কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০১৬

সুমী সিকানদার

কান্নার নাম 

রিকশা থেকে নেমে হুড়মুড় করে সাবেকি দোতালা বাড়ির বারান্দায় গিয়ে উঠল প্রিয়া মাথায় খানিকটা বৃষ্টির ছাঁট লেগেই গেছে নাকের আগা সুড়সুড় করছে এখনই হাঁচি অবধারিত দরজাটা খোলাই ছিল, ঠেলা দিয়ে ঢুকতেই সুস্মিতা দৌড়ে এলো-
কত
দেরি করেছ বলো তো, আঁধার হয়ে গেছে তার ওপরে বৃষ্টি আমি তো ভয়েই শেষ প্রিয়াপু
খোঁপা
খুলে দিয়ে চুল মেলে দিয়ে সোফায় বসল প্রিয়া
আর
বলিস না রে! দেরি হয়ে গেল একঘন্টা ধরে তো...
আঁচল
দিয়ে মাথা মোছে সে  
ওঠ
তো, আর বসো না একেবারে কাপড় ছেড়ে এসো আপু নইলে ঠান্ডা লেগে যাবে আমি ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে দিচ্ছি ব্যাগ কোথায় তোমার?
অস্থিরভাবে একের পর এক প্রশ্ন করেই চলেছে সুস্মিতা  

ড্রইংরুমের
কোণা চামড়ার বড়সড় হাতব্যাগ তাতেই দু’টো কাপড় আর কিছু জরুরী জিনিস নিয়ে এসেছে প্রিয়া আজ রাতে সে সুস্মিতার বাসায় থাকছে কাল ভোরে দুজনকেই সরাসরি অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় চলে যেতে হবে

ঘন্টায় ৩০ টাকা
চুক্তি করে সারা দুপুর অমিত আর প্রিয়া ঘুরছে ঘুরছে তো ঘুরছেই টইটই করে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে শেষে চলে গেছে পুরনো ঢাকায় বিউটি বোর্ডিং সেখানে তোফা খানা আজ চলো রাক্ষস হই! ভর্তা, ডাল, কয়েকপদ মাছ, মুরগি এসব দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে শেষপাতে রসগোল্লা খেয়ে তো প্রিয়া আর নড়তে পারে না
অমি
এখন যাব কী করে!
আরে
এখনই যাবে কী! একটু জিরিয়ে তারপর যাবে
এখানে
জিরাবোই বা কী করে!

খুব
সাবধানে রিকশায় প্রিয়াকে তুলেছে অমিত রিকশা চলতে শুরু হতেই বাতাস ছেড়ে দিল আঁচল উড়তে লাগল পতপত চুল উড়তে উড়তে পেছনে অমিত বলছে - চলো রিকশায় সংসার পাতি তুমি আমাকে নিয়ে চালাবে কিছুদিন আর আমি তোমাকে নিয়ে কিছুদিন

আহসান
মঞ্জিলে ঢুকে গোলাপী চূড়ায় মুগ্ধ তাকিয়ে রইলো প্রিয়া কী গোছানো পরপর স্থাপত্য! কী অমায়িক মনলোভা রং! ঘাসে বসে কতক্ষণ তারা কথা বলে, কতক্ষণ নিশ্চুপ জলরঙ ফড়িং ক্যামেলিয়ায় কাছে যায় কিছুক্ষণ উড়ে বেড়ালেও সে দূরে যায় না প্রিয়জনকে সে চোখে হারায়

চারিদিকে
অক্লান্ত পান্নাসবুজ চোখ, ধাঁধিয়ে যায় পথচারী হাঁটতে গিয়ে থমকে যায় নিবিড় সবুজে গাছগুলির মাঝে মাঝে ঘাসে শুয়ে পড়তে ইচ্ছে হয় তারাও একের গায়ে একে ঢলে পড়ে সেই কোন অনাদিকাল থেকে এসব গম্ভীর বৃক্ষরা দাঁড়িয়ে আছে তো আছেই অমিত প্রিয়ার মতো তারা পাশাপাশি আছে কিন্তু কাছাকাছি নয়। 

অমিতের
সাথে সন্ধ্যার মুখে রিকশায় উঠতেই তারা বৃষ্টির কবলে পড়েছে
এখন
কী হবে অমিত? আমার গলাটা যে যাবে! কাল কী করে উপস্থাপনা করব?  কাঁদো কাঁদো স্বর প্রিয়ার অমিত শান্ত স্থির আলতো করে প্রিয়াকে ধরে আছে এভাবে ধরে থাকাটাই তার জীবনের একমাত্র আনন্দ চারিদিকে ভালো করে প্লাস্টিক দিয়ে টেনেটুনে ঢেকে দিচ্ছে সে প্রিয়ার শরীর আহা তার যেন ঠান্ডা না লাগে! তাহলে বাবুটারও ঠান্ডা লাগবে প্রিয়া মা ডাক শোনার জন্য প্রতিটা মুহূর্ত একটা ঘোরে সময় কাটাচ্ছে
তোমার কি আবার ক্ষিদে পেয়েছে প্রিয়া?

প্রিয়া
অন্যদিকে তাকিয়ে আছে ভাগ্যিস বৃষ্টিতে তার মুখ আগে থেকেই ভেজা ছিল! নইলে অমিত বুঝে যেত তার সারা জীবনের অপারগতার এই নিঃশব্দ কান্নাকে

দু
হাতে দুমগ কফি নিয়ে ঘরে ঢুকল সুস্মিতা
নাও,
চিনি হলো কী না দেখ
প্রিয়া
আরামে চুমুক দিচ্ছে- কী দারু, একদম পারফেক্ট
অমিতদা
নামিয়ে দিয়ে গেল তাই না?
চুপ
করে কফি খাচ্ছে প্রিয়া যেন কোনো কথা সে শুনতে পায়নি
কিচ্ছু
বলো না থাক! কিন্তু এভাবে কতদিন!  রিমন ভাই তো আগামী মাসেই ফিরবেন তখন...
তুই
যা তো ব্লাউজগুলো আর মাটির গহনাগুলো নিয়ে আয় এরপর দোকান বন্ধ হয়ে যাবে আমি খালাকে খাইয়ে দিচ্ছি

সুস্মিতার
মা কেমোপেসেন্ট, তা ওরাল ক্যান্সার লিকুইড খাবার ছাড়া তিনি কিছু খেতে পারেন না বাটিতে জাউভাত নিয়ে তাতে লেবু চিপে খালার সামনে চলে এলো খালা খেয়ে নেন তো, বলে মিষ্টি হাসল প্রিয়া
আহারে
সোনা তুমি আবার কষ্ট করে নিয়ে এসেছ ধীরে ধীরে বলেন খালা বেড়াতে এসেও শান্তি নেই। তোমার ডেট কবে প্রিয়া?
দেরী
আছে আপনি খেয়ে নিন
রিমন কি তাড়াতাড়ি ফিরছে?
জ্বী। এবার কথা বন্ধ
মুখ হা করুন তো দেখি!
আমি
আর খেতে পারি না মা! মরে যেতে আমার আফসোস নেই কিন্তু... কথা শেষ হতে না হতেই সুস্মিতা দৌড়ে এসেছে
মা
খাচ্ছে না, তাই না প্রিয়াপু? আমি জানি তো দাও আমাকে দাও
মায়ের
গলায় বিব চাপিয়ে দিয়ে বাবু বানিয়ে মাকে খাওয়াচ্ছে সুস্মিতা মা মুখভর্তি খাবার নিয়ে মাথা নাড়ছেন কো করে গিলে বলছেন,
দেখলে
প্রিয়া তোমার বন্ধু কী রকম হুজ্জোতি করে খাওয়াচ্ছে! নিজে কিন্তু মুখের মধ্যে খাবার দিলে গাল গোল্লা করে বসে থাকত আর কতক্ষণ পর ফুত করে ফেলে দিত
ঘরের
ভিতর তিন বয়সী তিন রমণী কলকল হেসে উঠল এই হাসির মাঝে কো্নো বেদনার ছায়াও ভিড়তে পারে না


প্রিয়া তলপেটে হাত দিতে তাকে স্পর্শ করল পাঁচমাস শুরু হয়েছে মাঝে মাঝে সে গুঁতো দিয়ে জানান দেয়, আসছি দাঁড়াও না! কয়েক মাস পরেই কোলের মধ্যে গ্যা মেরে বসে থাকবে অরিত্রিকা প্রিয়া তার মুখে খাবার দিতেই সে মুখ গোল্লা বানিয়ে রেখে দেবে, তারপর ফুত করে সব খাবার ফেলে দেবে  প্রিয়া বুঝে নেয় সে আসলে কী চাইছে।  প্রাণপচেষ্টাতেও নিজেকে স্থির রাখতে পারছে না প্রিয়া কান্না বাড়ছে ফুলে ফুলে উঠছে তার শরীর এই কান্নার নাম কি জানো অমিত?

অমিত
খুব আরামের এক সিট পেয়েছে জানালার ধারে সে কোলাহল থেকে ফিরছে কেবল শেষ এসএমএস-টা সেন্ট হচ্ছে না তুমি কি ঘুমোচ্ছো প্রিয়া?



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন