কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ৯ মার্চ, ২০১৬

সোনালী মিত্র

প্যাস্টেল শেড

ছোড়দিকে দেখতাম, বৃষ্টি নামলেই রঙ পেন্সিল আর এক দিস্তে সাদা পাতা নিয়ে দরজার সামনে পা ছড়িয়ে বসতে। বাটি থেকে মুড়িগুলো হাওয়ার তোড়ে ইট রাস্তাময়, পাটালী গুড়ের ডেলাটুকু জেগে থাকতো অনির্দিষ্ট ভরসায়। জলের ছাঁটে ওর এলিয়ে পড়া চুলের বেণী, মাক্সির শেষভাগ ও খাতার পাতা বৃষ্টি মাখতে মাখতে কখন যেন জলডিঙি। অবশ্য এসবে ওর ভ্রুক্ষেপই নেই! খসখস করে আঁকাবাঁকা হাতে লাইন টেনে কোনোটায় নৌক এঁকে ভাসিয়ে দিচ্ছে ড্রেনের জলে। কোনোটায় বা ঘর এঁকে ছুঁড়ে দিচ্ছে ফুটপাথে ল্যাম্পপোষ্টের জলহলুদ ধূসরতার দিকে। কোনোটায় বা মস্ত গোলাপ  রাঙিয়ে রক্তাক্ত ওর একান্ত মালভূমি। একদিন খুব বায়না ধরে বসলাম, ওর নড়বড়ে শরীরটাকে ছুঁয়ে, একটা নীলকন্ঠ পাখি এনে দিবি দিদি আমায়? ঠিক তোর মতো নীলে নীল, ঠিক মেঘলা দুপুর খুশি মতো জারুল গাছে বসে। দিদি কি বুঝলো কে জানে! আমার ঠোঁটের ওঠাপড়া দেখেই, খসখস করে খাতায় হাবিজাবি কাটে। ওমা এ যে দেখি দিব্যি আমার পাখি! কিন্তু ও কিরে! ও খাঁচায় কেন বন্দী? দে, দে এখুনি ওর দরজা ভেঙে দে! দিদি আমায় বায়না রেখেছিল, উড়িয়ে দিল সে পাখিকে নদী, নালা, খেত, খামার, পাহাড় ছাড়িয়ে...


বৃষ্টি আজও নামে, ছোড়দির হাতে প্যাস্টেল শেড একে অপরের বুক ছুঁযে খেলা করে। বৃষ্টিস্নাত নীলকন্ঠ জারুল গাছে বসে ডানাপোড়া পাখির পায়ে শিকল কাটার গল্প।  ডানাপোড়া পাখির গায়ে দহন জ্বালার গল্প। ডানাপোড়া পাখি বেরঙ রোগের শিকার রঙের নেশায় মেতে ছোড়দি জানতই না ইরেজারে রঙ মোছা যায় না। রঙের বহন চেপে বসে আরো সাদা পাতার ওপর মুখে বু বু শব্দ, বিস্ফারিত চোখে পাগলের মতো ঘষে চলছে রাবার... ছিঁড়েই যায় সমস্ত জীবন পাতা। আঠারো মাস মানসিক হোমে থেকে ওর পেটে এখন নয় মাসের আলো। অথচ, ভূতের জন্ম দেব বলে অন্ধকারে আমি-আমরা দোয়াত খুলে বসি...

1 কমেন্টস্: