কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

অমিতাভ প্রামাণিক

চারানা আটানা




২৫) পুস্তক-ইস্তক

কী কুক্ষণে নিবারণদা আমাকে মোড়ের মাথার চায়ের দোকানে গল্প করতে করতে মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলেন, তাহলে তুমিও ভায়া একটা বই লিখেই ফ্যালো, আমি তারপর থেকে নিবারণদার পেছনে পড়ে গেলাম। নিবারণদা কিছুদিন একটা স্কুলে ক্লার্ক ছিলেন, সেই থেকে ওই স্কুলে আর আশেপাশের গ্রামের চার-পাঁচটা স্কুলে টেক্স্‌ট্‌বুক বিতরণের ব্যাপারটা দেখতেন, এখন পুরোপুরি প্রকাশনার জগতে।



নিবারণদাকে এখন বই ছাড়া দেখাই যায় না। সব সময় হাতে কাঁড়ি কাঁড়ি বই টানতে টানতে চলেছেন। বই-বাহিক নিবারণদা বৈবাহিক দিক থেকে আমার কেমন যেন আত্মীয়ও, ওর মেজশালার শ্বশুরের ভাইপো আমার দূরসম্পর্কের একরকম ভাই। নিবারণদার বাড়িতে ওর বসার ঘরে ঢুকতে হলে যেন বই-তরণী পেরিয়ে গিয়ে বসার জায়গা খুঁজতে হয়। এত বই শো-কেসে রাখা, অথচ বৈষয়িক ব্যাপারে মনে হয় না নিবারণদার সে রকম মতিগতি আছে। বৌদি তো পরিষ্কার অনুযোগ করেন, তোমাদের নিবারণদা হচ্ছেন বৈদিক যুগের লোক, কেউ কাউকে কিছু উপহার দেওয়ার প্রসঙ্গ তুললেই ওর মতামত, বই দিক। বৌদি এমনিতে শান্তশিষ্ট, সেটাই ওর বৈশিষ্ট্য, কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই এসব শুনে রেগে যান – একটা ছ’মাসের বাচ্চাকে অন্নপ্রাশনে বই! স্বামী-স্ত্রীর এই অদ্ভুত বৈপরীত্য সত্ত্বেও ওদের বাড়ির বই-চিত্র আর স্বভাবের বৈচিত্র্য আমাকে দারুণ আকর্ষণ করে।

বৈকালে হঠাৎ দেখা হওয়ার রিস্ক না নিয়ে একদিন ভোরবেলা ওর বাড়ি চড়াও হয়ে আমি নিবারণদাকে বললাম, বই লিখে ফেলেছি। উনি তখন সকালের জলখাবারের নিমিত্ত একটা পাঁউরুটির পিসকে বৈদগ্ধ করার চেষ্টায় রান্নাঘরে।
আমাকে দেখে মুখ না তুলেই বললেন, বেশ। কীসের বই লিখলে, কবিতার, না গল্পের?
আমি বললাম, ঐ আর কী! সবই আছে অল্পবিস্তর। আপনাকে ম্যানাস্ক্রিপ্টটা দিয়ে যাই?
নিবারণদা কুণ্ঠিত স্বরে বললেন, এক্ষুণি দিও না, আমার এ কদিন বেশ একটু চাপ আছে। এখন তো জানো, মাধ্যমিক-হায়ার সেকেন্ডারির টেস্ট পেপার ছাপানো চলছে। এখন আমার মরার সময় নেই। এই ছটা চব্বিশের বৈকুণ্ঠ এক্সপ্রেস ধরে বেরোব, বাড়ি ফিরতে মাঝরাত।
আমি বললাম, তা’লে কবে আসব বলুন! মার্চের ফার্স্ট উইকে?
নিবারণদা বললেন, যে কোনো সময়ই আসতে পার। রাস্তায় তো দেখা হবেই, আমি  চেয়ে নেবোখন।

এর পর নিবারণদার সাথে রাস্তায় দেখা হলেই আমি স্মরণ করিয়ে দিই, আর উনি সবসময়ই ব্যস্ত থাকেন, একথা সেকথা বলে বেরিয়ে যান। ম্যানাস্ক্রিপ্টটা এর মধ্যেই তিন চারবার এডিট করেছি, কিন্তু ধরিয়ে না দিতে পারলে শান্তি কই? ছাপা না হওয়া পর্যন্ত তার বৈধব্য দশা কাটছে না।

শেষে একদিন লাস্ট ট্রেন অবধি মোড়ের চায়ের দোকানে ওয়েট করে দেখলাম নিবারণদা ফিরছেন, দু হাতে প্লাস্টিকে মোড়া বইয়ের ঝোলা। টিপটিপ বিষ্টি পড়ছিল,  আমি ছাতা ধরলাম নিবারণদার মাথায়। বাড়ি অবধি পৌঁছে দিয়ে প্যান্টের কোমর ও পেটের মাঝে চিপ্‌টে লুকিয়ে রাখা পান্ডুলিপিটা বের করে গছিয়ে দিলাম। অন্ধকারে আমার বইয়ের ম্যানাস্ক্রিপ্ট হাতে পেয়ে বই-দ্যুতিক আলো না জ্বলে উঠলেও নিবারণদা এবার আর আপত্তি করার সুযোগই পেলেন না।

ছাপানো বই হতে অবশ্য ওটার সময় লাগলো আরও বছর পাঁচেক। নিবারণদাই করলেন। আমি ততদিনে একটা চলনসই ইঞ্জিনীয়ারিং ডিগ্রী এবং এম বি এ-র মালিক হয়ে একটা মার্কেটিঙের চাকরিও বাগিয়ে ফেলেছি এক বিস্কুট কোম্পানীতে। নিবারণদা প্রথম বইটার কেমন রেসপন্স জানালেই সেকেন্ড বইটা লিখে ফেলব, মালমশলা সব রেডি।

কলকাতা বইমেলায় সেই বই রিলীজ হলোএমনই ভাগ্য আমার, সেই সময়ই  অফিসের এক ট্রেনিঙের কারণে আমাকে যেতে হলো নৈনিতাল। ফিরলাম যখন, মেলা  শেষ।
নিবারণদার সাথে রাস্তায় দেখা হলোবললেন, সামনের রোববারে আছ তো? দুপুরের  দিকে পারলে আমাদের বাড়ি এস।
গেলাম। সেই বৈঠকে নিবারণদা চাঞ্চল্যকর তথ্য পেশ করলেন, নতুন লেখক হিসাবে তোমার বইয়ের রেসপন্স খারাপ নাফার্স্ট উইকে বিক্রী হয়নি অবশ্য। এবার আমাদের দশ বছর তো, তাই একদিন আমরা আমাদের নতুন সব বইতে দশ পার্সেন্ট এক্সট্রা ডিসকাউন্ট দিলাম, সেদিন তিন পিস বিক্রী হয়েছে। তবে নেড়েচেড়ে দেখেছে আরও অন্তত চল্লিশ-পঞ্চাশজন তো হবেই


আমি দমে গেলাম। বই মাত্র কি বৈমাত্র ভ্রাতার মতো আচরণ করে? বিক্কিরি মাত্র  তিনখানা? এখনকার পাঠকরা স্নব আমি জানি, তাই বলে বৈষ্ণব?
নিবারণদা আমার মনের ভাব বুঝে বললেন, আসলে এখন সবাই তো বই লিখছে। বুঝে দেখো, যে বৈজ্ঞানিক, সেও লিখছে ছড়ার বই। পড়ার লোক তেমন নেই, বুঝলে! আর পড়লেও নতুন লেখকের কথা তারা জানবেই বা কী করে? আমাদের তো বিজ্ঞাপ দেওয়ার মতো তেমন সঙ্গতি নেই। তাছাড়া পুরনো, নোংরা বইয়ের  প্রতি কিছু কিছু মানুষের বৈধ ইন্টারেস্টও আছে। ঐ যে তিনজন কিনেছে, তারা নিশ্চয় বইমেলায় পাতা উল্টাতে উল্টাতে পড়ে ভালো লেগেছে বলেই কিনেছে। এটা  কম কথা নয়। রবীন্দ্রনাথের লেখা বই প্রথমদিকে বিক্রী হতো নাকি? সব গোডাউনে পড়ে থাকত।
আমি তাও মর্মাহত হলাম। ভেবে এসেছিলাম, নিবারণদা বলবেন, তোমার সব বই বিক্রী হয়ে গেছে। আর আমি বলব, সেকেন্ড ম্যানাস্ক্রিপ্টও রেডি, নিবারণদা, আজকেই দিয়ে যাই?
দূর, দূর, এর চেয়ে বিস্কুটের ব্যবসাই ভালো

ফিরে এসে ভাবতে বসলাম, আচ্ছা, এই যে নৈনিতালে ট্রেনিং করে এলাম, এর কি কোনো ভ্যালু নেই? যে ট্রিক্সে বিস্কুটের বিক্রি বাড়ানো যায়, তাতে বইয়ের কাটতি  কেন বাড়বে না? এই যে শেখালো, প্রোডাক্টের আর কী অল্টারনেট ইউজ হতে পারে, ইউজারদের সে সম্বন্ধে অবহিত করাতে পারলে নাকি বিক্রিবাটায় লাভ আছে। টিভিতে দেখায় কঙ্কণা সেনশর্মা অ্যাড দিচ্ছে হলুদের, গুঁড়ো লঙ্কার, বলছে হলুদে-লঙ্কায় আরও কী কী সব সারে, আরে বাবা আসল ইউজ তো সেই তরকারিতে দিতেই! এসব  বলছে মানে নিশ্চয় এতে ফায়দা আছে কিছু! ব্রাশে টুথপেস্ট লাগিয়ে ঘষলে যে সোনার গয়না ঝকঝক করে, সেটা জানালে টুথপেস্টের বিক্রীও নির্ঘাৎ বাড়ত। এ রকম বইয়ের আর কী কী ইউজ হতে পারে?

বই একটা আত্মরক্ষার অস্ত্র? ধ্যুৎ, চলবে না। একটা মোটা গাবদা বই দিয়ে বড়জোর বৈরাগী কুকুর তাড়ানো যায়। তাও দন্ত প্রদর্শন শুরু করলে বৈদান্তিক নিয়ম ত্যাগ করে চম্পট দেওয়াই ভালো বই সঙ্গে থাকলে ধর্ষণের চান্স সাড়ে তের পার্সেন্ট কমে  যায়? উঁহু, কমে না। কমলে কি খবরের কাগজের পাতায়...
বই দিয়ে বৈশাখ মাসে আম বা বৈদ্যদের বাগানের কুল পাড়া যায়? নাহ্‌, পুরনো নোকিয়া ফোন অনেক বেটার।
আচ্ছা, বই-এর যেদিকে বাঁধানো হয়, সেদিকে ইঞ্চি আর সেন্টিমিটারের মার্ক করে দিলে হয় না? তাহলে স্টুডেন্টদের এক্সট্রা স্কেল কিনতে হয় না। দারুণ বৈকল্পিক আইডিয়া, নিবারণদাকে বলতে হবে।
বই দিয়ে কাগজ চাপা দেওয়া যায়! পেপার ওয়েট! ধুস!
বইয়ের ওজন আছে। ইয়েস! যদি একটা বইয়ের ওজন এগ্‌জ্যাক্টলি পাঁচশো গ্রাম হয়, তাহলে পাঁচশো গ্রামের বাটখারার বদলে বইটা ইউজ করা যেতে পারে। ক্রেতারা এটা মেনে নিলে পরে সুযোগ বুঝে দোকানদার সেই বই থেকে একটা দুটো ফর্মা আলগোছে কেটে বের করে বইয়ের ওজন কমিয়ে লোক ঠকাতেও পারে। অর্থাৎ বৈদেশিক রকমের অসাধু ব্যবসার জন্যে বইয়ের সার্বজনীন ব্যবহার।
আর কী কী করা যায় বই দিয়ে?
আচ্ছা, থাক, এবারে ভাবা যাক বই বিক্রির অল্টারনেট চ্যানেল। বই কি শুধু বইয়ের দোকানেই বিক্রী করা সঙ্গত?


গুলবাজদের নিয়ে অনেক বই লেখা হলেও গুলকয়লার দোকানে বোধহয় বই রাখা চলে না। মুদিখানার দোকানে কবিতার বই! যে চাল-ডাল-তেল-নুন-তেজপাতা কিনতে এসেছে, সে কি রবীন্দ্রকবিতায় নারীর উদ্বেগ জাতীয় প্রবন্ধ বা শৈলশহরে শৈলেনদা জাতীয় আধুনিক উপন্যাসে উৎসাহিত হয়ে মুদির জন্যে ধার্য পয়সায় বই কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরবে? উঁহু। লেস লাইকলি।
ওষুধের দোকানে টনিক-এর বদলে বই? বই তো আসলে মনের টনিকই, ওষুধ যেমন শরীরের। কিন্তু নাহ, আজকাল অবৈতনিক জিনিসপত্রের দিকে লোকের আগ্রহ বেশি।
তেলেভাজার দোকানে? দোকানি অবশ্য বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে চপ-পেঁয়াজি বিক্রি শুরু করে দিতে পারে, রিস্কি হয়ে যাবে। ভাজা বস্তুর ভাজ্য দোকানির বৈগুণ্যে মাঠে মারা যাবে।
পার্কে? পসিব্‌ল্‌। লোকজন বেড়াতে আসে, বইটই নেড়েচেড়ে দেখতে উৎসাহী হতেও পারে। কিন্তু ধুৎ, আসে তো ইয়াং ছেলেমেয়ের দল। বই পড়বে, না প্রেম করবে তারা? বই পড়তে পড়তে কি প্রেম করা যায়? মনে হয় না। অ্যাটেনশন ডিভাইডেড হয়ে গেলে দু-ভাই-এর মতো প্রেম ডেড। ওসব আগে হতো হয়তোপার্থ বা  ত্রিলোকেশ্বর ওদের গার্লফ্রেন্ডের বাড়িতে বেড়াতে গেল, আর বৈঠকখানায় বসে ফ্যানটা শম্পা অন করে পড়তে লেগে গেল কালীসিঙ্গির মহাভারত – বৈশম্পায়ণ কহিলেন... এখন আর এসব হয় না।
বই রাখা হয় আলমারিতে। আলমারির দোকানে কিছু সুদৃশ্য বই রাখা যেতে পারে। ভেতরে পাতা নাই বা থাকলো! রবীন্দ্র রচনাবলীর ডামি। সার দিয়ে সাজানো থাকবে  শুধু কার্ডবোর্ডের মলাট, ওপরে সোনার জলে লেখা – রবীন্দ্র রচনাবলী। দুচ্ছাই, তাতে আমার বই কী করে বিক্রি হবে?
আচ্ছা, ঐ যে দশ পার্সেন্ট দাম কমানোর সঙ্গে তিনটে বই বিক্রির কি কোনো কানেকশন আছে? নিবারণদা বললেন, সবাই বই লিখছে, পড়ার লোক নেই। তাহলে? বই বিক্রি হয় কেন? ইয়েস, উপহার দেওয়ার জন্যে। যাকে প্লাস্টিকের খেলনা দেওয়া যায় না, বা একটা জামা বা প্যান্ট কিনে দিতে বেশি খরচ, তাকে বই উপহার দেওয়া বেশ কম খরচে সুস্থ রুচির পরিচয়। উপহারের জন্য বইয়ের কাগজ টাগজ তেমন দরের না হলেও চলে। প্রুফ দেখার ঝামেলাই বা কী? এমনকি কিছু পাতা সোজা, কিছু পাতা উল্টো প্রিন্ট হলেই বা কে ঝামেলা পাকাবে? এটা মাথায় রেখে বইয়ের দাম অনেক কমিয়ে ফেলা যায়। মলাটটা ঝাঁ চকচকে, ভেতরে খবরের কাগজ টাগজ কাট করে ভরে দিলেও চলতে পারে। কিন্তু আমার বইয়ের তাতে কী লাভ?
বই প্রকাশের পর সেই প্রকাশের দিনে যদি বছর বছর জয়ন্তী পালন করা যায়? অমুকের শ্রেষ্ঠ কবিতার পঞ্চম জয়ন্তী, ইত্যাদি? চলবে বলে মনে হয় না। লোকে বৈজয়ন্তীমালার ডান্স দেখতে ব্যগ্র, এসব চালু করলে পরদিনই বৈকল্য সন্দেহে আর ঐ পথ মাড়াবে না।
কত দাম রেখেছেন নিবারণদা বলেন নি। ধরা যাক পঞ্চাশ টাকা। তার মানে পাঁচ টাকা ফেরৎ পেতে তিনজন উৎসাহ দেখিয়ে বই কিনে ফেলল? পাঁচ টাকার কী ভ্যালু আছে আজকাল? একটা বাসের স্টপেজ যেতেই তো পাঁচটাকা নিয়ে নেয় কন্ডাকটর। এই ভবে পাঁচটাকায় কতটুকু বৈভব দেখানো যায়?


না, একটু হলেও যায়পাঁচ টাকায় ক্ষুদে মাটির ভাঁড়ে চা পাওয়া যেতে পারে কোথাও। চা জিনিসটার সর্বত্র কাটতি। আর কিছু, যা ছেলেছোকরারা পাওয়ার জন্যে ছোটে? ইয়েস। মোবাইল রিচার্জ। দশটাকায় হয়, পাঁচেও হয় কি? নিবারণদাকে বললে হয়, বইটার সাথে এক কাপ চা বা দশ মিনিটের মোবাইল রিচার্জ ফ্রী দিন। দেখুন আরো ক’ কপি বিক্রী হয়ে যাবে।
উঁহু, এসব ব্যবসায়িক টিপ্‌স্‌ ফ্রীতে বিলি করা ঠিক না। এই টপিকটা নিয়েই সেকেন্ড বইটা লিখে ফেলি?




2 কমেন্টস্:

  1. সেকেন্ড বইটা লিখবেন বৈকি! আপনি তো হাসির বৈশম্পায়ন। এটা তো সবে বউনি! এখনি বইকল্য!

    উত্তরমুছুন
  2. সেকেন্ড বইটা লিখবেন বৈকি! আপনি তো হাসির বৈশম্পায়ন। এটা তো সবে বউনি! অদ্যই বৈ কল্য!

    উত্তরমুছুন