কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০১৭

শুক্লা মালাকার

শুভবিবাহ  


সার সার ফুলের তোড়া-মালায় সেজে মেন-গেটে দাঁড়িয়ে আছে লম্বা এস্টিম। লগ্ন বয়ে যাচ্ছে। মেয়ের বাড়ি থেকে ঘনঘন ফোন - বরযাত্রীরা কতদূর! রেজিস্টার  বেচারা ছটফট করছে, এটা সেরে আরো দুটো আছে। অথচ আজকের মুখ্য সৌম্য ঘন্টা দুই হল রেডি হবার নামে ঘরের দরজা দিয়েছে, খোলার নাম করছে না। গোটা বাড়িতে ফিসফিস, হাসাহাসি, কনে হলে তবু কথা ছিল। বরের তৈরি হতে এত সময়? একসময় সকলে অস্থির হয়ে পড়ল। সেই কখন থেকে পালা করে দরজায় ঘা দেয়া চলছে। ভিতর থেকে একটাই জবাব - হয়ে গেছে, আসছি। তা সেই আসা  আর হচ্ছে না। রাশভারী জামাইবাবুও বার দুই মস্করা করে গেলেন। তবুও সৌম্য দরজার ওপারেই।

মেয়ের বাড়ি থেকে আবার ফোন। এবার রায়বাবু, সৌম্যর বাবা, খুবই বিচলিত হলেন। বললেন- যাও তো দীপ! এবার তোমার বন্ধুকে জোর করে বের কর। দেখ তো কি এমন সাজুগুজু করছেন তিনি। বল এমন চললে আজ আর তাকে বিয়ে করতে হবে না। ওই সাজগোজ ই সার হবে।
দীপ সাহিত্যিক, সৌম্যর ছেলেবেলার বন্ধু। এক স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে। কলেজে আলাদা হলেও ছাড়াছাড়ি হয় নি। সাহিত্যই ওদের দুজনকে কাছকাছি রেখেছে। গত দু-বছরে সেই বন্ধুত্ব আরো গভীর হয়েছে।
-দরজা খোল সৌম্য! প্লীজ। দেরি হয়ে যাচ্ছে। সবাই খুব ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে রে! এর পরে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
জমতে জমতে বাড়ির সব লোকই প্রায় বরের ঘরের দরজায় জমা হয়েছে।  বার কতক ধাক্কাধাক্কির পর দরজা খুলে গেল। বরবেশী সৌম্য যেন কবিতার ধ্বংসাবশেষ। জমায়েত সরব হল। শুধু দীপ চমকালো।
-কি হয়েছে?
-ভিতরে আয়! দ্বিধায় দুলতে দুলতে দীপ ঘরে ঢুকতেই সৌম্য দরজা বন্ধ করে দিল।
- তুই ঠিকই বলেছিস দীপ। এরপর সত্যিই অনেক দেরি হয়ে যাবে। আর পারছি না। এ বিয়ে কিছুতেই করতে পারবো না আমি।
- কী ছেলেমানুষি করছিস! আজকে এই সময়ে দাঁড়িয়ে তোর এই ব্যথা বিলাস আমি মানতে পারলাম না। এতদিন যখন চুপ করে ছিলি আজও চুপ করেই থাক না!
-সাহস জোটাতে পারিনি রে।
-এই যে দুই বাড়ির লোকের এত সব আয়োজন, এত শঙ্কা, অস্থিরতা, পরিশ্রম, কথা চালাচালি, তার চেয়েও বেশী সম্মান, সব কিছুর মাঝে এখন আর তোকে বিদ্রোহী হতে হবে না। যা হচ্ছে হতে দে।
- আর আমি বিয়েটা করলে সে মেয়ের জীবন নষ্ট হবে না?
- সেটা তোমার আগে ভাবা উচিত ছিল না কি?

ভিতরের তর্কের রেশ বাইরের উৎসুক জনতার আগ্রহ বাড়িয়ে দিল। বিষয় জানতে না পারায় আশঙ্কাও। হঠাৎ সব চুপচাপ। দ্বিধান্বিত বাবা সবার মুখের দিকে একবার  চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলেন, এমন সময় আবার ফোনছেলের ওপর গজগজ করতে  করতে মুঠোফোন হাতে নিয়ে থমকালেন। ছেলের ফোন। মাকে নিয়ে ভেতরে যেতে বলছে।
মা তখন সবে সপ্তমবারের মতো দুধ বসিয়েছেন। দীপ যখন ভিতরে গেছে এবার ছেলে রেডি হয়ে নামবেই। বিয়ে করতে যাবার আগে আচার অনুসারে তাকে দুধ খাওয়াতে হবে। কে যেন এসে বলল, রায়বাবু ওপরে ডাকছেন। রাণুর মায়ের হাতে দুধের ভার দিয়ে তড়িঘড়ি উঠে এলেন।

আশঙ্কা আর আতঙ্ক বুকে নিয়ে আত্মীয়-বন্ধুদের কৌতূহলের বৃষ্টিতে ভিজে বাবা-মা ছেলের ঘরে ঢুকলেন। মিনিট পাঁচেকের ভিতর রায়বাবুর চিৎকার
-স্কাউন্ড্রেল! একথা আগে বলতে পারোনি? এতগুলো মানুষকে হেনস্থা করার কোনো মানে হয়? বিকট শব্দে দরজা খুলে পরিজনদের উৎসুক দৃষ্টি ছিঁড়েফুঁড়ে  দপদপিয়ে নীচে নেমে গেলেন।


দিদি জামাইবাবু কোনোরকমে ভিড় সরিয়ে ঘরের ভিতর ঢুকে দেখল মা হাপুস  নয়নে কাঁদছেন। বরবেশী সৌম্য দীপের হাত ধরে মাকে বোঝাতে চাইছে, দীপ কিন্নরী হলেও সৌম্য তাকেই...  

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন