কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬

ঈপ্সিতা চক্রবর্তী

শিরোনামহীন চার


* হালকা করে গান চালিয়ে হাতে চায়ের কাপ নিয়ে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালেন বিভাস| আহা, সরোজের গলাটা এত সুন্দর, আগে কখনো খেয়াল হয়নি! সরোজিনী তাঁর স্ত্রী হলেও তাকে কখনো সেইভাবে পাননি বিভাস| সারাজীবন গান নিয়েই কেটেছে  সরোজের| তবু আজ যখন সরোজ নেই তখন কোনো আক্ষেপ নেই বিভাসে, কারণ  সরোজের যে গানের প্রতি অভিমান করে তিনি দূরে সরে গেছিলেন, সেই গানেই এখন সরোজের ছোঁয়া পান তিনি|

* মনোময়ের প্রিয় জায়গা এই গঙ্গার ধারের বেঞ্চটা| পাশেই একটা ছাতিম গাছে ফুল ভরে এসেছে| বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে গিয়ে বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠল| বাসন্তীর সাথে এখানেই এসে বসতেন ছুটির দিনের সন্ধ্যেগুলোয়| ছাতিম ফুলের গন্ধে  মাতোয়ারা হয়ে উঠতেন দুজনেই| চোখে চোখে বলা হয়ে যেত অনেক না বলা কথা| বাসন্তী চলে গেছেন মাত্র কটাদিন আগে| আজ আবার এখানে এসে বসেছেন| গঙ্গার  বুকে ডুবে যাওয়া সূর্য আর ছাতিম ফুলের মাতাল করা গন্ধে আবার খুঁজে পেলেন তাঁর বাসন্তীকে| বাসন্তী তার প্রিয় এই জায়গা ছেড়ে কোত্থাও যায়নি!

* সুনন্দাকে প্রবাল এই মিউজিক সিস্টেম উপহার দিয়েছিলেন তাদের তিরিশতম বিবাহবার্ষিকীতে| আসলে সুনন্দা গান শুনতে ভীষণ ভালোবাসতেন| স্ট্রাগল করতে করতে যখন সংসারে একটু সমৃদ্ধি এলো, তখন এই উপহার কিনেছিলেন প্রবাল| 'আজ  ‘জানে কি জিদ না কারো/ইউহি প্যাহলু মে ব্যাঠে রাহো এই আকুতি আজ ছেয়ে  ফেলছে মফঃস্বলের সচ্ছল এই ফ্ল্যাটের প্রত্যেক কোণা| হাজার জেদ করলেও সুনন্দা  ফিরে আসবেন না| আসলে উচ্চতার ইঁদুর দৌড়ে প্রবাল এতই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে, কখন মারণব্যাধি খেয়ে ফেলেছিল সুনন্দাকে, তিনি খেয়ালই করেননি| আজ  বোঝেন, বিলাসবহুল জীবনের থেকে সুনন্দার সঙ্গ অনেক বেশি কাম্য ছিল|

* রোজ রাতে মদ খেয়ে বাড়ি এসে বাওয়াল করত হারু| মেয়েদুটো ভয়ে সিঁটকে থাকত প্রত্যেকটা রাত| হারু বাড়ি ফিরেই সব রাগ সব হতাশা ঝেড়ে ফেলতে হাতের সুখ করত মালতীর ওপর| মেয়েদুটোও ছাড় পেত না| যেন এইভাবেই সংসারের সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে! মারতো, পিটতো, খারাপ কথা বলে শান্তি খুঁজে নিত|  আবার শেষরাতে সেই মালতীর ব্যথা দূর করত আদরে, সম্ভোগে| এইভাবেই কেটে গেছে পঁচিশ বছর একসাথে| বড়টার বিয়ে হলো, পাকা দালান হলো, চাষের জমি হলো| সংসারে এখন স্বচ্ছলতা উপচে পড়ছে চারিদিকে| ছোট মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েই   মালু কেমন যেন নেতিয়ে পড়েছিল| আজ বউটাকে ওরা নিয়ে গেল| হারুকে মুখাগ্নি করতে দিল না ওরা, বলল, বেঁচে থাকতে যে বউকে একটু সুখ দেয়নি মরা বউ  নিয়ে আদিখ্যেতা তাকে মানায় না| ওরা কী করে বুঝবে ভালোবাসা অনেক রকম  হয়! এত মার খেয়েও যেমন মালু তাকে ভালোবাসতো, তেমনি ত মার মারার পর সেও মালুকেই তো ভালোবাসতো!  


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন