কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ২৩ মে, ২০১৬

সোনালি বেগম

শ্রাবণ আকাশ


প্রবহমান নদীর কাছে আত্মসমর্পণপ্রতিনিয়ত সমাজের পরিবর্তন-ছবি উঠে আসছেআয়নায় প্রতিফলিত বিম্ব নড়েচড়ে জানান দিচ্ছে নানান প্রশ্নদীর্ণ রূপরেখা সমাজ-বৈচিত্র্য। মুম্বাই থেকে ওয়াহিদা এসেছে তাদের পূর্বপুরুষের ভিটেতেপশ্চিমবঙ্গের  মুর্শিদাবাদের মফস্বল শহর বহরমপুর। তার মায়ের কাছে কত গল্পই তার শোনা। এক বছর হলো মা চলে গেছেন অনন্ত পথযাত্রায়। দাদু এখনও শক্তপোক্ত মানুষসারাদিন বাগান করা, বই পড়া এবং একটি এন.জি.ও.র সঙ্গে জড়িয়ে থেকে দাদুর সময়টা  বেশ ভালোভাবে কেটে যায়ওয়াহিদা মুম্বাই-এর স্থানীয় একটি খবরের কাগজে কাজ করেস্মার্ট বুদ্ধিদীপ্ত বছর পঁচিশের যুবতী

‘দাদু, জানো তো, মানুষের সমাজবদ্ধতার খবর পাওয়া যায় আফ্রিকার নিয়াসা নদীর ধারে, একটি পুরুষ ও একটি কিশোরের ফসিল থেকে
‘কত বছরের পুরনো ফসিল বল তো?’
‘কুড়ি লক্ষ বছর আগেকার

আকাশে শ্রাবণ মাসের ঘন কালো মেঘের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছেবাড়ি সংলগ্ন বাগানে নারকেল, আম, জাম, কাঁঠালের গাছগোলাপ, বেল, জবা, হাস্নুহানা, শিউলি, সন্ধ্যামণি - এরকম নানান ফুলের গাছও আছেগাছ থাকা মানেই পাখির কলরব, মৌচাক, কাঠবিড়ালি, প্রজাপতির মেলাবহরমপুরের এই গাছগাছালি ভরা ঘর ছেড়ে মুম্বই-এর ছোট্ট দু’কামরার ফ্ল্যাটে যেতে ওয়াহিদার মন সায় দেয় না সারাদিন বাবা নিজের কাজে ব্যস্মা চলে যাওয়ার পর বেশ একাকিত্বে ভোগে সে 

‘দাদু, ভীমবেটকার দেওয়াল চিত্রগুলিতে সমাজবদ্ধতার চিত্র খুব সুন্দরভাবে ফুটে আছে
‘তাই তো রে দিদিভাই। তোর মা যখন খুব ছোট ছিল, আমরা সবাই মিলে ওখানে বেড়াতে গিয়েছিলাম।’ দাদুর চোখদুটো ছলছল করে উঠল
ওয়াহিদা দাদুর কাছে সরে এলো। কী বিচিত্র এ সংসার! ক’দিন একসঙ্গে হেসে খেলে, জীবনের শেষ পর্যায়ে মানুষ কত একা হয়ে যায়!

বেলা বারোটাফেসবুক, টুইটার, হোটসঅ্যাপ ইত্যাদি নানান সোশাল নেটওয়ার্কিং-এ মানুষের ব্যস্ততার নতুন সংজ্ঞা নির্মিত হচ্ছে। ওয়াহিদা ফেসবুকে চ্যাট করছে -
‘ডার্লিং, বহরমপুর এসে গেছ?’
‘ইয়েস, ডার্লিং’  
‘গঙ্গার ধারে উমাসুন্দরী পার্কের কাছে অপেক্ষা করছি, চলে এসো, প্লিজ!’
‘ও.কে. ডার্লিং!’

এরকম একজন অচেনা প্রেমিকের সান্নিধ্য পেতে অজানা কৌতূহল কাজ করতে থাকে তার
জিনস টপ পরে ওয়াহিদা মোবাইল হাতে ‘আসছি দাদু’ বলে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল
কুমার হস্টেলের মধ্যে দিয়ে ভগ্নপ্রায় পুরনো ঘরগুলি এবং নতুন ঘরগুলি পেছনে ফেলে আপনমনে এগোতে থাকল সে

‘হাই, আই অ্যাম আনোয়ার!’
‘হাই, মি ওয়াহিদা!’

অবাক পৃথিবীর ঘাস মাটি ভিজে উঠল তখনমুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছেআনোয়ার জিনস শার্টে বছর তিরিশের যুবককাজ কিছুই করে নাতবে বাপ বড়লোক। খানদানি কাপড়ের ব্যবসাভাগিরথীর জল বিপদ সীমার কাছাকাছি বয়ে যাচ্ছেসেই কালো গভীর জলে ভেসে যাচ্ছে শত শত ইতিহাসের লৌকিক গল্পগাথা

‘চলো, নৌকায় নদীর ওপারে যাই, ওয়াহিদা!’
‘ও.কে. নো প্রবলেম, আনোয়ার!’

একে একে নৌকা বোঝাই হতে থাকলআনোয়ার ওয়াহিদার হাত ধরে নৌকায় উঠে পড়ল। এমন সময় মোবাইল বেজে উঠলহিপ পকেট থেকে আনোয়ার মোবাইল বের করলমোবাইলের স্ক্রীনে হাত ছুঁয়ে হেসে উঠল সে - ‘ওঃ শাকিলা ডার্লিং! জাস্ট কামিংগঙ্গার ধারে উমাসুন্দরী পার্কের কাছে চলে এসো, প্লিজ!’  
আনোয়ার তৎক্ষণাৎ নৌকা থেকে ঘাটে নেমে পড়ল‘বাই!’ ওয়াহিদাকে নিয়ে যাত্রীবোঝাই নৌকা দুলে উঠল ভাগীরথীর জলে
                        
  
       
             









0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন