কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৫

অমিতাভ প্রামাণিক

চারানা আটানা


২৩) নয়, নয়, নয় এ মধুর খেলা




চারিদিকে যা সব দেখছেন, মাঝে মাঝে বীতশ্রদ্ধ হয়ে বলে উঠতে ইচ্ছে করে না – অনেক হয়েছে, আর নয়! 

নয় শব্দটা নঞর্থক হলেও গণিতের হিসাবে ওটাই সবচেয়ে বড় ডিজিট বা একাঙ্ক সংখ্যা। কী বলা যায় একে, লৌহিক? ও হো, যারা আমার এই পাতি ঠাট্টাটা বুঝতে পারলেন না, তাঁদের জ্ঞাতার্থে বলি, লৌহিক মানে আমি যা বলতে চাইছি, সেটা হচ্ছে  আয়রনি। আয়রন থেলে আয়রনি হলে লৌহ থেকে লৌহিক। বাজে পান হলো? লোহা  একটা শক্তপোক্ত কঠিন ধাতু, তাকে না গলিয়ে পান করা তো সম্ভব না। কিন্তু লোহাকে গলাতে দেখেছেন কেউ? আয়রন ও স্টীল ফ্যাক্টরীতে লোহা গলন্ত অবস্থাতেই বানানো হয়, কিন্তু সেখানে গিয়ে আর কে দেখতে গেছে গলানো লোহা? গরম করলে কঠিন তরলে পরিণত হয়, সেটা সবাই জানে, কিন্তু যতটা গরম আমরা সাধারণভাবে দেখে থাকি, তাতে লোহা গরম করলে তা কালো ধাতু থেকে লাল রঙের এক গনগনে আলো বিচ্ছুরণকারী জিনিসে বদলে যায়। স্যাঁকরার ঠুকঠাক, কামারের এক ঘা কামার বা কর্মকার সেই ঘা মারে ওই গনগনে লাল লোহায়, পিটিয়ে বানায় কাজের জিনিসপত্র, তাকে আবার লোহায় পান দেওয়াও বলে!



দেখুন, নয়-এর কথা বলতে গিয়ে কোত্থেকে কামার এসে গেল! পান না ছাই, একেই বলে ধান ভানতে শিবের গীত। তবে হ্যাঁ, নয় সংখ্যাটার সাথে কামারের যোগ একেবারে যে নেই, তা নয়। নবশাখ বা নবশায়ক বলে একটা কথা আছে হিন্দুদের  জাতপাত-অধ্যুষিত সিস্টেমে – পরাশরসংহিতায় যাদের সংকীর্ণ জাতি বলে উল্লেখ করা আছে – সেই নটা শাখা হলো তিলি, তাঁতী, মালাকার, নাপিত, বারুই, সদ্‌গোপ, ময়রা, কুমোর এবং হ্যাঁ, কামার। যথাক্রমে তেল, কাপড়, ফুল, চুল, পান, দুধ, মিষ্টি, মৃৎপাত্র আর ধাতব বস্তু নিয়ে এদের কারবার। সে এক সময় ছিল – বুদ্ধযুগে – যখন এদের সবাইকে শিল্পী বলে গণ্য করা হতো, সমাজে এদের কদর ছিল বেশ।  ব্যাটা মনু এসে সব ধ্যানধারণাই বদলে দিলে, মনুসংহিতা বা ব্রাহ্মণ্যযুগে অং বং চং সংস্কৃত মন্ত্রজানা বামুন হয়ে গেল সমাজের মাথা আর এই শিল্পীরা হয়ে গেল নিচুজাতের শুদ্দুর। তবে ধীরে হলেও দিন বদলাচ্ছে। তাঁতী আস্তে আস্তে হচ্ছে ফ্যাশন  ডিজাইনার, নাপিত হেয়ার স্টাইলিস্ট, কুমোর হচ্ছে পটার, হ্যান্ডিক্র্যাফট আর্টিস্ট, ইন্টিরিয়ার ডেকরেটারবরং বামুনদেরই যজমানি খুঁজতে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াতে হয় এখন এ গ্রামে সে গ্রামে, নয়?

নয় নিয়েই কথা হচ্ছিল। এ তো সবে শুরু। নয়ের আরো অনেক গুণ। আমরা যে একে চন্দ্র, দুয়ে পক্ষ পড়েছি ধারাপাতে, তাতে নয়ে নবগ্রহ। বিজ্ঞানের বইতে ছিল সেই নটা গ্রহ হলো সূর্যের থেকে দূরত্ব অনুযায়ী যথাক্রমে বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল,  বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন ও প্লুটো। প্লুটোকে হঠাৎ দুদুভাতু বানিয়ে এই লিস্ট থেকে বিদেয় করে দেওয়া হলোতাহলে ধারাপাতে নয়ে কী হবে এখন, সে  কথা কে ভাববে? কেলোর কীর্তি না? এই তো কদিন আগে প্লুটোর ছবি তুলে পাঠালো নাসার নিউ হরাইজনের ক্যামেরা, দিব্যি গোলগাল চেহারা, ওকে গ্রহ না মানার কী আছে? যাইহোক, শাস্ত্রমতে কিন্তু এই নটা গ্রহ হলো সপ্তাহের সাতটা  দিনের নামে, অর্থাৎ রবি (মানে সূর্য), সোম (মানে চাঁদ), মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি আর তারসাথে রাহু আর কেতু। শেষ দুটো সূর্য আর চাঁদকে মাঝে মাঝে রেগে গিয়ে খপাত করে খেয়ে ফেলে তো, তাই ওদের গেরোন লাগে! আমাদের প্রাচীনতম জাতীয় রাজনৈতিক দলে ধূমকেতুর মতো ‘ল-ওয়ালা রাহু’র উদয়েই গ্রহণ  লেগেছে কিনা, সেটাও কিন্তু রিসার্চের বিষয়।

এসব পড়তে ভীষণ বোরিং লাগছে? রসকষহীন বলে? দাঁড়াও, দাঁড়াও, রসের কথা  বলতে গেলেও বলতে হয়, কাব্যের অলঙ্কারশাস্ত্রে রসের সংখ্যাও সেই নটাইএরা হলো আদি বা শৃঙ্গার রস, হাস্যরস, করুণরস, রৌদ্ররস, বীররস, ভয়ানকরস, বীভৎসরস, অদ্ভুতরস ও শান্তরস। এটা জেনে যারা ভাবছেন, ও মা, তাই নাকি, এটা তো জানতুম না, কাব্য না পড়েও তাদের মধ্যে যে রসের সঞ্চার হচ্ছে, সেটাকে অদ্ভুতরস বললে কেউ আপত্তি করবে? আদিরসের খনি ছিল বটতলার হলুদ মলাটের চটি বই, তা বোধহয় উঠে গেছে ইন্টারনেটের কল্যাণে। যুগ এগিয়ে গেছে, এখন যদি কারো গোয়ালঘর থেকে সেই চটি বই উদ্ধার হয়ও, তা পড়ে আদিরসের বদলে হাস্যরসেরই যে প্রাবল্য ঘটবে, তা না বলে দিলেও চলে। আজকাল অবশ্য একটা নতুন রসের বই বাজারে খুব কাটছে, যা এগুলোর কোনোটাই নয়। তার নাম কেচ্ছারস।  কাব্য নয় অবিশ্যি, নিছক গদ্যে লেখানামী মহাপুরুষদের ধরে ধরে মুখরোচক বেডরুম স্টোরি নামাতে পারলেই বেস্টসেলার।



ও হ্যাঁ, নবরত্নের কথা বলতে দেরি হয়ে গেল। অবশ্য এ নিয়ে আমি আর কী বলব! বিক্রমাদিত্যের রাজসভায় শ্রেষ্ঠ রত্নটি ছিলেন কবি কালিদাস। গাছের যে ডালে বসেছিলেন, সেই ডালটাই কাটছিলেন। ভাগ্যিস পুরোটা কাটতে পারেন নি, বা ডালটা ভেঙে পড়েনি, তাহলে মেঘদূতম্‌-রঘুবংশম্‌ সৃষ্টি হতো না, মন্দাক্রান্তা তৈরি হতে সময় লেগে যেত। কালিদাস ছাড়াও সেই সভায় ছিলেন চিকিৎসক ধন্বন্তরী, পৃথিবীর প্রথম শল্যবিদ, আয়ুর্বেদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। হরিদ্রার বীজাণু নিধন ক্ষমতা লবণের সংরক্ষক ধর্ম (প্রিজার্ভেটিভ) আবিষ্কার করে অত্যন্ত খ্যাতি লাভ করেছিলেন উনি। ছিলেন ভূতত্ত্ববিদ শঙ্কু এবং কবি ব্যাকরণবিদ অমর সিংহ। সঙ্গে জ্যোতিষ শাস্ত্রের সুপণ্ডিত ক্ষপণক, স্থাপত্যশাস্ত্রবিদ ঘটকর্পর, রসায়ন তন্ত্রশাস্ত্রে জ্ঞানী বেতাল ভট্ট। এঁদের সঙ্গে জ্যোতির্বিদ বরাহমিহির আর কবি বররুচিকে নিয়ে বিক্রমাদিত্যের নবরত্ন। এই শঙ্কুর নামের আগেই প্রফেসর বানিয়ে তাকে নিয়ে গল্প ফেঁদেছিলেন কিনা সত্যজিৎ, সে কথা উনি লিপিবদ্ধ করে যান নি। বররুচির রুচি কতটা বড় ছিল বা বেতালভট্টের সাথে বিক্রম অউর বেতাল সিরিয়ালের কোনো সম্বন্ধ আছে কিনা,  ঘটকর্পরের ঘটে যে মগজ ছিল তা কর্পূরের মতো উবে যেত কিনা, আমার ঠিক জানা নেই।  

তবে এই যে নটা মনুষ্যরত্ন, তাতেই নবরত্ন কথাটা সীমাবদ্ধ নয়। নটা রত্নও, মানে জুয়েলারি বানানোর জুয়েলও সত্যি সত্যিই আছে। তাদের নাম হলো মুক্তো, মাণিক  (এই রে, এটা আবার সত্যজিতের ডাকনাম), বৈদূর্য, গোমেদ, বজ্র, বিদ্রুম, পদ্মরাগ, মরকত এবং নীলকান্ত। বৈদূর্য কথাটার সাথে নিশ্চয় মহাভারতের বিদুর-এর যোগ আছে, অভিধানে খুঁজে পেলে আমাকে জানাবেন তো! আর আমি বুঝতে পারছি না একটা রত্নের সাথে গোমাংসের (গো-মেদ) কী সম্পর্ক! হিন্দুরা জেনে শুনেই পঞ্চগব্য গ্রহণের সাথে সাথে গোমেদও ধারণ করে বিনা বাক্যব্যয়ে এই বজ্র মানে বাজ নয়, এই বিদ্রুমও নয় বিশেষ কোনো দ্রুম বা মহীরুহ। পদ্মরাগ ধারণ করলে হয়তো  পদ্মের প্রতীকধারী বিজেপির প্রতি অনুরাগ বাড়ে, পরীক্ষা করে দেখুন। আর সেই যে মর্কট শিয়ালটা নীলের গামলায় পড়ে গিয়ে নীলবর্ণ হয়ে গেল, তা থেকেই কি মরকত আর নীলকান্তমণি?

মা দুর্গাকে নবদুর্গা রূপে অনেক জায়গাতেই পুজো করা হয়। জানেন কি, কী সেই রূপগুলি? সেই নটা রূপ হলো পার্বতী বা শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘন্টা, কুষ্মাণ্ডা,   স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রি, মহাগৌরী ও সিদ্ধিদা। পার্বতীকে তো সব্বাই জানে হিমালয়কন্যা হিসাবে, ব্রহ্মচারিণী মানে বোঝাও কষ্টকর নয়, কিন্তু কুষ্মাণ্ডা কথাটার মধ্যে যে কুমড়ো আর ডিম লুকিয়ে আছে, সেটা চালকুমড়ো না মিষ্টিকুমড়ো, তা কে জানে! স্কন্দমাতা কি গুপ্তযুগের স্কন্দগুপ্তের মা, নাকি কন্ধকাটা কুষাণরাজ কণিষ্কের কেউ? সিদ্ধিদাতা তো গণেশ, তার মা সিদ্ধিদা! বলা যায় না, হয়তো ভাংদা-ও ছিল  কোনো এক সময়, যা থেকে পাঞ্জাবী ভাংড়া নাচ এসেছে! ইয়ার্কি ছাড়াও মা দুর্গা  কন্যারূপে নবনামিকা, তার ন’টা নাম হচ্ছে কুমারিকা, ত্রিমূর্তি, কল্যাণী, রোহিণী, কালী, চন্ডিকা, শান্তবী, দুর্গা ও ভদ্রা। সরস্বতী পুজোর সময় ভদ্রকালৈ নমো নিত্যং বলে যখন আমরা পুষ্পাঞ্জলি দিই, তখন ভদ্রা আর কালী নামের দুটো দুর্গা রূপকেও অটোমেটিক্যালি পুজো করে ফেলি আমরা। কালী বলতে শক্তি বোঝায়, আর নবশক্তি বলেও একটা শব্দ আছে, যা বোঝায় বিমলা, উৎকর্ষণী, জ্ঞানা, যোগা, ক্রিয়া, প্রহরী, সত্যা, ঈশানা ও অনুগ্রা – এই ন’টা ঐশী শক্তিকে।



দুর্গা প্রসঙ্গে নয়-সংক্রান্ত আর যে ব্যাপারটা প্রাসঙ্গিক, তা হচ্ছে মহানবমী। মহাষ্টমী-মহানবমীর সন্ধিক্ষণ হিন্দুদের কাছে অতিশয় শুভক্ষণ, সে সময় সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই মহানবমী হচ্ছে কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী। এর আগের নবমী অর্থাৎ আশ্বিনের কৃষ্ণা নবমীকে বলা হয় বোধন নবমী। পূর্ণিমার মতো নবমীর মাহাত্ম্য না  থাকলেও এর গুরুত্ব কম নয়, আর সাধারণভাবে শুক্লা নবমীদের গুরুত্বই বেশি। চৈত্রী শুক্লা নবমী হচ্ছে রামনবমী, বৈশাখী শুক্লা নবমী হচ্ছে সীতানবমী, ভাদ্রী শুক্লা নবমীকে বলা হয় তালনবমী, আর মাঘী শুক্লা নবমী মহানন্দা।

দুর্গা পুজোর সময় গণেশের বউ হিসেবে শ্রীমতী কলাও পূজিতা হন। তাঁর আর এক নাম নবপত্রিকা। প্যাণ্ডেলে শুধু পাতা ও ধড়ওয়ালা কাটা কলাগাছ চোখে পড়ে, আসলে থাকা উচিত কলা, কচু, ধান, হলুদ, ডালিম, বেল, অশোক, জয়ন্তী ও মানকচু এদের সবগুলোর পাতা দিয়ে তৈরি নারীমূর্তি। কচু ফচু বাংলাদেশের যত্রতত্র ছড়িয়ে  আছে, জয়ন্তীটা যে কী গাছ, জানি না। দেখলাম, জয়ন্তী নানা ভেষজ গুণ সম্পন্ন একটা গাছ, সংস্কৃতে এর নাম জয়ন্তিকা এর বৈজ্ঞানিক নাম Sesbaniasesban; চীনারা এ থেকেই schezwan sauce বানায় কিনা, ড্রাগন জানে!

নয় নিয়ে সাতটা জিনিসের নটা করে সেট বলা হলোআট নম্বর হলো নবদ্বার।  আমাদের শরীরে নটা দরজা বা ছিদ্রপথ, সামলে সুমলে রাখুন। এর মধ্যে দুটো চোখ, দুটো কান, দুটো নাসারন্ধ্র, বাকি তিনটে মুখ, পায়ু ও উপস্থ বা জননছিদ্র। লালন ফকিরের গান মনে আছে তো? সেই যে – আট কুঠুরী নয় দরজা আঁটা, মধ্যে মধ্যে ঝরকা কাটা / তার ওপরে সদর কোঠা, আয়নামহল তায় / খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কমনে আসে যায়। এই নয় দরজা হচ্ছে ঐ নবদ্বার। এই খাঁচা হচ্ছে আমাদের শরীর। এই অচিন পাখি হচ্ছে – যা ব্বাবা, আমি সব বলে দেব নাকি, বুঝে নিন!  

নয় নিয়ে নয় নম্বর সেট এখানেই দাঁড়ি টানব, বাংলা বা হিন্দী সিরিয়ালের মতো  টেনে লম্বা করব না হলো নবলক্ষণ। ব্রাহ্মণ নিয়ে কিঞ্চিৎ শ্লেষমূলক বাক্য প্রয়োগ  করেছিলাম এই লেখার শুরুতে, তাই বলে তো এমন নয় যে বামুনের গুণ নেই। গুণ না থাকলে কেউ ওপরে উঠতে পারে না। নবলক্ষণ হচ্ছে ব্রাহ্মণ বা কুলীনের ন’টা অবশ্যম্ভাবী গুণ বা লক্ষণ, যা প্রাপ্ত হলেই একজন ব্রাহ্মণত্ব লাভ করেএর লিস্টিতে আছে আচার, বিনয়, বিদ্যা, প্রতিষ্ঠা, তীর্থদর্শন, নিষ্ঠা, বৃত্তি, তপ ও দান। এদের  মতো ইম্পর্ট্যান্ট না হলেও আছে নববিধা ভক্তি, যার অর্থ হচ্ছে ঈশ্বরের শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ, পাদসেবন, অর্চন, বন্দন, দাস্য, সখ্য ও আত্মনিবেদন। আপনাদের যাদের নামের শেষে পাধ্যায় বা র্জী আছে, মিলিয়ে নিন এর কটা লক্ষণ আপনার মধ্যে বর্তমান। শর্ট পড়লে প্র্যাকটিশ করুন। চেষ্টা করলে কী না হয়!

নয় নং একাশিটা জিনিসের নাম বললাম। মুখস্থ করে রাখুন। কখন কী কাজে লেগে যায়! তখন কিন্তু বলবেন না, যে বলিনি!

পুনশ্চ : এক – রসায়নের স্টুডেন্ট হয়ে নবধাতুর কথা না বললে আমার পাপ হবে, তাই বলে দিই এই নবধাতু হচ্ছে স্বর্ণ, রৌপ্য, পিত্তল, সীসক, তাম্র, রঙ্গ, লৌহ, কাংস্য ও কান্তলৌহ। রঙ্গ হচ্ছে টিন, যাকে রাং বলা হয় অনেক সময়। কান্তলৌহ বলতে বোঝায় ইস্পাত, যা পিত্তল বা পিতল আর কাংস্য বা কাঁসার মতো মিশ্রধাতু বা অ্যালয়বাকিগুলো খাঁটি ধাতু।  

দুই – ফুচকার লাইনে দাঁড়ালে শেষে শুকনো একটা ফাউ মেলে, যা না মিললে ফুচকা খাওয়াই বৃথা। তদনুযায়ী বলে রাখি আমাদের এই ভূখন্ড, যাকে পুরাণমতে জম্বুদ্বীপ বলা হয়, তার ন’টা খন্ড। তাদের নাম ভারত, কিম্পুরুষ, হরি, হিরণ্ময়, রুমণ্বক, কুরু, ইলাবৃত, ভদ্রাশ্ব ও কেতুমাল। প্রতিটি খন্ডকে এক একটি বর্ষ বলা হয়, যা থেকে একটা ভূখন্ডের নাম ভারতবর্ষ। এই ভারতবর্ষেরও ন’টা খন্ড, যাদের নাম ইন্দ্রদ্বীপ, কশেরুমান, তাম্রবর্ণ, গভস্তিমান, নাগদ্বীপ, কটাহ, সিংহল, বারুণ ও অয়ম্‌।

তিন – অনেক ফাউ বিতরণ করলাম, এবার মানে মানে প্রস্থান করি। বাই দ্য ওয়ে, নবপ্রস্থান বলেও একটা কথা আছে বৌদ্ধ শাস্ত্রমতে, যার ন’খানা সিদ্ধান্তসেই সিদ্ধান্তগুলি হচ্ছে (১) বিশ্ব অনাদি অতএব ঈশ্বর বলে কিছু নেই; (২) জগৎ অসৎ ও অসার; (৩) অহং তত্ত্ব; (৪) জন্মজন্মান্তর ও পরলোক সত্য; (৫) বুদ্ধই তত্ত্বলাভের উপায়; (৬) নির্বাণই পরম তত্ত্ব; (৭) বৌদ্ধদর্শনই দর্শন; (৮) বেদ মানুষের লেখা; (৯) দয়া ও সদাচারই বৌদ্ধজীবন।

অনেক হয়েছে। কেউ ঢিল মারার আগেই মানে মানে কেটে পড়ি। ওঁ বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি!  




6 কমেন্টস্:

  1. অহো! নয় নিয়ে এত কিছু জানা গেল আপনার লেখায়, এর ৯%-ও মনে রাখতে পারলে হয়। চারানা-আটানা এগিয়ে চলুক।

    উত্তরমুছুন
  2. স্বাগতম জানাচ্ছি, বিষয়টি খুব ভালো লাগলো ।

    উত্তরমুছুন
  3. খুব ভালো লাগলো এই নবজ্ঞান আর নববিদ্যা, কিন্তু ভারতীয় দর্শনের নয় শাখার কথা বলেছেন কি? চোখে অন্ততঃ পড়েনি! আস্তিক ছয় আর নাস্তিক তিন! ঈশ্বর মানার অর্থে- ন্যায়, যোগ, সাংখ্য, বৈশেষিক, বেদান্ত, মীমাংসা+ বৌদ্ধ, জৈন চার্বাক =৯। তবে যেহেতু আস্তিক শব্দের আরেকটা অর্থ বেদকে প্রামাণ্য বলে মানা বা না মানা তার ফলে সাংখ্য মাঝে মাঝে ইদিকে উদিকে যাবে।

    উত্তরমুছুন
  4. এছাড়া গ্রিক পুরাণে নয় মিউজের কথা আছে: ক্লিও- ইতিহাসের মিউজ; এ/ইরাটো- প্রেমের অথবা কামকবিতার, কাব্যগীতি, আর বিয়েগানের মিউজ; ইউটারপি- সঙ্গীত আর গীতিকবিতার মিউজ; মেল্পমেনে-বিয়োগান্ত রচনার মিউজ; টারপ্সিকোরে- কোরাস গানের আর নাচের মিউজ; থালিয়া- মিলনান্ত রচনার আর রাখালিয়া কবিতার মিউজ; আর ইউর্যাানিয়া- জ্যোতির্বিদ্যার মিউজ।

    উত্তরমুছুন
  5. এছাড়াও শ্রীমদ্ভাগবত এবং বিষ্ণুপুরাণে নয় রকমের ভক্তির কথা আছে— শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ, পদসেবন, অর্চনা, দাস্য, সখ্য, ভাব, আত্মনিবেদন। কিন্তু, হা হা, রাগ করবেন না। আমি সুরজিৎ চ্যাটার্জির বন্ধু আর বহতার বাবা। দারুণ লেগেছে, লাগে, আপনার লেখা। আম্মো লিখি একটু একটু এখেনে! নয়ের কথা অনন্ত!

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. আরে, এখানে কমেন্টও আসে নাকি! খেয়াল করিনি তো। হঠাৎই চোখে পড়ল। বহতার সঙ্গে ব্যাঙ্গালোরে আলাপ (মানে বার দুয়েক সাক্ষাৎ) হয়েছে। সুরজিৎদা অবশ্য ছাব্বিশ বছরের বন্ধু, আমরা একই ল্যাবে পি এইচ ডি করেছি।
      আপনার কমেন্ট পেয়ে ভীষণ ভালো লাগলো।

      মুছুন