কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ২৩ মে, ২০১৬

অমর্ত্য মুখোপাধ্যায়

বাঙালির সুশীল সমাজ




 ঠাক্‌মা বলতেন দাদু সত্যি বড় নয়, পেত্যয়ই বড়। আর যা দেখো সেটাই সব নয়, যা ঘটে সেটাই ঠিক। সারা জীবন, মানে এই কুল্যে পঁয়ষট্টি পেলাস বছরের ছোট্ট জীবনে, এই সুবচনীর প্রয়োগ করে বেড়িয়েছি আর জিতেছি। আজ লক্ষ্য বাঙালির পুরসমাজের প্রাবল্য নিয়ে সক্কলের পেত্যয়। তাঁদের বলতে ইচ্ছে করে যা দেখেন সেটাই সব নয়, যা ঘটে সেটাই ঠিকবাঙালি মন দিয়ে অমর্ত্য সেনের ‘তর্কপ্রিয় ভারতীয়’ পড়ে, সেখান থেকে তর্কপ্রিয় বাঙালির অনুসিদ্ধান্ত টানে; আর তার থেকেই আবার বাঙালির সমৃদ্ধ পুর-তথা-নাগরিক-সমাজের সিদ্ধান্ত করে নেয়। বাঙালি যা নেই তাই দেখে। আমরা এখানে বাঙালি জীবনে পুরসমাজের চঞ্চল উপস্থিতির  ইতিহাসটা একটু ঘেঁটে দেখি, নাস্তিতে অস্তির ভ্রম কাটাতে। তবে পুরসমাজের মানে অনেক, যদি আমরা গ্রীক ঐতিহ্যে অ্যারিস্টটেলীয় ‘politike koinonia’, বা পোলিসের থেকে আলাদা রাজনৈতিক জনসমাজ থেকে শুরু করে’ সিসেরো-র ‘societas civilis’, Physiocrat-দের ‘sociéte naturelle’এর বিরুদ্ধে স্থাপিত ‘sociéte politique’, অ্যাডাম ফার্গুসনের ‘polished society’ ইত্যাদি হয়ে, হেগেলের bügerliche Gesellschaft’, মার্ক্স, টকভিল ইত্যাদির সিভিল সোসাইটির ধারণা পার করে’, রবার্ট পুটনামের সোশ্যাল ক্যাপিটালের ধারণা, ট্যালকট পারসন্‌স (ঠিক উচ্চারণে প্যাসন্স)-এর ‘societal community’ পর্যন্ত পুরসমাজের আর্থিক (হেহে!) বিবর্তনকে খেয়াল রাখি। আসলে এই অর্থ-বিবর্তনের কারণ হলো পুরসমাজের ধারণাটি মোটামুটি তিন ধরনের বৈপরীত্য, তথা সংঘাত থেকে গড়ে উঠেছে। প্রথমটা হলো ‘commonwealth’  আর ‘state of nature’-এর বৈর বা সংঘাত যার ব্যাপারে তত্ত্বায়ন শুরু টমাস হব্‌স থেকে। দ্বিতীয়টা হলো পুরসমাজ আর রাষ্ট্রের, যাকে সমৃদ্ধ করেছে চরমপন্থা-বিরোধী দুটি ধারা। একটি লকীয় উদারনীতিতে প্রারব্ধ ও দৃঢ় প্রোথিত। আরেকটি মঁতেস্কু-র ক্ষমতার বিতরণ-বিভাজন-সমন্বয়ের — কেবল স্বতন্ত্রিকরণ নয়, যতই কিছু অনড্বান বলুন, কারণ মঁতেস্কু তাঁর De l'esprit des lois(The Spirit of Laws, 1748) বইতে যে শব্দগুলি ব্যবহার করেছিলেন সেগুলো হচ্ছে তিনটি ‘pouvoir’ বা ক্ষমতার আর দুটি ‘puissance’ বাকর্তৃত্বের ‘combination’, ‘fusion’, ‘liaison’, এগুলোর মানে স্বতন্ত্রিকরণ করে কোন্‌ বুড়বাক! — ভিত্তিতে সীমিত সরকারের ধারণা। দ্বিতীয়টার মধ্যে নানা তত্ত্ব পাই লক-হেগেল-মার্ক্স-টকভিল থেকে অনেকের। তৃতীয় দ্বন্দ্ব তথা বৈপরীত্যটি হলো পুরসমাজ আর জনসমাজের মধ্যে আধুনিক সমাজতত্বের ঐতিহ্যে করা পার্থক্য। এখানে দুর্খেইম, হ্বেবর, পুটনাম, পার্সন্স ইত্যাদির নিত্য অধিষ্ঠান। আসলে বৈপরীত্যগুলির অধিক্রমণ সাঙ্ঘাতিক রকমের চড়া।


এদের মধ্যে বাঙালির পছন্দ হলো অ্যাডাম ফার্গুসনের ‘polished society’-কে সবচেয়ে বেশি। নইলে সুশীলসমাজ নামে এত আগ্রহ কেন? আগ্রহ হবে নাই বা কেন? ঔপনিবেশিক সমাজে ও জীবনে গণতান্ত্রিকতার সীমাবদ্ধতার মধ্যে পশ্চিমী পুরসমাজের কিছু দেশি অপভ্রংশের জন্ম হয়েছিলওই যাদের সুদীপ্ত কবিরাজ বলেছিলেন “ungrammatical organizations” তথা অ-ব্যাকরণসিদ্ধ সংগঠন, তাদেরতারা সদস্য আহরণ করত কোনো জাতিগোষ্ঠী থেকে, অর্থাৎ ‘ascriptive’ এবং gemeinschaftliche’ মাপকাঠির ভিত্তিতে কিন্তু তার পর সার্বজনিক এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে ব্যবহার ও জননীতি প্রভাবিত করার চেষ্টা করত, যেমন কায়স্থসমাজ।  ঔপনিবেশিকরাষ্ট্র এদের বাইরে কিছু শুদ্ধীকৃত সংগঠন স্পন্সর করেছিলতাদের নিয়ে কিছু বলার নেই। কিন্তু তাদের ছাড়াও ইংরিজি শিক্ষিত বাঙালি কিছু বিদ্বজ্জনসভা এবং সাহিত্যিক(পুর)সমাজ বা literary society তৈরি করেছিলপার্থ চ্যাটার্জি তাঁরTexts of Power: Emerging Disciplines in Colonial Bengal(Calcutta: Samya, 1996, pp. 13-15) গ্রন্থে Society for the Acquisition of General Knowledge (1838 সালে, বঙ্কিমচন্দ্রের জন্মসালে প্রতিষ্ঠিত) নামের এমন এক সমিতির কথা বলেছেন রবীন্দ্রনাথ নিজে বঙ্কিমচন্দ্রের তিরোধান উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় কিছুটা না বুঝে, কিছুটা আবেগের আতিশয্যে, বঙ্গদেশে এই ধরনে সাহিত্যিক(পুর)সামাজিক প্রতিষ্ঠানের অভাবের বিরুদ্ধে বলেছিলেন, যেটি তাঁর  ‘শোকসভা’ নামের প্রবন্ধে ছাপা হয়েছিল, যদিও তাঁর অগ্রজ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বিদ্বজ্জনসমাগম, বেথুন সোসাইটি, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ আর তাঁর নিজের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত সারস্বত সমাজ, সাবিত্রী লাইব্রেরির অধীনে সাবিত্রীসভা, চৈতন্য লাইব্রেরি, বীডন স্কোয়ার লিটারারি ক্লাব ইত্যাদি সংগঠন তখনও সগৌরবে বিরাজমান। এমনকি তিনি নিজে ১৮৯৪ সালে যখন এই বক্তৃতা দিচ্ছেন তখন স্মরণসভার উদ্যোক্তা চৈতন্য লাইব্রেরি, আর সমাবেশস্থল বীডন স্কোয়ার লিটারারি ক্লাব

এই ধরনের পুরসামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি ইংরিজি শিক্ষিত বাঙালির আবেগ প্রথমদিন  থেকেই। এর পিছনে কি ফার্গুসনের প্রভাব আছে? হয়তো! লোকে বলে আধুনিক বা সাম্প্রতিক পশ্চিমবঙ্গে পুরসমাজের কথা বলার সময় সুশীলসমাজ কথাটির ব্যবহার বাংলাদেশ থেকে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশের আর আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তো একই! ফার্গুসন তাঁর বইয়ে জীবনের ‘rude formsথেকে ‘polished’ অথবা ‘civilized societyঅবধি মানব প্রজাতির ‘natural history’-র বর্ণন করেছিলেন। ইংরিজি শিক্ষিত বাঙালির কাছে এই প্রাকৃতিক ইতিহাস হয়তো টেলিস্কোপিত হয়েছিল প্রাক্-ঔপনিবেশিক কাল থেকে ঔপনিবেশিক কাল অবধি। নইলে রবীন্দ্রনাথ নিজে কেন ‘পাব্লিক’ শব্দটাকে ‘নামে’ ও পদার্থে উভয়তঃই নতুন দেখবেন! সে যাই হোক! বাঙালির সুশীলসমাজ ছিল প্রথম থেকেই বৃহত্তর সামাজিক অর্থে অপরিবেষ্টক, সীমিত। কিন্তু তাও কি থাকলো পরে?

অনেক পণ্ড করা, ‘এস্কলারলি’ (মানে পণ্ডিতি) লেখায় আমি দেখিয়েছি কীভাবে  ঔপনিবেশিক আমলের অপরিবেষ্টক পুরসমাজও স্বাধীনতার পর থেকে কেন্দ্রে নেহরুর আর রাজ্যে বিধান-রায়-অতুল্য ঘোষের দ্বৈরথের জেরে আসা ‘কম্যান্ড পলিটিক্সের’ চাপে নষ্ট, ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল১৯৭৭ সালের পর থেকে বামফ্রন্ট সরকারের নীতিমালাও তার বিকাশের অন্তরায় হয়েছিলএন.জি.ও. এমনকি তৃণমূল স্তরের কার্ষ সমবায় সমিতিগুলির প্রতিও বামফ্রন্ট তথা সিপিএমের বিরূপতা পুরসমাজের কোনো আঙ্গিককেই মাথা তুলতে দেয়নি তার ভূমিসংস্কার ভিত্তিক, পঞ্চায়েত-প্রধান আর ফ্রন্ট্যাল-সংগঠন-দমিত স্ট্রাটেজির বিরুদ্ধেএমনকি বাঙালির সুশীলসমাজকেও আবার মাথা তোলার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-রিজোয়ান-লালগড় ইত্যাদির সিপিএম ও বামফ্রন্ট সরকারের জারি করা পার্টি-সোসাইটির বিজড়িত আধিপত্যের বা ‘integral hegemony’ অবক্ষয় অবধি। কিন্তু ২০০৭ সাল থেকে মাথা তোলা এই বাঙালির সুশীলসমাজ যাদের নিয়ে গড়া ছিল তা হলো স্টেজ-সিনেমার অভিনেতা, পরিচালক, চিত্রশিল্পী-চিত্রকর, বাজারী-অবাজারী কবি-লেখক-সাহিত্যিক, গায়ক, নায়ক ইত্যাদিদের নিয়ে। কিছু উজ্জ্বল ব্যতিক্রম ছাড়া। দুর্খেইমের-টকভিলেপর থেকে যে পেশাদারীকরণ বা ‘professionalization’ পুরসমাজের মেরুদণ্ড তার অভাব এই সুশীলসমাজে প্রকট। ‘ট্র্যাডিশন্যাল ইন্টেলেকচুয়াল’ আর ‘অরগ্যানিক ইন্টেলেকচুয়াল’-দের পার্থক্য করার সময়েও সমাজের যে অংশগুলির এই ট্র্যাডিশন্যাল ইন্টেলেকচুয়ালদের গোষ্ঠিভুক্ত হওয়াকে ব্যঙ্গ করেছিলেন গ্রামশি, তাঁরাই সুশীলসমাজ আলো করলেন। তাও ২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচন বা ২০০৯-এর লোকসভার সময়েই তো এই নবজাগরূক সুশীলসমাজ ত্রিধাবিভক্ত বা ত্রিফলা হয়ে যায়! বুদ্ধিজীবী, বুদ্ধজীবী আর রেলজীবীতে। ২০১১-র বিধানসভার নির্বাচনে ‘পরিবর্তনের’ পর থেকেই তার কোওঅপ্টেশন বা গ্রাস পূর্ণ হয়ে যায়। ২০১১ থেকে সুশীলসমাজে বুদ্ধদেবের আমলে যদি ‘লিটারেটি’ সুশীলসমাজের অংশ হয়ে থাকে, তবে নববিধানে তার স্থান নেয় রাঙতা মোড়া টালিগঞ্জ-টেলিউডের ‘গ্লিটারেটিরা’ভূষণে-পুরস্কারে-সম্মাননায় সিঞ্চিত এই সুশীলসমাজ সরকারের ক্রোধোদ্রেক করতে পারে এমন কোনো বিষয়ে রা-কাড়া বন্ধ করে দেয়। কয়েকজন ছাড়া। অধুনা কারো কারো গলায় আবার স্বর ফিরে এসেছে। কিন্তু সুশীলসমাজের এক অংশের এই স্বরভঙ্গহ্রাস অন্যত্র বৃহত্তর–ভঙ্গকে সামাল দিতে পারছে 
কি?

কেন বলছি এই কথা? একটু বুঝিয়ে বলি। এই কিছুকাল আগে যে জে.এন.ইউ.-এর এক বাঁশিওয়ালার সঙ্গীত বন্ধ করতে রাষ্ট্র তেড়েফুঁড়ে নেমে পড়ল (এই ব্লগজিনে এই নিয়ে একটি লেখা দিয়েছিলাম, মনে আছে?) তার জেরে এই তো কমাস আগে  প্রেসিডেন্সিতে, সেটা আবার এখন আর কলেজ নয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়’, বিদ্যায়তনিক স্বাধিকার নিয়ে এক বিতর্ক সভার আয়োজনে জল ঢেলে দিলেন তার ভিসি। মনে আছে? কেমন সোনা মুখ করে’ মেনে নিয়েছে সেটা সুশীলসমাজের গরিষ্ঠ অংশ! দুহাতজোড়া পুরস্কারগ্রস্ত করতলের বন্ধন কাটাতে না পেরে তার যা অবস্থা! দেখলে  মাইকেল মশাই ‘সিওর বলতেন ‘স্থাপিলা বিধুরে বিধি স্থাণুর ললাটে, / পড়ি কি ভূতলে শশী যান গড়াগড়ি / ধূলায়’? হে সুশীলসমাজ ‘কেমনে ভুলিলে জন্ম তব কোন মহাকুলে’?

অথচ এই ‘কলেজে’ই বঙ্কিমচন্দ্রের সমবয়সী Society for the Acquisition of General Knowledge-এর এক সভা চলছে তাঁর পাঁচ বছর বয়সে, ১৮৪৩ সালে। সেখানেThe Present State of the East India Company’s Criminal Judicature and Police’ নামক বিষয়ে আলোচনা চলছেএমন সময়ে হিন্দু কলেজের প্রথিতযশা অধ্যাপক D. L. Richardson আলোচনাক্রমে সরকারের সমালোচনায় অতিষ্ঠ হয়ে বলে উঠলেন ‘in a hall which the government had erected and in the heart of a city which was the focus of enlightenment’ সরকারকে এমন সমালোচনা করা হচ্ছে যে সেটি প্রতিভাত হচ্ছে as oppressors and robbers’আর কলেজ পরিণত হচ্ছে den of treason’-এ, আর তাই সরকার ‘must close the doors against all such meetingsতখন ওই হিন্দু কলেজেরই এক প্রাক্তনী, তারাচাঁদ চক্রবর্তী, যিনি এই সভার অধ্যক্ষতা করছেন, তিনি বলে উঠলেন, ‘I consider your conduct as an insult to the society... if you do not retract  what you have said and make due apology, we shall represent the matter to the Committee of the Hindu College, and if necessary to the Government itself. We have obtained the use of this public hall, by leave applied for and received from the committee, and not through your personal favor. You are only a visitor on this occasion, and possess no right to interrupt a member of this society in the utterance of his opinionsতিরস্কৃত রিচারড্‌সনও চুপ মেরে গেলেন! মাইরি বলচি!


লেখাপড়া জানেন এমন ভাব করা সব্বাই যেমন শুরু করেন, আমিও ঔপনিবেশিক ভারত দিয়ে শুরু করলাম। কিন্তু তা বলে সেখানেই শেষ করতে হলো? যে সুশীলসমাজকে পুরসমাজের একটি মাত্র সীমিত অংশ বলে’ শুরু করেছিলাম, সেটাও দেখতে হলো যে রাখতে পারিনি! একখানা তারাচাঁদ চক্কোত্তি নেই! এখনও সুশীলসমাজ আছে বহিরঙ্গে বই কি! কিন্তু তার নির্দল থেকে দলীয় হয়ে যাওয়া, দলীয় থেকে নির্দলীয় হয়ে যাওয়া, একদলীয় থেকে রাতারাতি অন্যদলীয় হয়ে যাওয়া, পুরস্কার পেলেই বচন বদল, আর এই সবের মধ্যে তার নির্লজ্জ, ডোন্ট-কেয়ারি জ্ঞানরত্নপনা দেখে মনে হয় কবি গৌরাঙ্গ ভৌমিক তাঁর এই কবিতার লাইনগুলি বোধহয় এদেরই উৎসর্গ করেছেন!


সংখ্যাটাকে ভেবে নাও / গৌরাঙ্গ ভৌমিক

সংখ্যাটাকে ভেবে নাও,
পঁয়ষট্টি কোটির মধ্যে আমরা পঞ্চান্নজন বিশিষ্ট অতিথি
এদেশে জন্মেছি শুধু এদেশেরই মানুষের মহাপুণ্যবলে।
ভাবতে ভালো লাগে,
আমাদের সমর্থনে জনসভা হয়, প্রদর্শনী এবং নাটক।
আমাদেরই জন্যে আজও কলে জল আসে, এখনও বিদ্যুৎ জ্বলে,
গাঁয়ে-গাঁয়ে রজনীগন্ধার চাষ হয়।
শিল্পের উদ্দেশে আমরা জয়ধ্বনি দিলে শিল্পসৃষ্টি তবেই সার্থক
এবং আমরা না থাকলে নাগরিক সম্বর্ধনা দিতে হবে বলে
‘স্বাগত’তোরণ বাঁধা কখনও হত না,
এবং আমরা না থাকলে ফুল দিয়ে ঘণ্ট রাধত বর্বর  মেয়েরা।

সংখ্যাটাকে ভেবে নাও,
দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশে, মহামারী মন্বন্তরে, যখন অন্নের হাহাকার,
দ্রব্যমূল্য বর্ধমান, মানুষের মূল্য যাচ্ছে কমে
তখনও আমরাই আছি, প্রতিদিন রক্ষা করছি
এ দেশের ঐশ্বর্য সম্মান।

আছি বলে এখনও ভিখিরি এসে ভিক্ষে পায়,
ভালোবাসা, দয়ামায়া, প্রকৃত দুঃস্থের জন্য দুঃখবোধ—
এইসব মানবীয় গুণগুলি মানুষের মধ্যে বেঁচে আছে,
গুহার মুখের মতো বড় বড় হোটেলের দরজা খোলে, দরজা বন্ধ হয়।

সংখ্যাটাকে ভেবে নাও,
পঁয়ষট্টি কোটির মধ্যে আমরা পঞ্চান্নজন বিশিষ্ট অতিথি

এঁদের জন্যই কি সমর সেন বলেছিলেন, ‘চন্দ্রবিন্দু লাগে না’? আর নীরদ চৌধুরী দেখলে তাঁর প্রিয় শব্দটি বলতেন, দেশের ‘intellectual migraine’? কী বলেন স্যার!








0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন