কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০১৬

রিমি দে

সাপ
   
দফলাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন বেলা প্রায় সাড়ে বারো। নীলু মানে কাজের মেয়েটা বলল, দাদার গাড়িটা এগারোটা থেকেই নেই। সবাই চুপ। মাসী মানে দফলার মা ফ্রিজ খোলার ছুঁতো করে খাওয়ার ঘরে চলে গেল। বাকিরা এ ওর মুখ চাওয়া  চাওয়ি করে সরে গেল। নীলু মুচকি হাসিমাখা ঠোঁট বেঁকিয়ে সব্জি কাটায় মন দিল।  বৃদ্ধি শেষ হয়েছে তাও ঘন্টা দেড়েক হবে।

দফলার  বয়স তিরিশ ছুঁই ছুঁই এই বয়সে তো আর বারবার করে এটা করতে নেই, ওটা করতে নেই বলা যায় না! হিন্দুশাস্ত্র মেনে যখন বিয়ে করছিস, তা হলে তো আচার বিচার করতেই হবে! না মানতে চাইলে এসব ঝামেলায় যাবার দরকারটাই বা ছিল কী! সই করা বিয়ে করলেই হতোআজকাল প্রায় সকলেই তাই করে। তাছাড়া দফলা বিয়েই করতে চাইছিল না। মাসীর জোরাজুরিতেই একপ্রকার রাজি হয়েছে। কারণ অবশ্য ওপেন সিক্রেট।

দফলা যখন ফিরল ঘড়িতে কাঁটা তিনটে ক্রস করে গেছে। খুব ক্যাজুয়াল মুখযেন কিছুই ঘটেনি। বাড়ির কেউ কোনো প্রশ্ন করলও না। যেন স্বাভাবিক অন্য দিনেরই মতো দুপুরের খাওয়া-দাওয়াও শেষের দিকে। ক্যাটারারের লোকজনই সব দেখছে।  বাড়ির লোকের মেজাজ ফুরফুরেই। মহিলামহল সাজুগুজুতে মন দেবে এক্ষুনি। পরিহাস প্রিয় সবার জিজু বেণুদা কাছেই বাবুপাড়ায় থাকে। ছুটি নিয়েছে দফলার বিয়ের জন্য। অনেকক্ষনণ দফলাকে না দেখে পেছন থেকে হঠাৎ দেখে ঘাড়ের ওপর মাংসল করতলের চাবড় মেরে বলল, কী হে শালাধন, কোতা ছিলে এতক্ষণ? দফলা গলা নিচু করে, বেণুদা!

বেণুদা একখানা চোখ টিপে অন্য ঘরে চলে যায়দেহভাষায় হাল্কা আস্কারা খোলাছাদের নিচে ডানদিকটায় ছোট টেরেস রয়েছে। দফলার বাবা ওই নিরিবিলিতে বসে সকাল-বিকেল গ্রিন টি খেতেন। বাবা চলে যাবার পর থেকে জায়গাটার দখলদারি নিয়েছে দফলা। জায়গাটা বেশ মিষ্টি। শিলিগুড়ির প্রায় অনেকটা দেখা যায়। অথচ যিনি মাধুর্য উপভোগ করছেন, তাকে দেখা যায় না। দফলা সেখানটায় বিষাক্ত ধোঁয়া ওড়ানোর জন্য দশ মিনিটের বিরতি মঞ্জুর করে এনেছে। আধঘণ্টার মধ্যেই তৈরি হতে হবে। কুড়িটা আই ২০ বাড়ির সামনে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার মধ্যে একটি রজনীগন্ধায় মোড়া।

দফলা ঘড়ির দিকে তাকায়। তারপর এমন একটা পয়েন্ট অব ভিউ থেকে ভাবনাটা ওকে চেপে বসে যে দফলা কিংকর্তব্যবিমূঢ – বিয়েটা কি খুব জরুরি ছিল! কেন নয়! দু’ দিকেই প্রশ্ন! তাহলে আমি কে! আমি কেন পারছি না স্বাভাবিক হতে! কত মানুষেরই বিয়ের আগে সম্পর্ক থাকে প্রেমের, আত্মীয়-অনাত্মীয়দের সাথে পেছন ফিরে তাকানোর কী আছে প্রয়োজন! মামার মৃত্যুর পর থেকে লেখা ভালোই তো আছে! তবু আমাদের মিলের ইঙ্গিত শুরু হয়েছিল যেদিন মামা প্রথম ভাগিয়ে এনেছিল বিয়ে করে লেখাকে আমার এইচ এস ছিল। লেখাও বারো ক্লাসেই পড়ত তারপর কত জল বয়ে গেছে জীবনের ওপর নিচ ও মাঝখান দিয়ে! আর মিমো তো আমার মেয়ে! লোকে যা জানুক, তাতে কী? কিন্তু আমি আর লেখা জানি, সত্য কী। আমি সব দায়িত্ব পালন  করেছি। তাছাড়া আমি জানি, লেখা ডোডো আর মিমোকে নিয়ে মন্দ নেই ও চায়ও না আজকাল যে আমি খুব একটা জড়িয়ে থাকি ওর সংসারে তবু! তবু কী! না এর উত্তর আমার কাছে নেই।

চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে উঠে দাঁড়াতে যাবে, এমন সময়ে টের পায় পা আটকে গেছে। যেন একটি ময়াল সাপ ওর পা দুটোকে একসাথে পেঁচিয়ে রেখেছে। হাত দুটো শিথিল কোনো জোর পাচ্ছে না। সাপ তার সমস্ত ঠান্ডা দিয়ে দফলাকে নিস্তেজ করে দিচ্ছে। শরীর ও মনের শীতল দংশন ব্যক্তিত্বকে অসার করে তুলছে।

দাদা দাদা করে কে যেন সিঁড়ি থেকে ডাকছে! দফলার মাথা বনবন করে ঘুরছে।










0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন