কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৫

অমিতাভ প্রামাণিক

চারানা আটানা




২৩) প্যারোডি – শক্তিরূপেণ সংস্থিতা


(রঙ্গভূমি বঙ্গভূমে আসতে চলেছে আরো এক বার্ষিক মহোৎসব। এদিকে প্রকৃতির ও মহাপ্রকৃতির চ্যালাদের অত্যাচারে দুর্বিষহ জীবনে শান্তি নেই। সেই সর্বসাধারণেরই মুখ চেয়ে কিছু কবিতা আর গানে সাজিয়ে দেওয়া গেল এই কথিকাটি। এই গানগুলির সুর দেওয়ার কষ্ট আপনাদের করতে হবে না, আগেই কেউ করে রেখেছেন। এই কবিতাগুলোর মধ্যে চেনা চেনা গন্ধ পেলে জানবেন, হ্যাঁ, আপনি যেটা জানেন, ওটাই কবিতা, এগুলো তাদের নষ্টরূপ। এসব জেনেও কেউ স্টেজে এর অভিনয় করতে চাইলে, নিজ দায়িত্বে করবেন।)

ভাদ্রের অসহ গরমে পেকে উঠেছে তাল। ধরণীর বহিরাকাশে তেজোদীপ্ত রৌদ্রকণা। বাঙালির অন্তরমহলে দরদর করে বইছে ঘামের স্রোতস্বিনী। পথে প্রান্তরে উদ্‌ভ্রান্ত সারমেয়গণ আপন লীলা প্রদর্শনকরতঃ স্বীয় প্রজাতির ভোটার বৃদ্ধির সংকল্পে রত। কিছুদিন আগেই ভয়ঙ্কর বন্যায় ভেসে গেছে বহু গ্রাম, জলমগ্ন হয়েছে নগরীর রাজপথ। বাইশে শ্রাবণে বাঙালির অশ্রুধারাপাতে এসে গেছে আর এক রাউন্ড বন্যা। পনেরোই অগাস্ট জনগণকে প্রজাতন্ত্র দিবসের অভিনন্দন জানিয়েছেন স্বনামধন্য নেতৃবৃন্দবিগলিতচিত্ত বাঙালি রমণীকুল লাইন লাগিয়েছে শপিং মলে পুজোর বাজারের জন্যে – আপ টু সেভেন্টি পার্সেন্ট ছাড়ের বিজ্ঞাপনে মোহিতা হয়ে। এই আনন্দঘন পরিবেশেও  সরকারী কর্মচারী পতিদেবের পকেট থেকে নিজের প্রাপ্য টাকা বুঝে নিতে গলদ্‌ঘর্ম এক বঙ্গললনা –

শপিং যদি মধুর এমন
থোক টাকা দাও, অল্প না।
রাগিও না, আমায় রাগিও না।।
শপিং যদি মধুর এমন ...

রাগ ও রণের আজ তো বে’–
কুছ না ছাড়লে বাঁশ তবে।
রুমের দোরে, রুমের দোরে দাঁড়িয়ে থাকো
এমন নির্বিকল্প না!
রাগিও না, রাগিও না,
রাগিও না, আমায় রাগিও না।।
শপিং যদি মধুর এমন ...

যে চাল মিলতো আট টাকায়,
দাম শুনে আজ গাঁট্টা খাই।
ড্রেস তো তবুও কিনতেই হবে
কিনবো তো পাঁচটাই, সোনা।
রাগিও না, রাগিও না।
রাগিও না, আমায় রাগিও না।।
শপিং যদি মধুর এমন ...

সহধর্মিণীর এই রণরঙ্গিনী মূর্তি অবলোকন করে নরপুঙ্গব প্রমাদ গণলেন। এই রূপ তার অতি পরিচিত। এ তো মা-মাটি-মানুষের নাম নিয়ে টুপি পরানোর জনপ্রতিনিধির রূপ। এই রূপ ধারণ করে পুরাকালে জগজ্জননী মহামায়া অবতীর্ণ হয়েছিলেন নরলোকে, অশুভের বিরুদ্ধে শুভের জয় নিশ্চিত করতে। আবার সেই একই রূপ ধরে কলিযুগে এসেছেন তিনি ইতিহাসের চাকা উলটোপথে ঘুরিয়ে দিতে। যুগে যুগে তার এই আবির্ভাব – সম্ভবামি ইয়ুগে ইয়ুগে। ঈশ্বরের এ কী বিচিত্র লীলা, সংসারে সংসারে তারই সন্তপ্ত প্রতিধ্বনি –

ভগবান, তুমি যুগে যুগে কারে পাঠায়েছ বারে বারে
ঘাস থেকে বাঁশঝাড়ে।
তারা বলে গেল – যা বলছি, কর। আমি হাসি, তুমি হাসো –
কথা না শুনলে পেছনে লম্বা বাঁশও!
ধরণীও তারা, ঘরণীও তারা, তবুও পায়ুর দ্বারে
লাথ খেয়ে আমি ছিটকে পড়েছি দয়াহীন সংসারে।

আমি-যে দেখেছি অনশনরতা কপট মঞ্চ পিছে
কী চকলেট সাঁটিছে!
আমি যে দেখেছি সাধারণ লোক ছাত্রছাত্রী আদি
কোশ্চেন করে হয়ে গেছে মাওবাদী!
আমি যে দেখিনু বড়ো বৌ মেজো বৌ যারা দেয় ঘুঁটে
তাদের জমানো তিল তিল টাকা উড়িয়ে নিয়েছে লুটে

কণ্ঠ আমার শুষ্ক আজিকে, স্কচ-হুইস্কি ছাড়া,
ইন্টারোগেট ঝাড়া
দু’ঘন্টা করে ওয়ারেন্টখানা ঝুলাইয়া দিলো গলে,
তাই তো তোমায় শুধাই অশ্রুজলে–
যাহারা তোমার খাইয়াছে টাকা, পরাইছে মাথে টুপি,
তুমি কি তাদের সিবিআই ডেকে জেলে ভরো চুপিচুপি?



হায় সংসার! নিষ্ঠুর কুরুক্ষত্রসম এই অসমসংগ্রামে পুরুষবাহিনীর পরাজয় সুনিশ্চিত। দৈত্যদলনী যেখানে সংহারিণী বেশে ন’দিদি সেজে উপস্থিতা, সেখানে মহাপরিক্রমশালী মহিষাসুরই হোক বা সাধারণ ভদ্রলোক, কীই বা করবে? দশপ্রহরণধারিণীর দশহস্তে শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম-ত্রিশূলের সঙ্গে আছে অমিত ব্রহ্মাস্ত্র বাক্যবাণ। সে বাক্যের অর্থ অনুধাব করা মনুষ্য প্রজাতির কম্মো নয়। গৃহসন্নিহিত নবান্ন থেকে সুদূর অক্সফোর্ড,  কেহই তার অভ্যন্তরে দন্তস্ফুট করতে পারে নি। সে রকম বুদ্ধিদীপ্ত প্রাণীই জন্মায় নি এখনো নরলোকে –

ন’দির লিখন বুঝবে তুমি এমন বুদ্ধিমান
তুমি কি এমনি বুদ্ধিমান?
আমাদের পব্লেম সব ন’দির ভাষায় এমন অভিধান
সে তোরা বোঝার করিস ভান?
ন’দির লিখন বুঝবে তুমি ...

যাই হও বাঙাল ঘটি
মানবে না হাওয়াই চটি?
এত বল কই তোমাদের
করো তা সন্ধান –
ন’দির লিখন বুঝবে তুমি ...

পোতিবাদ যতই করো
হবে না সে নড়চড়ও,
পারবে না ভাঙতে ঘর ও
ন’দির আলিশান।
ক্রস করে গেলেই ফিয়ার
হবে তুমি মাওবাদী, আর
জেলে বসে শুনবে ইয়ার
ক্যাঁতাঞ্জলির গান।
ন’দির লিখন বুঝবে তুমি ...

চ্যালাচামুন্ডা-মদালসা ন’দিদি সর্বশক্তিমানা। প্রবল তার দাপট। ইলেকশন নামক কুরুক্ষেত্রে একে একে ধরাশায়ী করেছেন একদা পরাক্রমশালী প্রতিপক্ষকে। এখন তারা হীনবল কেঁচোর ন্যায় মৃত্তিকার অভ্যন্তরে লুক্কায়িত। তাদের গলা দিয়ে কেবলমাত্র চিঁ চিঁ আওয়াজ বাহির হতে থাকে, দু একটি ফিশফ্রাই খাওয়ালেই পুনরায় চুপ মেরে  যায়। পরিবর্তে সিংহনাদের ঠেকা নিয়েছে দিল্লীশ্বরের চ্যালাবৃন্দ। তারা কেন্দ্র থেকে ব্যাসার্ধ মেপে ভেবে নিয়েছিল ন’দিদির গদিতে মিসাইল ক্ষেপণাস্ত্র প্রয়োগ করে সবংশে নিহত করবে। হায়, নির্বোধ! সায়েন্টিফিক রিগিং শব্দাবলী কার আবিষ্কার তা না জেনেই এত আস্ফালন!

বাংলার ভোট আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর ঠোঁট
চুমিতে চাই না আর – রাত থাকতে জেগে উঠে ভোট দেবো বলে
গিয়ে দেখি বুথের ভেতরে বসে সাঁটাচ্ছে বাটোরা ও ছোলে
সবাই একই পার্টি – চারিদিকে চেয়ে দেখি একই গরু-গোঠ

মা – মাটি – মানুষের – ও ষাঁড়ের – রূপধারী পোষা হনুমান
তাদের মুখের ভাষা – ব্যবহারে – কাহার এক ছায়া পড়িয়াছে;
কালিঘাটে ডিঙা বেয়ে না জানি সে কবে যেন দিল্লীর গাছে
উঠে যাবে বলে আশা করেছিল, সাথে নিয়ে শাহরুখ খান

নেচেছিল; চ্যালারাও একদিন ময়দানে অনশনে বসে –
দিবস শেষের সূর্য যখন অস্ত গেছে ভিক্‌টোরিয়ায় –
ঘাসের গদিতে বসে খুব মাল টেনেছিল সারদার টাকায়,
স্টারের নরম গাল টিপেছিল – মিত্তির, বোস আর ঘোষে

থ্রী ইডিয়েটসের মতো যা যা প্ল্যান করেছিল গোপন সভায়,
বাংলার নদী-মাঠ তাই শুনে কেঁপেছিল, এসে গেল তাই সি বি আই।

কিন্তু এসবসিবিয়াই-ফাই সকলই লোক-দেখানো ধাঁধা, ভোজবাজি। অকস্মাৎ তার উদয়, তদপেক্ষা দ্রুত তার অস্ত। তদন্তের আদি আছে, অন্ত নাইজন্মজন্মান্তর ধরে চলতে থাকে ঐশ্বরিক লীলা। পুরাকালে যা ঘটতো মথুরায়, বৃন্দাবনে, এখন তা লোকসভায়, বিধানসভায়, ভোটের বাক্সে। বহুবর্ণরঞ্জিত তার প্রস্তুতি, বহুতর ঢক্কানিনাদে সভাস্থল গরম করে তার পরিচালনা। যেই দেখে, সেই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, তার চক্ষুর পলক পড়ে না। কোথায় লাগে বিশ্বকাপ, কোথায় লাগে অলিম্পিক, এই ভোটরঙ্গই দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ –

এ শো হে সই আজ, এ শো, এ শো।
তাপস মাল দাদা
-ভায়ে হুড়মুড় স্বরে যায় শাসায়ে
বৎস, এ গোবর
-চোনা দূর হয়ে যাক যাক যাক।।

যাক কু
-যাপন ভীতি, যাক শুতে চাওয়ার রীতি,
বিশ্রী ভাইপো দন্ত ক্যালাক, যাক যাক।।

মুছে যাক খুঁতও, সূঁচে দাও সুতো,
ভগ্নীর মানে সুরক্ষা দ্রুত।
বসের হাওয়াই চটি, টুকরো করো দিয়ে বঁটি।
হানো হানো, হানো সব ছবি
-আঁকা কাক।
সে তার পুচ্ছ দোলাক যাক উড়ে যাক যাক যাক।।



এই শোয়ের প্রস্তুতিও ব্যাপক। চ্যালাচামুন্ডাগণ ঈষৎ তমোগুণসম্পন্ন, তাদের রিপুসংহারক আরক নিত্য জোগান না দিলে তারা ঠিক বাধ্য থাকে না। ফ্রাইডে ড্রাইডে তারা কিছুই মানতে চায় না। অনশনে বসেও তারা লিকুইডের দাবি করে, সঙ্গে উপযুক্ত চাট। রাজ্যে তেলেভাজা শিল্পের প্রবল জোয়ার, চাটের অসুবিধা নাই, পাটশিল্পের বিলুপ্তির পর অবশ্য চট মেলা মুশকিল হয়ে গেছে। ময়দানের পুষ্পহীন তৃণশয্যায় ভোটের পূর্বাহ্নে গুলতানি সহযোগে চলতে থাকে নরক গুলজার –

একখানা পেগ ভেসে এলো সে রাতে
একপ্লেট আলু
-চাট কে দিয়ে গেলো
একা একা বসে ছিনু গেলাস হাতে
কে মাখিবে তেল, ভাই কড়িটা ফেলো।

তেলেভাজা খাওয়া জিভ মাল যা টানে
!
গরমে টাইট পেট বিজলি হানে।
ঝালও বেশি, ন্যাতামারা, নুনটা শ্যালো
ডীপ ফ্রাই করবে কী, শ্যাষ তো ত্যালও
!

আমি এই ভোগ্য মহান শরীর
-
টারে যত সুখী ভাবি, যা হামবড়া
তার চেয়ে বেশি করে ধরাকে সরা।

না, বেহায়া জবুথবু থাকার মানে
মই দেওয়া নিজেরই সুপক্ক ধানে।
খাতা ছোড়
! ধারে আজ খাবোনা ঘি-টি
কী ভয়ের কথা, পেগ কোথায়, হ্যালো।

তরলসেবী এই চ্যালাচামুন্ডাদের প্রবল দাপটে সাধারণ মানুষ দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে। এদের বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস নেই তাদের। কেননা বেশ কিছু ক্ষেত্রে তার ফল হয় মারাত্মকচেয়ার আঁকড়ে যে বসে আছে, তার কার্টুন শেয়ার করলেই পেছনে এসে গেঁথে যায় হার্পুন। ভোটের প্রাক্কালে তারও প্রয়োজন হয় না, ঝঞ্ঝাট এড়িয়ে যেতে লুকিয়ে পড়াই শ্রেয়। পাড়ার যুবক পাড়ায় নয়, আশ্রয় খোঁজে পাড়ার বাইরে। ভোটের হর্ষধ্বনির মধ্যে চাপা পড়ে যায় তাদের ফিসফিসানি –

আমি ধানক্ষেতে রই
ও আমার কাঁপন
-লাগা পেছনটারে
ফাটাস না রে। ধানক্ষেতে রই
...
কোন মাটির মানুষ ওড়ায় ফানুস,
তার চ্যালাদের অত্যাচারে
গ্রামের ধারে
ধানক্ষেতে রই...

কোমর হেথায় যাচ্ছে লাগি,
সমস্ত রাত ভয়েই জাগি রে
কোন গতরখাকি মারবে, তা কী
বুঝবো বলো এ সংসারে
কাঠি নাড়ে। ধানক্ষেতে রই
...

কে সে আপদ, সবাই জানে।
কিছু তার ভাষায় প্রকাশ,
কিছু রয় তুলির টানে,
কিছু তার ঝাড়েরই বাঁশ।

মাঝে মাঝে তার উদ্ধৃতি
শুনলে লাগে ছাগল
-গীতি রে
ও সে আমায় জানি ভাবছে ফানি
হুঁড়কো দেবে অন্ধকারে
বাঁশের ঝাড়ে। ধানক্ষেতে রই
...

এ যদি মনে হয় আবহকালের যুবকদিগের হতাশার প্রতিধ্বনি, তবে যুবতীদিগের ক্রন্দন আরো ব্যাপক, আরো করুণ। স্বভাবলজ্জিতার লজ্জাহরণের নগ্ন ক্রীড়া এই ভোটরঙ্গ। গদিতে বেষ্টিত থাকতে হলে দাপটে থাকতে হয়, তার এক আদর্শ রূপ হচ্ছে ভীতিসঞ্চার সর্বসাধারণের মধ্যে। তরুণীদের মনে ভীতির উদ্রেক নিতান্তই বাল্যলীলা। সারা পৃথিবী জুড়ে যে লীলার বিক্ষিপ্ত প্রকাশ, এ স্থলে তা বেশ সুচারুভাবেই ব্যবহৃত হতে বাধা কোথায়? আর তাকে স্বীকার করারই বা দায়বদ্ধতা কোথায়?

মেয়েটা একা। বইখাতা তার হাতে।
হঠাৎ কাদের হাত পড়ে ওড়নাতে।
“ও ন’দি, জেগে আছো?”

খিস্তি ঝরে এখানে রাতদিন।
এখানে রেপ ধুলোর মতো ওড়ে।
ওদের মূক চোখের মণি ক্ষীণ
প্রশ্ন হয়ে ঘোরে,
“ও ন’দি, জেগে আছো?”

আধেক-ক্লীন শাড়িতে ঘাস বোনা,
শুনলো বসে সাজানো এই ঘটনা।
হঠাৎ দ্বারে সিবিয়াই মাঝরাতে,
“ও ন’দি, জেগে আছো?”

সুতরাং ভোট আসে, ভোট চলে যায়। তার ফলাফল পূর্ব নির্ধারিত। চতুর্দিকে শান্তির বাতাবরণ। এত শান্তিতে ভোট দেবার প্রয়োজনই বা কোথায়? ফলে উন্নয়নের জোয়ার আসে অশ্বমেধের ঘোড়ার ন্যায় দ্রুতবেগেক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পে সমস্ত কুটির ছেয়ে যায়। দশতলা বাড়ি হাঁকায় তেলেভাজা ইন্ডাস্ট্রি। সেই তেলেভাজাতে মহোৎসব হয় সরকারি আনুগত্যে। নাচাগানা হয়। আই পি এল হয়। ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর আসে। সোনাদানা নিয়ে যায়। প্রশংসার বাণীতে ভিজে যায় জনতা, অভিনন্দনের উত্তরে আপ্লুত হয়ে তারা গান ধরে –

সেই তো আবার ভাজো তেলে।
এতদিন ঘিয়ে ভেজে বলো না কী সুখ তুমি পেলে?
সেই তো...

এ কেমন তেলেভাজা কে জানে
কী তেলে গো ভেজে দিলে এখানে

নিজ হাতে হ্যানো-ত্যানো মাড়ায়ে
নিজো হাতে-এ-এ-এ ন্যানো-ট্যানো তাড়া-আ-আ-য়ে-এ-এ-এ
তেলেভাজা ইন্ডাস্ট্রী দিলে জ্বেলে।
সেই তো আবার...

তুমি তো তেলটা ভালো চেনো।
কাকে কত তেল দেবে, ঠিক করো সেই লেনদেনও।

তবু যদি তেলে থাকে ভেজালই
সে তেল নিতে কেউ করে জালি,
আঁতেল্‌শ্রী মালা দাও পরায়ে
আঁতেল্‌শ্রী-ই-ই-ই বালা দাও গড়া-আ-আ-আ-য়ে-এ-এ
বাম্বু পেছনে দাও ঠেলে।
সেই তো আবার...

জনতা যাই বলুক, সভাকবি ভয়ে ভয়ে থাকে। ভোটে অন্যরকম কিছু হলে তাকে স্ট্র্যাটেজি বদলে বিপক্ষ শিবিরে ডাইভ মারতে হতো, তাতে তার পারদর্শিতা পরীক্ষিত ও প্রমাণিত, কিন্তু একাধিক বার একই বস্তুর পুনরাবৃত্তি কেমন যেন কটু দেখায়। যাক বাবা, ভোটে জয়লাভ যখন হয়েই গেছে, এইবার বরলক্ষ্মীর মাল্যখানি নিশ্চিত রূপেই তারই গলে দোদুল্যমান হবে। এর পশ্চাতে মেহনত তো কম হয়নি! কিন্তু এ কী! এখনও কেন ঘোষণা হচ্ছে না?

বঙ্গরত্ন পেলে আমি সাঙ্গপাঙ্গ ফেলে চলে যাবো
নবান্নয়, পরমান্ন পাওয়া যায় রোজ পেট ভরে।
বঙ্গরত্ন পেলে আমি পোড়া বিড়ি রোজ কেন খাবো?
যা খাচ্ছে ওরা, তাই খাবো সারা রাত্তির ধরে।
বঙ্গরত্ন পেলে আমি ছেঁড়া গেঞ্জি আর কাচবো না;
কবিদের দিয়ে দেব, ছুঁড়ে দেব আধুলি সিকিটি
বঙ্গরত্ন পেয়ে গেলে সিঙুরের মাটি হবে নোনা,
এবেলা ওবেলা রোজ একে ওকে লিখব খোলা চিঠি।

বঙ্গরত্ন পেলে জানি সব পাওয়া। না পেলে আমাশা,
ঘুষঘুষে জ্বর হবে, হাঘরের আর যা যা হয়
রোদে দৌড়াদৌড়ি করে, সহ্য করে খিস্তিখাস্তা ভাষা,
পোঁদে লাথি খেয়ে হয়ত ব্যথাট্যথা হবে অতিশয়
সব জল মুছে দেব, সব মধু ঢেলে দেব কানে -
আমি কী গভীর প্রেমে তাকে চাই, বঙ্গরত্ন জানে।



ও হরি! সভাকবির প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী যে ন’দি স্বয়ং! তার শিল্পকলা বহুবিধ। এক  আঁচড়ে রেপ-টেপ সব সাজানো ঘটনা, তিন আঁচড়ে দশলাখি ছবি, পাঁচ আঁচড়ে বেস্টসেলার কাব্য! এর জন্যে কেবলমাত্র নিজস্ব পুরস্কার যথেষ্ট নয়, জ্ঞানপীঠ-বুকার- নোবেল-এর ব্যবস্থা করাই দস্তুর। কিন্তু তার জন্যে কার ভোট দখল করতে হবে? কাকে ঢোকাতে হবে হাজতে? এদিকে এর ব্যবস্থা না করতে পারলেও তিনি ক্ষুণ্ণা হবেন। আর তিনি ক্রুদ্ধা হলেই দক্ষযজ্ঞ –

নোবেল যদি স্পেশাল এমন
উহারে দাও আধখানা,
রাগিও না, তারে রাগিও না।
নোবেল যদি ...

যা চলছে ভাই বাস্তবে
রাগলে খাবে বাঁশ তবে
গলির মোড়ে বুকার ঘোরে, তারাও যদি
তার প্রতিভায় রাতকানা।
রাগিও না, তারে রাগিও না।
নোবেল যদি ...

কাব্য কী আর শিল্প কী?
বোকা বলেই ভুল বকি।
ওর কবিতা পড়লেই পায়
জনগণের পায়খানা।
দাগিও না, লাগিও না।
রাগিও না, তারে রাগিও না।
নোবেল যদি ...

এই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। ভাদ্র পেরিয়ে যাবে একদিন, আসবে আশ্বিন। ধরণী সেজে উঠবে সোনালি রোদ পিছলে পড়া দোদুল্যমান কাশে, আকাশে ছুটে যাবে সাদা মেঘের ভেলা। বেচারি সরকারি কর্মচারিটির মহার্ঘ ভাতা বাকি পড়ে থাকবে। পুজোর বোনাস জুটবে না। আমাদের কপালে শুধু ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ। আমরা গাইতেই থাকব –

ইয়া দেবি সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।। নমো নমঃ।। নমো নমঃ।। নমো নমঃ।।




3 কমেন্টস্: