করে প্রবেশ করেছিলেন কর্মজীবনে। মেরুদন্ড সটান ও দৃঢ় করে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন নিজেরই দুই পায়ে। সোনালির এই জীবনসংগ্রাম কি অসামান্য নয়? মহাকাব্যিক নয়? সারা বিশ্বের কলা ও সাহিত্যে এই ধরনের অসাধারণ জীবনযাত্রাই তো অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে চিরকাল। ভারতে অত্যন্ত জনপ্রিয়  টিভি সিরিয়াল অনুষ্ঠান ‘কৌন বনেগা কড়োরপতি’তে সোনালিকে আমরা দেখেছিলাম একমেবদ্বিতীয়ম অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনের মুখোমুখি বসতেবস্তুত সোনালিকে শ্রদ্ধা  জানাতেই এই অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

যাইহোক এসবই মহাকাব্যের প্রথম পর্বের কথা। কিন্তু মহাকাব্যের দ্বিতীয় পর্ব যে  আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ ও তাৎপর্যমন্ডিত হয়ে উঠবে, তা ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। সম্প্রতি সোনালি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন জামশেদপুরের চিত্তরঞ্জন তিওয়ারীর সঙ্গে।  চিত্তরঞ্জন পেশায় ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনীয়ার। কর্মসূত্রে তিনি বর্তমানে আছেন ওড়িশ্যার  ভূষণ স্টিল প্ল্যান্টে। এবং তাঁদের এই বিয়ে প্রেমজ। সোনালির জীবনের বিপর্যয়ের কথা চিত্তরঞ্জন অনেক আগেই জেনেছিলেন। তারপর তিনি নিজেই আগ্রহী হয়ে যোগাযোগ করেছিলেন সোনালির সঙ্গে। বন্ধুত্ব। গাঢ় বন্ধুত্ব।  ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব। ক্রমে প্রেম। এবং শেষে পরিণয়। না, কোনো সহানুভূতি বা সমবেদনার মেলোড্রামা এখানে নেইনেই কোনো উচ্চগ্রামের রূপ ও রূপটানের মেলোডি। বরং আছে হৃদয়ের নিভৃত লেনদেন আর সত্যিকারের মানুষ হয়ে ওঠার ও মনুষ্যত্ব অর্জনের জন্য নিরন্তর যাত্রা বা ‘জার্নি’।

অনেকেই বলেন, সাহিত্যে মহাকাব্যের যুগ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। কথাটা তাঁরা ঠিকই বলেন। পরবর্তী যুগে আর মহাকাব্য রচিত হয়নি। বরং সাহিত্যে  প্রচলিত হয়েছে অনেক নতুন নতুন আঙ্গিক, শৈলী ও ‘ফরম্যাট’। কিন্তু একথাও ঠিক যে, সাহিত্যে মহাকাব্যের যুগ শেষ হলেও শেষ হয়নি মহাকাব্যিক জীবন। আর এইসব মহাকাব্যিক জীবনই তো অনুপ্রেরণা যোগায় নতুন নতুন আঙ্গিক, শৈলী ও ‘ফরম্যাটে’ সাহিত্য সৃজনের। এবং সেইসঙ্গে আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করে মনুষ্যত্ব অর্জনের যাত্রায় বা ‘জার্নি’তে। আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা জানাই সোনালি মুখোপাধ্যায় ও চিত্তরঞ্জন তেওয়ারীকে। কামনা করি তাঁদের সুখী দাম্পত্য জীবনের।       

আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :

দূরভাষ যোগাযোগ :           
0657-2757506 / 09835544675
                                                         
অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :
Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India
     




'> 

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন