কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৫

সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ

পদক

অনেকদিন ধরেই অসুস্থ কবি আদিত্য মারুফ। দেশের অন্যতম সেরা কবি। চারদিকে কত নাম-ডাক! কবি জীবনে পেয়েছেন অনেক সাহিত্য-পুরস্কার,  সম্মাননা ও সংবর্ধনা বাড়ির একটা রুমে সেলফ ভর্তি বই, পদক, সম্মাননা  ক্রেস্ট আর মানপত্রগুলো থরে থরে সাজানো। নিজের হাতে সাজিয়েছেন। তাঁর সন্তানের মতোই প্রিয় এই বই আর পদকগুলো।

যখন মন ভালো থাকে না তখন এ রুমটায় আসেন। বই আর পদকগুলোর  দিকে অপলক নয়নে তাকিয়ে থাকেন। এগুলো তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন অনেক কষ্ট করে এগুলো অর্জন করতে হয়েছে। মানুষ টাকা-পয়সা কামাই  করে, বাড়ি-গাড়ি করে আর তিনি লিখেছেন বই। আর তার স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন পদক। সোনার পদক, রূপোর পদক, আরো কত রকমের পদক।
সারা জীবন কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। টাকা-পয়সা তেমন একটা সঞ্চয় করতে পারেননি। সঞ্চয় বলতে অগণিত ছাত্র-ছাত্রী আর এই বই ও পদকগুলো। এ নিয়েই তাঁর যত অহংকার।

আদিত্য মারুফের এসব নিয়ে অহংকার থাকলেও তার স্ত্রী সাবরিনা সুলতানার  কোনো আগ্রহই নেই। অভাবের সংসারে ওসব পদক দিয়ে কী হবে? এখন বেঁচে  থাকাটাই মুখ্য। ওসব পদক-টদক সব গৌন। এ নিয়ে স্বামীর সাথে মাঝে- মধ্যেই বচসা হয়। পদক বেচার কথা উঠলেই অদিত্য বলেন : দেখ সাবরিনা, এসব পদকের কী মূল্য, তুমি জানো না। ক’টা টাকা দিয়ে এর দাম পরিমাপ  করতে পারবে না। পদক না বেচে বরং তুমি আমাকেই বেচে দাও। ঝামেলা বিদেয় হোক।
আদিত্যর কথায় সাবরিনা তাঁর মুখে আঙুল চেপে ধরেন। বলেন: ছিঃ ছিঃ,   এমন কথা তুমি বলতে পারলে? আমি তো অভাবের কারণে কথাগুলো  বললাম। আগে বাঁচতে তো হবে!
তুমি তো জানো রিনা, আমার বই, আমার পদকগুলো আমার কাছে সন্তানের মতো। কেউ কী তার আত্মজ সন্তানকে বেচতে পারে? পারে না। আমিও পারব না। আমাকে তুমি ক্ষমা ক’রো। আমি মরে গেলে তোমার যা খুশি তাই ক’রো

এরপর আর এ নিয়ে কোনো কথা চলে না। বই আর পদক বিক্রির কথা শুনতেই পারেন না আদিত্য। এগুলো তো ওর প্রাণপাখি। প্রাণপাখি ছাড়া তিনি  বাঁচবে কী করে!

কিন্তু হঠাৎ আদিত্যর শরীরের অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকল সুগার  লেভেলটা কিছুতেই কমছে না। প্রতিদিন ডায়ালোসিস করতে হচ্ছে। তাঁকে  হসপিটালাইজ করা হলো। বলতে গেলে প্রায় কোমায় চলে গেছেন। ডাক্তাররাও হতাশ। কখন কী হয় বলা যায় না।
এত বড় একজন কবি, চারদিকে এত নাম-ডাক। কিন্তু হাসপাতালের দিনগুলোতে কেউ তাঁর একটা খবরও নিলো না। প্রতিদিন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা   খরচ হচ্ছে। সে টাকার জোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাবরিনা সুলতানাকে। হাত পাততে পাতকে এখন আর হাত পাতারও লোক নেই।

অগত্যা বাধ্য হয়েই স্বামীর সোনার পদকগুলো বেচার জন্য বাজারের জুয়েলারিতে নিয়ে গেলেন সাবরিনা সুলতানা। সবার আগে আদিত্যকে তো বাঁচাতে হবে! মানুষই যদি না বাঁচল তাহলে পদক দিয়ে কী হবে? স্বণর্কার দিলীপ বর্মনের হাতে মেডেলগুলো দিলেন। অনেক দিনের চেনা মানুষ। ভালো  করে উল্টেপাল্টে পদকগুলো দেখলেন দিলীপ বর্মণ।  
ম্যাডাম, এগুলোতে সোনা আছে বলে তো মনে হচ্ছে না। বললেন দিলীপ
বলেন কী দাদা! সব তো সোনার পদক। কষ্টিপাথর দিয়ে আর একটু ভালো করে যদি যাচাই করে দ্যাখেন!
বয়েস তো আর কম হলো না, ম্যাডাম। এখন আমার আর সব কিছুতে কষ্টিপাথর লাগে না। চোখটাই কষ্টিপাথর হয়ে গেছে। তবু বলছেন যখন, দেখি।

কষ্টিপাথরে ঘষে যাচাই করার পরও একই সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন দিলীপ
না ম্যাডাম, এতে কোনো গোল্ড নেই।
তাহলে এগুলো গোল্ড মেডেল নয়?
না, এগুলো সোনার পদক নয়; এগুলোকে বলে গোল্ডেন মেডেল বা সোনালি  পদক।
এরপর আর কোনো কথা বলতে পারলেন না সাবরিনা সুলতানা। তাঁর চোখের সামনে পুরো পৃথিবীটা দুলতে থাকলো।   
  

       

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন