কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭

শুক্তি ঘোষ

মুমূর্ষু


নীল আকাশটা থেকে জ্যোৎস্না
       গলে গলে পড়ছে,
আর শুকিয়ে আসা বুড়ো গাছটা
সর্বাঙ্গে চাঁদের সোহাগ মেখে
       একা একা
              নিশ্চুপ
                           দাঁড়িয়ে আছে
                 হয়তো
       ফেলে আসা
সবুজ দিনগুলোর কথা ভাবছে ---
  জ্যোৎস্না ধোওয়া নীল আকাশ
       প্রেমাতুর নারীর মত
             শিউলি ছড়িয়ে
                    মুখ টিপে হাসছিল,
     আর ঘুমন্ত পৃথিবী
              কুয়াশার স্বচ্ছ ওড়নায় মুখ ঢেকে
                  সুখের স্বপ্ন দেখছিল
ওর পাতাঝরা ডালে ডালে
        তখন মৃত্যুর ঝংকার --
 ও ওর বিশীর্ণ ডালগুলো দিয়ে
            আঁকড়ে ধরতে চাইছিল আকাশের জ্যোৎস্না,
     অক্ষম শিকড়গুলো চারিয়ে দিতে চাইছিল
                  ঘাসজমির গভীরে,
    অন্যমনস্ক হাওয়াকে বলতে চাইছিল
                           ও বাঁচতে চায়;
  ও খুব, খুউব চেষ্টা করছিল
       অকালমৃত্যুর শীতলতা মাখা
            ওর শেষ শুকনো পাতাটিকে
                 আগলে রাখতে
     ওর সেই নিঃশব্দ আর্তি
                মিশে যাচ্ছিল
           দূর থেকে ভেসে আসা সমুদ্রের লোনা হাওয়ায়,
                      সেই অশ্রুত গর্জন --
       জাগিয়ে রাখল আমায়,
অতন্দ্র দু’চোখ মেলে দেখলাম
      কপালে রূপোর কাঠির ছোঁয়া নিয়ে
            সবাই ঘুমিয়ে,
                     নিশ্চিন্তে,
                          নিরুদ্বেগে
     অকৃপণ প্রকৃতি
            ওর সর্বাঙ্গে ঢেলে দিচ্ছে অঝোর জ্যোৎস্না,
                    জড়িয়ে দিচ্ছে মায়ার কুয়াশা --
   আর  সেই স্বপ্নিল সুখের মধ্যে দাঁড়িয়ে 
          গাছটা তখন
 তিল তিল করে
             মরে যাচ্ছিল            
                                                                     
     
মধ্যরাত

    ঘড়িতে এখন রাত বারোটা,
           এখন আকাশে
                      বাঁকা চাঁদ,
         পৃথিবী এখন
              ঘুমন্ত নারীর মত --
    সরল, সুন্দর, সুকুমার
              সবকিছু ---
     কেমন অন্যরকম মনে হয়
       যেন কোন প্রশ্ন নেই,
              দায় নেই,
    কোন শোক নেই কোনখানে
রাস্তায় পাহারায় রাতজাগা নিয়নের আলো
       নির্জন দৃষ্টি মেলে
              একা একা দাঁড়িয়ে রয়েছে
       ঘরের ভিতর
সিলিং পাখার শব্দ, মৃদু নিঃশ্বাস --
       দেওয়ালে ছায়ায়
              ঝুরো চুল কাঁপে,
     আলো আর অন্ধকার
              জমে থাকে ঘরের কোণায়
টেবিলে কনুই রেখে
              চেয়ে থাকি --
তীব্র গোল সাদা আলো
       টেবিল ল্যাম্পের থেকে
              এসে পড়ে খাতার ওপর,
ধবধবে পাতা উড়ে যায় ।
       আসবাব -- পুরনো কাঠের
ইতস্ততঃ  --  চেনা জানা   -- গতানুগতিক
       তবুও মধ্যরাত,
              অলীক সময় --
  পৃথিবী থমকে থাকে,
       আমি আর আমি
              মুখোমুখি কথা বলি,
জেগে থাকে হাতের কলম
       একান্ত ব্যক্তিগত
অপাপবিদ্ধ রাত --
 নাকি সে আমারই
       গোপন, নিজস্ব পাপ?
দিনের আলোয়,
       হাঁটি, চলি, কথা বলি, মুখোশ-মানুষ --
অবান্তর মনে হয় ঘড়ির কাঁটায়
  থেমে থাকা এই মাঝ রাত
       কিন্তু এখন
নেই কোন নিয়মের দায়,
       অসম্ভব
 বলে কিছু নেই –-
       ভয় নেই,
   নেই তাই পাপ
       আমার আমাকে আমি
তুলে আনি হাতের পাতায়,
       শুনি তার হৃৎস্পন্দন
  দিনের আলোয়
সবকিছু অর্থহীন, অবান্তর, ছায়ার মতন
       সবকিছু মিথ্যে হয়ে যায়
 কিন্তু এখন
       পৃথিবী ঘুমিয়ে আছে,
              মধ্যরাত --
 ঘড়ির কাঁটায়
       ঘুরে চলে অমোঘ সময়,
              এখন কেবল
           রাত বারোটার গল্প,  
       সাক্ষী থাকে আকাশের তারা    
      






0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন