কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ২২ মে, ২০১৫

**** কালিমাটি অনলাইন / ২৫ ****

সম্পাদকীয়
  

মানুষ নিয়ে কিছু কথা লিখেছিলাম বিগত ২৪তম সংখ্যা কালিমাটি অনলাইন ব্লগজিনের সম্পাদকীয়তেলিখেছিলাম, মানবীর গর্ভ থেকে মানুষের মতো শরীরের গঠন ও আকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করলেই কেউ মানুষ বলে নিজেকে দাবি করতে পারে না, যদি না সে মনুষ্যত্ব অর্জনের জন্য সাধনা করে এবং সেই সাধনায় সিদ্ধিলাভ করে। এবং সেইসঙ্গে একথাও উল্লেখ করেছিলাম যে, যদিও পৃথিবীতে মনুষ্যত্বহীন মানুষের আকার বিশিষ্ট প্রাণীর সংখ্যা ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে, কিন্তু এরই পাশাপাশি এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা জন্মগত সূত্রে মানুষের শারীরিক গঠন লাভ করার পর মনুষ্যত্ব অর্জনের জন্য নিরন্তর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এবং সিদ্ধিলাভও করছেন। এবারের সম্পাদকীয় যদিও মানুষ ও মনুষ্যত্ব সম্পর্কিত, তবুও প্রসঙ্গ কিছুটা স্বতন্ত্র। প্রসঙ্গটা হচ্ছে বুদ্ধি এবং বুদ্ধিবৃত্তির।

একটা কথা আমরা সবাই জানি যে, এই বিশ্বে প্রাণীজগতে তুলনামূলক বিচারে মানুষের বুদ্ধি সব থেকে বেশি। সেই বুদ্ধিকে ব্যবহার করে সে বিভিন্ন রকম বৃত্তিতে নিজেকে নিয়োজিত করেছে। অন্যান্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরে বুদ্ধির বিকাশ ঘটলেও সেই বুদ্ধিকে প্রয়োগ করে তারা কিন্তু কোনো বৃত্তি গ্রহণ করতে পারেনি। যে কোনো বুদ্ধিমান মানুষ এর স্বপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলবেন যে, যেহেতু মানুষের সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে এবং তারই পরিপ্রেক্ষিতে সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, তাই স্বাভাবিক কারণেই বুদ্ধিবৃত্তি তার জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছেকোনো সন্দেহ নেই, এই যুক্তি অকাট্য যুক্তি। আমাদের জীবনধারার মতো বাকি প্রাণীজগত এখনও কিছু গড়ে তুলতে পারেনি এবং সেই অর্থে কোনো সমাজব্যবস্থাও তাদের নেই। আর তাই তাদের বুদ্ধি থাকলেও কোনো বুদ্ধিবৃত্তিও নেই।

আর ঠিক এই প্রাসঙ্গিকতায় এখানে প্রাণীজগতের দুটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে, যা হয়তো আপনাদের অনেকেরই জানা আছে। প্রথম ঘটনাটি আমেরিকার। একটি ছাগল, নাম ‘বুডি’, নিবাস ‘অল্বকুর্ক বোটানিক্যাল গার্ডেন’, অঙ্কনশিল্পী রূপে এখন রীতিমতো খ্যাতিলাভ করেছে। সংবাদে জানা গেল, সেই বোটানিক্যাল গার্ডেনের এক কর্মচারী, নাম ক্রিস্টিন রাইট, সেই ছাগলকে অঙ্কনশিল্পে শিক্ষিত করে তুলেছেন। সেই গার্ডেনের ম্যানেজার লিন টুপা জানিয়েছেন, এই ছাগলশিল্পী মুখে ব্রাশ আঁকড়ে ধরে ক্যানভাসে ছবি আঁকে। এই পর্যন্ত যা উল্লেখ করা হলো, তা নিঃসন্দেহে সেই ছাগলটির বুদ্ধি ও প্রতিভার সাক্ষ্য বহন করে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, যেহেতু অঙ্কনশিল্প সেই ছাগলটির বৃত্তি নয়, তাই সে তার বুদ্ধি ও শ্রমের বিনিময়ে কখনই অর্থ উপার্জন করতে পারে না। অথচ তার শিল্পকর্ম বিক্রি করে কিছু মানুষ প্রতিটি চিত্রের জন্য প্রায় চল্লিশ ডলার (ভারতীয় মূল্যে ২৫০০ টাকা) উপার্জন করছে।

এবার একটি কুকুরের কথা। কিছুদিন আগে ফেসবুকে একটি ভিডিও ক্লিপিংস দেখেছিলাম, যা আমি আমার টাইমলাইনে শেয়ার করেছিলাম। ভারতে এখন ক্রিকেট খেলা খুবই জনপ্রিয়। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি গ্রামের খন্ডচিত্র। খুবই কম বয়সী একটি ছেলে ও একটি মেয়ে ক্রিকেট খেলছে। তিনটি কাঠের টুকরো সংগ্রহ করে উইকেট ও স্ট্যাম্পস খাড়া করেছে। ছেলেটি বল করছে, আর মেয়েটি একটা চ্যালাকাঠকে ব্যাট বানিয়ে বাঁ হাতে স্ট্যান্স নিচ্ছে। এছাড়া আছে একটি কুকুর, যাদের আমরা নেড়ি কুকুর বলি। বাচ্চা ছেলেটি নিয়মিত বোলারের মতো ডানহাতে বল করছে আর বাচ্চা মেয়েটি দক্ষ বাঁহাতি ব্যাটস-উয়ম্যানের মতো রীতিমতো কভার ড্রাইভ করছে। কুকুরটি ফিল্ডিং করছে। ঠিক উইকেটের পেছনে ক্যাচ ধরার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যে মুহূর্তে মেয়েটি ব্যাট চালিয়ে বলটাকে পাঠাচ্ছে বাউন্ডারির উদ্দেশ্যে, সেই মুহূর্তে কুকুরটি ক্ষিপ্র বেগে দৌড়ে গিয়ে মুখে বলটি তুলে নিয়ে বোলারের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। এবং পর মুহূর্তেই সে এসে আবার দাঁড়িয়ে পড়ছে উইকেটের পেছনে। না, এটা কোনো টেস্ট বা ওয়ান ডে অথবা কুড়ি-২০ ওভারের খেলা নয়। এবং এই দুটি নিতান্ত অর্বাচীন ছেলেমেয়ে আদৌ পেশাদার খেলোয়াড়ও নয়। আর কুকুরটি তো, বলা বাহুল্য, অপেশাদারও নয়। কিন্তু এখানে যেটা অবাক হবার মতো ঘটনা, তা হচ্ছে, কুকুরটি ক্রিকেট খেলার এই ‘বেসিক’ নিয়মকানুন শিখল কীভাবে! ভিডিও দেখে তো বেশ বোঝা গেল, ব্যাটিং বোলিং ফিল্ডিং, সব বিভাগেই তার যথেষ্ট জ্ঞানগম্যি আছে! সুতরাং একথা স্বীকার করতেই হবে যে, মানুষেরা যতই নিজেদের বুদ্ধি সম্পর্কে অহংকার করুক না কেন, বাকি প্রাণীজগতও ক্রমেই তাদের বুদ্ধি এবং সৃজনক্ষমতা উত্তরোত্তর বাড়িয়ে চলেছেএবং একথা বলাও হয়তো অসঙ্গত হবে না যে, এভাবেই হয়তো একদিন তারা বিজ্ঞানের নিয়মাবলী সম্পর্কে আরও শিক্ষিত হবে এবং আধুনিক প্রযুক্তিকেও করায়ত্ব করবে।

মাত্র দুটি ঘটনার কথা এখানে উল্লেখ করা হলো। প্রিয় পাঠক-পাঠিকাদের কাছে এই রকম আরও অনেক অনেক ঘটনার কথা জানা যেতে পারে। আমাদের শুধু বক্তব্য এটাই, যেখানে মানুষের আকার বিশিষ্ট প্রাণী অনেকেই মনুষ্যত্ব অর্জন না করেও জীবন অতিবাহিত করছে, সেখানে অন্য সব প্রাণী তাদের জীবনযাত্রায় পশু-পক্ষী বা কীটসুলভ গুণাবলি থেকে কখনই বিচ্যুত হচ্ছে না, সততা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে না, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা সৃজনশীলতার আশ্চর্য বিভিন্ন দৃষ্টান্ত উপস্থাপিত করছে। আর তাই একটা কথা এখানে স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন, কোনো মানুষ মনুষ্যত্বহীন হলে তাকে অমানুষ সম্বোধন অবশ্যই করা যেতে পারে, কিন্তু তাকে যেন কখনই কোনো পশু বা জন্তু বা জানোয়ার বা কীটপতঙ্গের সঙ্গে উপমিত করা না হয়, সম্বোধন করা না হয়! তাদের অর্জিত বুদ্ধিকে যেন মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির দ্বারা অপমানিত করা না হয়!
 
আমরা ‘কালিমাটি অনলাইন’ ব্লগজিনের জন্য বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী লেখক-লেখিকাদের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাই, আপনারা আপনাদের সুচিন্তিত ও মননশীল লেখা পাঠিয়ে এই ব্লগজিনকে আরও সমৃদ্ধ করুন এবং প্রকাশিত লেখাগুলি সম্পর্কে আপনাদের অভিমত জানিয়ে আমাদের উৎসাহিত করুন।
     
আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :

দূরভাষ যোগাযোগ :           
0657-2757506 / 09835544675
                                                         
অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :
Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India
     





0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন