কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বারীন ঘোষাল

নেশা

সেই ঘুম ভাঙল সাতদিন পর। চোখ মেলে দেখি আমার মুখে অক্সিজেন মুখোশ হাসপাতালের বেডে ঠান্ডা ঘরে শোওয়া স্যালাইন ব্যাগ থেকে টিউব, ক্যাথিটার  লাগানো বেশ ফুটফুটে দেখতে একজন নার্স সুঁচ ঢুকিয়ে রক্ত বার করছে বুকে  মনিটর প্রোব লাগানো মাথার ওপর একটা যন্ত্রে বিপ বিপ চলছে লু্কো নো স্পিকার থেকে গান ভেসে আসছে হালকা ঘরটা বড় একজন চেনা ডাক্তার এসে বললেন,  - ‘তারপর, মিঃ ঘোষাল, কেমন আছেন?’
- ‘ভালো
- ‘চিনতে পারছেন? বলুন তো আমার নাম?’
- ‘ডাঃ এম রে। মহীতোষ রায়
- ‘একটু ভুল হলোমনিতোষ। ভালোপাহাড়ে নিয়ে গেলেন না তো!’
- ‘ঠিক হয়ে নিই। নিয়ে যাব। যাবেন?’
- ‘মাছের ঝোল চাই কিন্তু!’

উনি কথা বাড়ালেন আরো। তারপর ধরাচূড়োগুলো খুলতে বলে গেলেন। ক্যাথিটার, স্যালাইন টিউব, মনিটর প্রোব, অক্সিজেন মাস্ক, আই ভি সুঁচ খুলে ফেলতেই যেন অলঙ্কার ছাড়া সুস্থ হয়ে উঠলাম। ব্যাস, শুরু হলো আড্ডা। প্রণব বলল, ‘মদ সিগারেট একদম না বারীনদা!’
হাসপাতালে ঢোকা ইস্তক আমার সমস্ত মেডিকাল ম্যানেজমেন্ট প্রণবেরই চাপে হয়েছে। সমীহ করে হাসিমুখে বললাম, ‘সিগারেট নয়, কিন্তু মদটা অ্যালাও কর! নয়তো লিখব কী করে? মদ ছাড়া কি লেখক হওয়া যায়?’
- ‘ইয়ার্কি মেরো না বারীনদা। তোমার ভেন্টিলেটরে দাপাদাপি চোখে দেখা যায় না।  আমি চাই না সেটা আবার হোক!’
- ‘সেটা হবে কি হবে না, তা কি বলা যায়?’
কমল বলল, ‘তোর হার্ট তো বন্ধ হয়ে গেছিল। টেম্পোরারি পেসমেকার লাগালো চট  করে। দেরি হলে আর এত কথা বলতে হতো না।
-‘কমল, মদ রক্ত তরল করে, হার্টের পেসিং বাড়ায় নিয়ন্ত্রিত পরিমাণ সেবনে।
- ‘আর তোর যে রেনাল ফেলিওরের ভয় ছিল, সেটা জানিস? মদ আর সিগারেট প্লিজ আর না!’

দোলন, আমার খুড়তুতো ভাই, হার্টের প্রবলেম আছে, ওজন কমাবার চেষ্টা করে। রোজ রামদেব করে। বলল, ‘সিগারেট আর খেয়ো না, মদটা পরে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস  করে সামান্য
আমার খুব ভালো লাগল ওর কথা। প্রণব বেরিয়ে গেল রেগে।

প্রেমিকা অনুরাধা গলায় কান্না এনে বলল, ‘মন, তুমি আমার কথা রাখবে? মদ আর সিগারেট ছুঁয়ো না। নয়তো আর ছুঁতে পারব না তোমাকে

মদ আর সিগারেট ছুঁইনি আজ তিনমাস হলোএকা হয়ে গেছি আবার। নিজের কাজ  নিজে করি। রোজ সকালে পাঁচ মাইল হাঁটি। ওজন কমেছে চোদ্দ কেজি। প্যান্ট সব  ঢিলে। সকালে দেবজ্যোতির সঙ্গে দেখা। বলল, এই খুব ভালো চেহারা হয়েছে তোমার। মদ সিগারেট একদম খেও না!’

আমি আর রাগ করি না। প্রথমে ভাবতাম সবাই বুড়ো, আমিই কেবল বাচ্চা। প্রণব বলে - রবীন্দ্রনাথ তো খায়নি, জীবনানন্দ তো খায়নি! কমল বলে - গান্ধী তো খায়নি, সুভাষ তো খায়নি! আমার ছেলে বলে - দাদু তো খায়নি, মামা তো খায়নি! দোলন বলে - আমি তো সব ছেড়ে দিয়েছি। প্রেমিকা বলে - এসব খেলে মনে কোরো আমার মাথা খাচ্ছআমি সেই লোকটার খোঁজে আছি, যে জীবনের তৃষ্ণাটা বুঝবে।

কত স্বপ্ন দেখেছিলাম মদ মেঘের। তাতে সোনালী রক্তিম আলো ঠিকরোচ্ছেমদের বৃষ্টিতে ভিজছি। বলেছি, সকালে উঠে যেন দেখি বঙ্গোপসাগরে শুধু রাম-ঢেউ। সব  নদীতে হুইস্কি বইছে। পুকুরগুলোতে ভদকা। আর কুয়োতে শুধু জিন।
কমল বলে, ‘এসব বিদেশী স্বপ্ন আমারও ছিল। ওসব ইংল্যান্ডে হয়। এদেশে দেশি  মদের কথা ভাব 
এই জটিল মোড়ে থমকে যাই একটুহতাশ হয়ে তাকাই কমলের দিকেতোর মনে আছে কমল, বলেছিলি, বারীন, ভালোপাহাড়ে অনেক মহুয়া গাছ লাগাবসেই ফলে তুই ডিস্টিলারি খুলবি। এক পেগ মহুয়া এক টাকা দরে খাওয়াবি। তার আগে পেটেন্ট করে নিতে হবে। নয়তো আমেরিকানরা হাড় বজ্জাত, কখন ঝেড়ে দেবে!

সেই মহুয়া বনে বসে নিজেকে পীড়িত মনে হচ্ছে খুব এখন।




1 কমেন্টস্: