কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০১৭

নভেরা হোসেন

মনে পড়ে


মনে পড়ে কি তুমি হারিয়েছো?
লক্ষ লক্ষ তারারা আকাশে, নিশুতি রাত
কামিনীর নিষ্পাপ সুগন্ধ
অসময়ের পৃথিবীতে একমাত্র তুমিই
ভাবতে শিখেছিলে কি করে ভুলতে হয়
এক এক করে ভুলে গেলে শৈশবের বাঁকানো সাঁকো
যেখান দিয়ে পার হতে হাজার বার
আর তোমার খেলার বন্ধুরা
তাদের কারো নাম মনে আছে?
গ্রীষ্মের প্রখর রোদে ভোঁ দৌড়
বরফ-পানি খেলা
বিকালে দাড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট
এসব একটা ঘোলা জলের মতো মনে হয়
এখন স্মৃতিতেও ধুলা পরে গেছে
শুকনো কাপড় দিয়ে ধুলা সরিয়ে
দেখতে পাও দাদার বাঁধানো কবর
সেখানে বকুল পরে আছে শত শত
জানালার শিক গলে দেখা যেত ধু ধু মাঠ
একটা কালো চক্ষু দীঘি
নির্জন দুপুর শুনশান বাড়ি
তুমি একা একা জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকতে
তখন কি তোমার মনে কবিতা ভর করতো?
সন্ধ্যার গোধূলি আলোয়
উড়ে গেলো এক ঝাঁক কাকাতুয়া
তুমিও সেই সাথে হারিকেন জ্বালিয়ে বইয়ে মন দিতে
অথচ তোমার মন বইয়ের অক্ষর ছাড়িয়ে অন্য কোথাও
পৌষের রাতে হাড়কাঁপানো শীতে চুলার আগুনে পাতা পোড়াতে
সকালে খেজুরের রসে ভেজানো পিঠে
একটা সরু রাস্তা ধরে ধানক্ষেত
পাশে আড়িয়াল খা বয়ে যেত
নদীর পাড়ে বসে বহু ঘণ্টা
পূজার সময় সারা রাত দেবীর সামনে
আরতির ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন  মন
কেউ কি জানতো ওখান থেকে তুমি একদিন
সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে
তোমার কলজেটা কয়েক টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়বে
যখন আকাশে ঝড় দেখা দিতো
তোমার মন অস্থির হয়ে উঠতো
তুমি সেই ঝড়ের সাথে ভেসে বেড়াতে
একটা প্রচণ্ড শক্তি ভর করতো শরীরে
সব কিছু ভেঙে চুরমার করার ইচ্ছে
যত নিষ্পেষণ, কান্নাকে গুড়িয়ে দেয়ার মতো ঝড়
সবকিছু তুমি বিস্মৃত হলে
এখন কি নতুন মানুষ?
নতুন পৃথিবী তোমার
সেখানে ভোর হয় কখন আর সূর্যাস্ত ?
তুমি কি ঘুমিয়ে পড়ো সিডাকসিনের কড়া ঘুমে
তুমি কি জেগে থাকো অনন্ত নক্ষত্র বীথি!



পথ


একটা আঁকা-বাঁকা পথ
দূরে নির্জন বনভূমি
সভত্যা এখানে নিশ্চুপ
সারা রাত মহুয়ার গন্ধ
সারি সারি বৃক্ষ অপেক্ষায় দিন গোনে
আচমকা চমকে  ওঠে কুড়ালের শব্দে
বড় বড় যন্ত্র আসে
বৃক্ষের বুক বিদীর্ণ করে বানাতে বসতভূমি
লোকালয় ক্রমশ খাড়া হয়ে ঢোকে বনভূমে
বনও সরে যেতে যেতে নদীতে এসে মাথা ঠুকে
আর কত সংকুচিত হবে সে
আর কত বলি দেবে সবুজ বৃক্ষ
এর পর শুধু পুস্তকে লেখা থাকবে
এখানে একজন বন শায়িত আছেন
তার কবরে ফুল দেয়ার জন্য
কোনো মানুষও জীবিত নেই আর



বৃষ্টির নির্জনতা


চারিদিক শুনশান, কালো হয়ে এসেছে
তীব্র দাবদাহের পর অঝোর বৃষ্টি
আকাশে বিদ্যুতের দ্যুতি
জানালায় রেশমী পর্দা
এখানে অনেক রোদ্দুর জমা হয়ে আছে
অশ্রুর ঘনঘটা
শত শত ফুলের পাপড়ি কবরে
শত শত যোদ্ধা ঘুমিয়ে
তাদের দীর্ঘশ্বাস জল হয়ে ঝরছে
তাদের অশ্রু বাষ্প মাটিকে ভিজিয়ে দিচ্ছে
এখানে অনেক স্বপ্ন জমা হয়ে আছে
না ফোঁটা কোরক
বহুদিন পর আজ বৃষ্টি নেমেছে
তোমাদের না দেখা পৃথিবী জলে ডুবে আছে
তোমাদের স্বপ্নরা বৃষ্টির নির্জনতায়...


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন