কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৬

অচিন্ত্য দাশ

একটা বাড়ি একটা ছাগল


একতলা এক কামরার বাড়ি, পেছনে উঠোন, সামনে খানিকটা খালি জমি, লোহার ছোট গেট আলতাফ হুসেনের কোয়াটার সে লোহা গালাবার কাজ করে কোম্পানীতে বাড়িতে থাকে অনেকে আলতাফ আর তার বৌ, বুড়ো বাবা, আলতাফের ছেলে-ছেলেবৌ, নাতি বারান্দা ঘিরে চালাঘর করতে হয়েছে, তার ভেতর আবার পার্টিশন। নইলে এত লোকের জায়গা হবে কী করে! তবে সামনের  জমিতে একটা টগর গাছ, কটা ফুলগাছের চারা – জবা, সূর্যমূখী এইসব। ছেলেবৌ আবার সখ করে লাগিয়েছে লতানে ‘মানি-প্ল্যান্ট’

ওইটার ওপরই ছাগলছানাটার নজর। বেড়ার লতাপাতা এমনকি দু-একটা ফুলগাছও সে মাঝেসাঝে চিবিয়ে যায়, তবে তার ধারণা, ওই মাটি-থেকে-গজিয়ে-ওঠা  জানালার-শিক-জড়িয়ে-ছাদ-ছুঁইছুঁই পানপাতাগুলোর স্বাদ নিশ্চয়ই অমৃতের মতো  হবে। গেট খোলা পেয়ে একদিন ঢুকেছিল ওইটে তাক করে। আলতাফের বাবাটা কী করে যেন টের পেয়ে লাঠি নিয়ে তেড়ে এলোছাগল একবার ডানদিকে একবার  বাঁদিকে দৌড়ে ভড়কি দিয়ে তিন লাফে পালালো। পড়ে গিয়ে বুড়োর পা মচকালো বিচ্ছিরি ভাবে। তারপর থেকে বুড়ো বাবার কাজ নাতি করে। ডাণ্ডা নিয়ে তাড়া করে আর খিলখিল হাসে। ছাগল জানে, এ মারলে তেমন লাগবে না, দুজনের খেলা বেশ জমে যায়।

দেশ যেমন উন্নতি করতে চায়, লোহার কারখানাও চায় মুনাফা বাড়াতে। এত লোক-লস্কর রাখতে চায় না। বিশেষ করে আলতাফের মতো যারা পঞ্চাশ পেরিয়ে  গেছে। ওই রকম বয়সের বেশ কিছু লোকেদের হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে চাকরি খতম করে দেওয়া হলোআলতাফরা চলে গেল দেশের বাড়িতে, কোম্পানীর লোক  এসে বাড়িটা ভেঙ্গে দিয়ে গেল। এসব পুরনো-ঝুরনো বাড়ি আর রাখা হবে না, এখানে বড় বড় ফ্ল্যাট হবে।


ছাগল ভাবে এসব কী হলো! প্রথম কদিন ভয়ে যায়নি, তবে তারপর একদিন  সাহস করে টহল দিয়ে এলো সে ইট আর রাবিশের ঢিপি। টগর গাছটা কিন্তু  আছে। ডালের সঙ্গে বাঁধা কাপড় শুকোবার দড়িটা মাটিতে লুটোচ্ছে। প্ল্যাস্টিকের ভাঙ্গা বালতি, ছেঁড়া ক্যালেণ্ডার, দু-টুকরো হয়ে যাওয়া সূর্যমুখীর টব। হ্যাঁ, সেই চকচকে পানপাতাওয়ালা লতানে গাছটাও আছে। তবে দেয়াল বা জানালা না  থাকায় লতা মাটিতে ছড়িয়ে আছে। ভাঙ্গা ইটের পাঁজার টপকে ছাগল ‘মানি-প্ল্যান্ট’ এর পাতা চিবিয়ে এলোনা বুড়ো, না আলতাফের ছেলেবৌ, কেউ লাঠি নিয়ে  তেড়ে এলো না। না সেই ছোট ছেলেটা খিলখিল করে হাসল। পাতাগুলোর স্বাদটা  মন্দ নয়, তবে ছাগলের মনটা আজ মোটেই ভালো নেই। বাড়িটা কেন যে ভেঙ্গে দিয়ে গেল ওরা

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন