কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০১৭

ময়ূরিকা মুখোপাধ্যায়

আস্তে লেডিস


আরে মাসিমা আস্তে আস্তে... সাবধানে ... আরে... আপনি তো বেশ হাঁপাচ্ছেন, জল খাবেন?
না তো কি পেট্রোল খাব? হাঁপাতে হাঁপাতে একটু বিরক্ত হয়ে বললেন মহিলা সেদিনই বুঝেছি, এ লেডিস যে সে লেডিস নয় কিন্তু এনাকে তো আগে কখনও... এই রুটে তাও হল বছর দশেক
আপনি ঠিক আছেন এখন? আমি জিঞ্জেস করলাম
তোমরা আর ঠিক থাকতে দিচ্ছ কোথায় ভাই? বাস ছাড়ার কোন টাইম-ধাইম তো কিসু নাই... একদিন আধ ঘন্টা তো একদিন কুড়ি মিনিট! আশ্চর্য!

বয়স্ক মানুষ দেখে সেদিন আর বেশী কথা এগোয়নি অদ্ভুত মানুষ মাইরি! বাস আস্তে চললেও মুশকিল, জোরে চললেও মুশকিল জানালার ধারের সিটে বসে  ড্রাইভারকে এক হাত নেওয়া থেকে শুরু করে পাশে ওভারটেক করা বাসকে কড়া কথা শোনানো সবই চলত   বয়সটা... মাঝে মাঝে মনে হত চুল আর চামড়ায় সীমাবদ্ধ। একদিন টিকিট কাটতে গিয়ে...
কই দেখি মাসিমা!
এই যে, ‘স’এর উচ্চারণটা ঠিক করে করো আগে তারপর ভাড়া চাইবে
সেদিন যে কি মনে হচ্ছিল, একেই ভিড়, কলেজের ছেলেপুলেগুলো এই সুযোগে ভাড়া না কেটে পালানোর তাল করে, তার ওপর উনি আবারএর উচ্চারণ শেখাতে আসছেন!

দুর্ভাগ্যবশত প্রায়দিনই ওনার সঙ্গে দেখা হয়ে যেত আমি প্রায়দিনই ওনাকে ওনার অপছন্দের ভাষায় ‘মাসিমা’ বলতাম, কিছুটা ইচ্ছে করেই
কিন্তু উনি আমায় সঠিক উচ্চারণ শিখিয়েই ছেড়েছিলেন আর আমিও কেমন ভাবে যেন শিখে গেছিলাম

মানুষটা মন্দ নয় স্ট্যান্ডে ফেরার পথে খুব অল্প সময় আমাদের গল্প-গুজব হত সিটের পাশে বসিয়ে জানতে চাইত আমার কথা সিটে বসতে আমার একটু কেমন যেন লাগত তবুও বসতাম তখনই শুনেছিলাম ওনার জানালার ধারের  সিটের প্রতি ভালোলাগার কারণ সেদিনই বলেছিলেন --
এই যে তোমরা কথায় কথায় আস্তে লেডিস আস্তে লেডিস বলো, সেটা কি ঠিক কর? এতে করে কি হয়, মেয়েদেরকে আরও বেশী করে ডিপ্রাইভ... মানে মেয়েদেরকে আরও দুর্বল ভাবা হয় কই বয়স্ক কোনো পুরুষ বা অন্য কোনো...
ওনার কথা শেষ না হতেই আমি বলেছিলাম...
কই! বলি তো! আর তাছাড়া লেডিস সিটও তো থাকে আলাদা... তখন? তার বেলা?
জানি ভাই, সবই সিস্টেম... দীর্ঘশ্বাসে বলেছিলেন

বুঝিনি, কিচ্ছু বুঝিনি, বোঝার চেষ্টাও করিনি দরকারও নেই খেয়ে-পড়ে, নতুন বউটাকে নিয়ে মেলা দেখতে দেখতে ভালোই কাটছিল দিন ব্যাস... আর কি দরকার!
কিন্তু দরকার পড়ল আমার বউয়ের খাতা-পেন আর... ওসবের কোথা থেকে খুঁজে খুঁজে আমার বাড়িতে ঠিক পৌঁছে গেছিল ভালো-ভালো রেঁধে বেড়ে আনত আর  বুঝে লেখা-পড়া করার পোকাটা আস্তে করে ছেড়ে দিয়েছিল সেই মতই চলছিল সব বদলে মাঝে মাঝে খালাসিটাকে বলে জানালার ধারের একটা সিট চেষ্টা করতাম রাখার আর বাস ছাড়ার দশ মিনিট আগে মিসড কল দিতাম কোথা থেকে ঠিক হাঁপাতে হাঁপাতে জুটে যেত

কিরে, তোর মাসিমা এল না যে এখনও!
সেটাই তো ভাবছি গো! গত পরশুও তো দেখলাম না
নে, নে চল, ভেবে আর কাজ নেইটাইম হয়ে গেছে এমনিতেই
সেই তো... ওরকম কত প্যাসেঞ্জারই আসে, যায়বেকার ভেবে... শুধু ভাববার বিষয় একটাই, আমি এখন আর ‘আস্তে লেডিস’ বলি না


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন