কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৬

তৃষা চক্রবর্তী

বালিঘড়ি

()

টিকিট কনফর্ম হয়নি। জ্বরটাও বোধহয় তাই রওনা হতে চাইছে না। মাস তিনেক আগে যখন টিকিট কাটা হয়েছিল, আমার প্রথম জ্বর এসেছিল। টাইফয়েডের। আজ ভোরবেলা, মা বলছিল এসব। আমি শুনছিলাম, ভাসা ভাসা। তারপর একটু বেলা হলে নরম রোদেরা যখন আমার বিছানায় ভাগ বসাতে এলো, শুনলাম -উঠে পড় এবার। কী কী নিবি গুছিয়ে নে সব

কিছুই গোছানো হয়নি। ইচ্ছেই করছে না। একটামাত্র ব্যাগে কী করে গুছিয়ে নেওয়া যায় আমার যাবতীয় অদরকারী! জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই। গত রাতের কোজগরী  চাঁদটা চোখে জেগে আছে এখনও। সূর্যের আলোটা খুব অপ্রাসঙ্গিক লাগছে...
 
হঠাৎ আমি ফিরে যাই গত বছরের আশ্বিনে। অন্ধ্রপ্রদেশ যাবার কথা - সমস্ত ঠিকঠাক। প্রাকৃতিক এক বিপর্যয়ে ভেস্তে গেল সব আয়োজন। বিকল্প হিসেবে স্থান পেল - ঘাটশিলা।

পাহাড়-সমুদ্রের এদিকের পাল্লায় টিলা-নদী। হিসেব মেলাতে গেলে যদিও মিলত না কিছুই। তবু, গুরুজনদের মেলাতেই হলোকারণ, আফশোষের কোনো বিকল্প নেই

ঐ কদিনে আমার বড় আত্মীয় হয়েছিল সুবর্ণরেখা। সুবর্ণরেখার খুব কাছে গিয়ে যখনই ওকে শুনেছি, ওর গান ধীর লয় আশ্রয় করেছে। নদী মাত্রেই পাগলপারা... এ বাক্য মুছে ও লিখে দিয়েছে - আকাশ বোঝে আনন্দ তার, বোঝে নিশার নীরব তারা।
আর... 
অদ্ভুত যন্ত্রণাময় উপলব্ধি নিয়ে এসেছিল রঙ্কিণীদেবীর মন্দিরে এক বলির দৃশ্য। রোজ বলি হয় সেখানে। কিছুটা রক্ত দেখে আমি ছুটে পালিয়েছিলাম। নিচে বইছে এক তন্বী স্বচ্ছতোয়া। হাঁটু সমান জল। কেবল অসংখ্য পাথরে পা রেখে রেখে চলছে বলে ওর দুপায়ে নূপুর বাজছে। আমি একটা পাথরে বসে কান পেতে শুনতে চেষ্টা করছি...
ওপরের রাস্তায় রঙ্কিণীদেবীর জয়ধ্বনিরত ভক্তের দল। তাদের শব্দে যেন স্তব্ধ হয়ে আসে নদীর কলতান। চারপাশে সবাই ব্যস্ত মন্দির নিয়ে। আমি এমন লোক পেলাম না, যাকে জিগ্যেস করি... কী নাম এ নদীর?
কিছুক্ষণ পর, কয়েকজন এসে নদী থেকে জল নিয়ে গেল। বলি শেষ। ধুইয়ে দেবে  এবার। না কি স্রোতস্বিনী স্বয়ং যাবে ধুইয়ে নিতে...
এমনসময় মা ডাকল এখনও নিচে বসে! উঠে আয়!”
 
উপরের ঘরে গিয়ে দেখি, মা ব্যাগ গোছাচ্ছে আর গুনগুন করছে... গভীর চলা গোপন রাখি...


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন