কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০১৬

অভিজিৎ মিত্র

ভাগাভাগি

মেয়েটা রোজ ছাতা ভুলে যায়। বালিহল্ট ষ্টেশনের ডাউন প্লাটফর্মের পেছন দিকটায়, উল্টোদিকে তাকালেই যেখানে কেএমডিএ-র জলট্যাঙ্ক, আমরা রোজ সকাল ১০.৫৫-র লোকালটা ধরব বলে দাঁড়াই। সকালের চড়া রোদ থেকে বাঁচতে আমার একটা ছাতা, দুজনে শেয়ার করি। মেয়েটা ঠিক আমার পাশে এসে দাঁড়ায়, আমি একটু হেসে ছাতাটা ওর দিকে হেলিয়ে দিই, ও-ও হেসে আমার গা ঘেঁষে সরে আসে। ট্রেন এলে ও লেডিসে ওঠে, আমি পাশেরটায়।

একদিন তুমুল বৃষ্টি এলোমেয়েটা আমার গায়ে প্রায় মিশে গেল। ওকে বৃষ্টি থেকে  বাঁচাতে ডানহাতে ছাতা ধরে বাঁহাত ওর ভিজে পিঠে রাখলাম। আমিও মিশে গেলাম। সেদিন ট্রেন প্রায় ১০ মিনিট লেট। আমরা এক কামরায় উঠলাম। সেই প্রথমবার কথা হলো
- আজও আপনার নামটা জানা হয় নি। কোথায় থাকেন? কী করেন?
- মৌসুমি। বালিহল্টের কাছেই একটা ওয়ান বি-এইচ-কে তে ভাড়া থাকি। সল্টলেকে একটা মাড়োয়ারি ফার্মে টাইপিস্টের কাজ করি। আপনি?
- রাজা। সেক্টর ফাইভে একটা ক্যান্টিনে ক্যাশিয়ার। কাছেই থাকি আমার খুড়তুতো ভাইয়ের বাড়িতে। হন্যে হয়ে একটা থাকার যায়গা খুঁজছি। একা মানুষ, একটু মাথা গুঁজলেই হলো
মৌসুমি এবার চোখ তুলে তাকাল-
- আমার ফ্ল্যাটটা শেয়ার করবেন? ওটার ভাড়া বড্ড বেশি, চার হাজার টাকা। আপনি এলে বাড়িতে অসুস্থ মাকে আরেকটু বেশি টাকা পাঠাতে পারব।

পরের দিন এসে উঠলাম মৌসুমির ফ্ল্যাটে। আমি মাদুর পেতে ড্রয়িংরুমে শোয়া শুরু করলাম যাতে মৌসুমির কোনো সমস্যা না হয়। সকালে ও দুজনের ব্রেকফাস্ট বানাতে  শুরু করল খেয়ে আমার ছাতার নিচে দুজনে ষ্টেশন অব্দি। দুপুরে যে যার জায়গায় লাঞ্চ করি রাত্রে আবার মৌসুমি দুজনের খাবার বানায়। প্রচুর গল্প হয়। জীবন হঠাৎ সুন্দরভাবে চলতে শুরু করল।

একমাস পর আমার বুকে হঠাৎ কফ, এত কাশি যে দুদিন অফিস কামাই। দ্বিতীয়দিন রাত্রে মৌসুমি আমার বুকে গরম তেল মালিশ করে দিল।
- ঠান্ডা মেঝেয় শুয়ে আপনার বুকে কফ জমেছে। আজ থেকে আমরা বেডরুমের বিছানাটা শেয়ার করে শোব। আপনি পূবদিকে, আমি পশ্চিমে। মাঝে দুটো পাশবালিশ পেতে দেব।
- কিন্তু, সেটা কি...
- কোনো কিন্তু নয়। যে রকম বললাম, আজ থেকে সেটাই হবে।


সাতরাত আমরা এক বিছানা ভাগাভাগি করে শুলাম। কোনো সমস্যা হলো না। আমি ভালো হয়ে উঠলাম। কিন্তু আট নম্বর সকালে, রবিবার, সকাল নটায় দুজনেই একসঙ্গে  ঘুম থেকে উঠে বুঝতে পারলাম, একটা গন্ডগোল হয়ে গেছে। কখন যে আমাদের মাঝের পাশবালিশগুলো মেঝেয় পড়ে গেছে...   

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন