কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০১৬

<<<< সম্পাদকীয় >>>>

কালিমাটি অনলাইন / ৭ 

সারা বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন ভাষায়, বিভিন্ন বিষয় ও ভাবনায়, বিভিন্ন আঙ্গিকে প্রতিদিন  যে সাহিত্য সৃজন নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে হয়ে চলেছে, তার সংখ্যা ও আয়তন আমাদের ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে অনুমান করা একেবারেই অসম্ভব। না, এখনও পর্যন্ত তা গণনা করার কোনো পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিনা, আমাদের জানা নেই। আর যদি তা কোনোদিন সম্ভবও হয়, তা শুধুমাত্র পত্র পত্রিকায় এবং আন্তর্জালে প্রকাশিত লেখাগুলির স্ট্যাটিক্টিস তুলে ধরতে পারে। কিন্তু এর বাইরে যে বিশাল ও বিপুল রচিত অথচ অপ্রকাশিত রচনাসম্ভার প্রতিটি সাহিত্যসৃজনশীল মানুষের ব্যক্তিগত ভাঁড়ারে মুখ লুকিয়ে আছে, তার হিসেব নিকেষের ব্যবস্থা কী হবে! আমার একটি  সাহিত্য সন্ধ্যার কথা এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে। অনেক বছর আগে জামশেদপুরে আয়োজিত একটি সাহিত্য সভায় স্বনামধন্য সাহিত্যিক নারায়ণ সান্যাল মশাই এসেছিলেন। তিনি তাঁর সাহিত্য আলোচনায় প্রাসঙ্গিক ভাবে এই বিষয়টির ওপর আলোকপাত করেছিলেন। এই যে এত সাহিত্য সৃজন হচ্ছে সারা পৃথিবী জুড়ে, তার ভবিষ্যত কী? এবং যা লেখা হচ্ছে, তা সবই তো আর মুদ্রিত হচ্ছে না! এমনিতেই  সবার মুদ্রিত ও প্রকাশিত লেখা অন্য সবার পড়ার সুযোগ ঘটে না। আর যে লেখা  মুদ্রিত না হয়ে লেখকের কাছেই থেকে গেল, তা অন্য কারও পড়ার সম্ভাবনা আরও কম। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, যদি কারও লেখা অন্য কেউ পড়ার সুযোগ পেল না, বা মুষ্টিমেয় কয়েকজন মাত্র পড়ার সুযোগ পেল, তাহলে কি সেই লেখাটার প্রতি কোনো সুবিচার করা গেল না? আর যদি লেখাটি মুদ্রিত ও প্রকাশিত না হওয়ার জন্য কেউই পড়ার সুযোগ পেল না, তাহলে সেই লেখাটির জন্মই কি ব্যর্থ হয়ে গেল? আসলে প্রশ্ন হচ্ছে, লেখক লেখেন কার জন্য! সহজ উত্তর হচ্ছে, পাঠক-পাঠিকাদের জন্য। কোনো লেখকের কোনো লেখা যদি কোনো পাঠক-পাঠিকার কাছে পৌঁছতেই না পারে, তাহলে ভাবা যেতেই পারে, সেই লেখাটির সৃষ্টির উদ্দেশ্য মাঠে মারা গেল। আর সেক্ষেত্রে সেই লেখাটির গুণমান যেমন আদৌ বিচার করা গেল না, তেমনি সিদ্ধান্ত নেওয়াও গেল না লেখাটি বস্তুত পাতে দেবার উপযুক্ত কিনা। সুতরাং লেখক  যা কিছু লিখেছেন তা পাঠক-পাঠিকার কথা ভেবেই লিখেছেন। তা কারও পছন্দ হবে  কী হবে না, তা পরের কথা। এখন যাদের লেখা মুদ্রণের সহায়তায় প্রকাশের মুখ দেখার সৌভাগ্য লাভ করছে, তাদের সৃজনের উদ্দেশ্য না হয় চরিতার্থ হলো এবং মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হলো। কিন্তু যাদের লেখা মুদ্রণ ও প্রকাশের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত থাকল, তাদের সৃষ্টির কি কোনো মানেই থাকল না? তারা কি সেই সৃষ্টি না করলেই পারতেন? প্রয়াত নারায়ণ সান্যাল মশাই সেদিন একটা খাঁটি কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সব লেখাই মুদ্রিত হয় না, প্রকাশিত হয় না। আর তা না হওয়াই ভালো। এবং আপনারা শুধু পাঠক-পাঠিকার কথা ভেবেই লিখবেন না বা তাদের জন্যই লিখবেন না। বরং নিজের জন্যও লিখুন। এবং সেই সৃষ্টির মধ্যে নিজের আনন্দটুকু খুঁজে নিন। আজ বহু বছর পর নারায়ণ সান্যাল মশাইয়ের কথাগুলো মনে পড়ে গেল সেদিনের এক ঘরোয়া আড্ডার পরিপ্রেক্ষিতে। এত এত যে লেখা হচ্ছে এবং সমান তালে তা মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়ে চলেছে অসংখ্য পত্র-পত্রিকায় ও আন্তর্জালে, এটা হয়তো ঠিক হচ্ছে না। আসলে সব লেখাই তো আর সমান ভালো হয় না বা মানোত্তীর্ণ হয় না। আর তাই আসল ও নকল আলাদা করা যায় না, অথচ একই দরে বিকিয়ে যাচ্ছে। গুলিয়ে যায় ভালো ও মন্দের ভাবনা। না, আমরা কারও  সাহিত্যচর্চা ও সাহিত্যসৃষ্টির প্রয়াসকে নিরুৎসাহিত করছি না আদৌ, বরং স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু সেইসঙ্গে এ ব্যাপারেও সচেতন থাকতে অনুরোধ করছি যে, কোন্‌  লেখাটি তারা শুধুমাত্র নিজের পড়ার জন্য রাখবে আর কোন্‌, লেখাটি পাঠক-পাঠিকাদের জন্য প্রকাশ করবে, এটা গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখা প্রয়োজন। কেননা যে  লেখাটি লেখার পর সেই লেখককে আনন্দদান করতে পারে, তা হয়তো অন্য পাঠক-পাঠিকাদের কাছে নিতান্তই বিরক্তির কারণও হয়ে উঠতে পারে!  

‘কালিমাটি অনলাইন’ ব্লগজিনের প্রিয় পাঠক-পাঠিকাদের কাছে আবার আমাদের বিনীত অনুরোধ, আপনারা অনুগ্রহ করে প্রকাশিত লেখা ও ছবি সম্পর্কে আপনাদের অভিমত ব্লগজিনের ‘কমেন্টবক্সে’ লিপিবদ্ধ করবেন। প্রতিটি লেখা ও ছবির নিচে ‘কমেন্টবক্স’ আছে।

সবাইকে আমাদের শ্রাবণী শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা জানাই।        
     
আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :

দূরভাষ যোগাযোগ :           
0657-2757506 / 09835544675
                                                         
অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :
Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India

      

1 কমেন্টস্: