কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৫

তাপসকিরণ রায়

রমাকান্ত নামা - ভালোবাসার নেশা

নেশার কি শেষ আছে? কারের নেশাই শুধু নেশা নয়, ফেসবুকে বসে থাকা যেমন নেশা, তেমনি প্রতিদিনের খোলা জানালার বাইরের দৃশ্য দেখাও নেশা হয়ে উঠতে পারে অভ্যাস নেশার বশীভূত কিম্বা বলা যেতে পারে নেশা অভ্যাসের বশীভূত।  বশীকরণ তন্ত্রমন্ত্রের এখানে প্রয়োজন নেই। হ্যাঁ, একটা কথা এর মাঝে এসে যায় বটে, আকর্ষণ কিছু একটা থাকতে হবে, চেখে দেখার আবেশ বা দেখার চৌকসতা, এমনি  একটা কিছু
এ ছাড়া আরও কিছু ফ্যাক্টর আছে। সবচেয়ে বড় নেশা কি মদ, নাকি অন্য ম’কার? যাক গে ওসব কথা। রমাকান্ত জানেন, সাপের ছোবল থেকে শুরু করে হেরোইন, কোকেন, এল.এস.ডি. ইত্যাদি সহজে জানমারা অগণিত নেশার বস্তু আছে।  অত সবের ভেতর যেতে চান না রমাকান্তআসল কথা হলো, তিনি জানেন যে ভালোবাসাও একটা নেশা এখানে রমাকান্তর অভিজ্ঞতায় বলতে হয়, ভালোবাসা  ক্ষণস্থায়ী। এর স্থানকালপাত্র বলে কিছু নেই। নরনারীর আকর্ষণের মাঝে এক ধরনের মোহ জন্ম নেয়, দেহ মন প্রকৃতির গুণেই তারা পরস্পরের প্রতি আকর্ষিত হয় 

রাস্তার সেই আন্না ভিখারিনীকে দেখেছেন রমাকান্ত। বয়সের ভারে সে নতজানু। ওকে দেখলে ছেড়ে যাওয়া মার কথা মনে পড়ে যায় তাঁর। মা সন্তানের ভালোবাসা স্নিগ্ধ, কোমল, নিঃস্বার্থ, চিরন্তন। সেই আন্না ভিখারিনীর হাতে পয়সা তুলে দিলে দুচোখ তুলে একবার সে তাকাতো, তার গাল বেয়ে নেমে আসত ঈষৎ হাসির রেখা রমাকান্ত দেখতে পেতেন, এক মাতৃরূপ চলে যাবার আগে তাঁর মাও যে এমনি হাসতেন! কিন্তু ওই পর্যন্ত, ভিখারিনীকে নিজের ঘরে স্থান দেবার কথা তিনি ভাবতে পারেন নি। ভাবনা এখানে মুক্ত থাকলেও বাস্তবতা এখানে অস্বচ্ছ ছিল 
রমাকান্ত ছোটবেলায় খেলতে খেলতে ভালোবেসেছেন অনামিকাকে। আকর্ষণ জড়াবার  বয়স সেটা নয়, আর তা ছাড়া শরীরের তন্তুগাঁথা সে বয়সে পূর্ণত্ব পায় না। অনামিকা অনায়াস হাসত, ধরা দিত রমাকান্তর কাছে। পরস্পর পরস্পরের মাঝে বশ মানা ছিল, আর সে ঈষৎ উত্তাপে ভালোবাসার অঙ্কুর খুঁজে ফিরছিল মাটি জল  বাতাসের সংস্পর্শ। কিন্তু পায় নি কবে যেন ছুটে গিয়েছিল অনামিকা। হাতের দশ  আঙ্গুলের একটা হয়েই স্মৃতির ছায়ায় অনামিকা হয়েই সে থেমে গিয়েছিল

কৈশোরে জন্ম নিয়েছিল আর এক ভালোবাসারমাকান্ত জানেন, জীবনে চলার পথে  এমনটাই ঘটে। আকর্ষণগুলি বিকিরণ হতে থাকে, অনেকেই ছুঁয়ে যায় তাতে। অনেকেই ধরা পড়ে আবার ধরা পড়তে পড়তে ছুটে যায়। জাল এক জনের হাতে থাকে না, উভয়ে উভয়ের জালে ব্যপৃত হয়ে পড়েআবার হালকা জালের সুতো ছিঁড়ে কখন যেন রূপোলি মাছ দুরে সরে যায়

মধুমিতা! তোমাকে ভালোবাসি জীবনের এ কথায় সবাই বাঁধা থাকে। মনে হয়   স্থায়ী, এমন ক্ষণ বুঝি চিরস্থায়ী। কিন্তু মন যে এক জায়গায় গুটি পাকিয়ে থাকতে পারে না! সেদিনের মধুমিতা মাথা নত করে হেসেছিল, মুখ ফুটে কিছুই বলার অবকাশ রাখে নি সেতবু একদিন কুয়াশার ওপারে মধুমিতার শরীর জাল হতে হতে মিলিয়ে গেল তারপর রমাকান্তর জীবনে কবে যেন ঝড় তুলে বসন্ত এলো। তোলপাড় ভাবনার মাঝে রং-শাড়ি ডোরে ব্যাপে গেল আকাশবাগানে গোলাপ ফুটল, ফুলবাগিচায় দেখা হলো গোলাপির সাথে। বসন্তের উদাসী হওয়ায় পলাশী রং ছুটল 

বাতাসের মাঝে ইথার তরঙ্গ মেপে দেখা যাবে ভালোবাসার কথা সেখানে সবচেয়ে বেশি জমা আছেঅঞ্জু মঞ্জু সঞ্জু্দের এই গল্প গাঁথা তো চিরন্তন। এদের ছাড়া প্রাণ  নেই, প্রাণ মানেই তো জন্ম। আর জন্ম মানেই তো মিশ্রণ। আর মিশ্রণের ইনানো বিনানো কথাই হলো ভা্লোবাসা।  
অসফল ভালোবাসা ঝড়ো পাখিদের মতো উড়ে বেড়ায়, বিরহ ভারে সে উদাসী।  ভালোবাসা নরম, ভালোবাসা গরম, ভা্লোবাসা নিরপেক্ষ, আবার স্বার্থপরওভালোবাসা মুক্তি, ভা্লোবাসা বন্ধন। সমস্ত নিঃশেষিত হয়ে শেষ যে বিন্দু তা হলো   ভালোবাসা। তবে সে বড় নিপীড়ক, বড় বুভুক্ষু প্রতিটি মানুষকে ছুঁয়ে চলে যায়বড় মায়াবী চঞ্চল হরিণ সে। 
ফিসফিস হওয়ায় কথা ভেসে আসে অনামিকা, মধুমিতা কিম্বা গোলাপির ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি...
কখনও তার মাঝে গোলাপি হেসে খানখান হয়...
রমাকান্তর নখ স্বপ্নের ভেতরেও নিশপিশ করে ওঠে।
   

      


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন