কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০১৭

অনুপম মুখোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার

(সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রলয় মুখোপাধ্যায়)  





প্রলয় : অনুপম মুখোপাধ্যায় বলেন পুনরাধুনিক তার দর্শন। কিন্তু এটা তিনিই বলেন, অনেকে বলেন জোর করে পুনরাধুনিক বলেই কবিতা চালিয়ে দিচ্ছে। কেউ বুঝুক না বুঝুক। তারা এটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে। বিদ্রূপ করছে। অস্বীকার করছে। গ্রহণ করছে। এই ভূমিকা সম্পর্কে অনুপম নিজে কি বলেন? আপনি বললেই আমি স্বীকার করব কেন?

অনুপম : দ্যাখো, ঈশ্বর নেই বললেও ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়। শব্দটা আছে। একটা শব্দ আছে মানে, তার সঙ্গে তার পৃথিবীটাও আছে। এত লোক যখন মাথা ঘামাচ্ছে, বিদ্রূপ করছে, অস্বীকার করছে, গ্রহণ করছে, তখন ‘পুনরাধুনিক’ তো আছেই। এবং শুধু আমার মধ্যে নয়। সামাজিকভাবেই সে আছে। এটা আমি করতে পেরেছি। আমি শব্দটাকে পৃথিবীতে এনেছি। একটা ধারণাকে দাঁড় করিয়েছি, তা সে লোকের চাঁদমারিই হোক বা প্রিয় চাঁদই হোক। এই শব্দটা আমার কয়েনেজ। এটাকে ব্যাখ্যা করে এখনও অবধি দুটো বই লিখেছি। যাঁরা স্বীকার করছেন না, তাঁরা কি সেই বইদুটোর মধ্য দিয়ে গেছেন? আমি কী বলছি, সেটা জেনে কি তাঁরা অস্বীকার করছেন। যদি করেন, তাহলে স্বাগত। তাঁদের জন্য তাহলে আমার বলা এখনও ফুরোয়নি।

প্রলয় : আমার লেখা কেন পুনরাধুনিক নয়?

অনুপম পুনরাধুনিক সম্পর্কে আমি যে দুটো বই লিখেছি। প্রাথমিক একটা ধারণা একটা আমার কাব্যগ্রন্থ ‘প্রকল্প ও স্ফটিক’-এর ভূমিকায় আছে। ৫০০০ হাজার শব্দের সেই গদ্যটা অনলাইনেও পাবে। আমার ব্যক্তিগত ব্লগে রাখা আছে। আরেকটা বই সম্প্রতি প্রকাশিত হলো - ‘পুনরাধুনিক কী কেন এবং কীভাবে’। এই দুটো বই পড়লেই বুঝবে, পুনরাধুনিক কবিতা ফর্মনির্ভর নয়। সে আসলে সকল মিলিয়ে, যার মধ্যে ফর্মটাও পড়ে। কবির যাপন, কবির অবস্থান, কবির কান্না, কবির হাসি, সবকিছুই সেখানে পড়ে। ওই বইদুটো পড়ো। পড়ে যদি মনে হয় তুমি পুনরাধুনিক, তাহলে তুমি পুনরাধুনিক। তুমি নিজেই সেটা বিচার করতে পারবে ওই দুটো গদ্য পড়ে। আমাকে বলে দিতে হবে না। আমি বলছিও না তুমি পুনরাধুনিক নও। তোমার মধ্যে যদি পুনরাধুনিকের সম্ভাবনা না থাকত, তোমার সঙ্গে আমার এই সংলাপ হত না। তোমার লেখা আমি পড়েছি। অন্তত ফেসবুকে তুমি যা পোস্ট করো তার সবই আমি পড়ি। তোমার লেখা পুনরাধুনিক কিনা, সেটা তুমি বলবে, আমি নই, অন্য কেউই নয়।

প্রলয় :  একটা চরিত্র কি পুনরাধুনিক হওয়া সম্ভব? নাকি কবিতা? কী কী বৈশিষ্ট্য থাকলে তাকে পুনরাধুনিক বলব?

অনুপম : এগুলো সাক্ষাৎকারের প্রশ্ন নয়। এগুলো প্রবন্ধের বিষয়। আমি তোমাকে এবং পত্রিকার পাঠকদের অনুরোধ করব, আমার পুনরাধুনিক বিষয়ক গদ্যগুলো পড়তে। সেখানেই উত্তর আছে।

প্রলয়
: যেহেতু আপনি অনুপম মুখোপাধ্যায়, সেখানে বাক্‌ আসবেই। বাক্‌ ছাড়া   আপনাকে চিনতাম না। কিন্তু এখন চিনি। তাই মাঝে মধ্যে বাক্‌’ থাকবেএটা আমার কাছে আগ্রহের ব্যাপার। ব্যক্তি অনুপম এত আক্রমণাত্মক কেন? স্নায়ু  উত্তেজিত কেন? কে কবে কী বলেছেন তা নিয়ে তিনি বিচলিত, নাকি অস্তিত্ব জানিয়ে দেওয়ার পথ এটা? একজন সম্পাদক হিসেবে আপনার ভূমিকা এত আগ্রাসী কেন? আপনার বিনয়শূন্য সত্ত্বাটি অন্যের গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। নম্র হন!

অনুপম : ভাই, বিনয় আর স্পর্ধা একই কয়েনের দুটো পিঠ। একটা ছাড়া অন্যটা সন্দেহজনক। আমি আর বাক্এক নই। ২০০৮ অবধি আমার জীবনে বাক্ছিল নাহয়তো ২০১৭-র পরে থাকবে না। আমি আক্রমণাত্মক কেন, সেটা বুঝতে  হলে তোমাকে রবীন্দ্রনাথের সামাজিক ভূমিকাটা জানতে হবে, যেটা তিনি নবিংশ  শতাব্দীতে নিয়েছিলেন। সাহিত্যসমাজ তাঁকে আক্রমণ করত এটা সবাই জানে। কিন্তু তিনি নিজে সমকালীন সাহিত্যসমাজকে কতটা আক্রমণ করেছিলেন, সেটা জানা আরো দরকার। প্রশান্তকুমার পালের রবিজীবনীআজও যে কোনো বাঙালি কবির পড়া উচিত। দেখবে আমি তাঁর দেখানো পথেই আক্রমণাত্মক। আমার স্নায়ু উত্তেজিত নয়। বরং যাতে উত্তেজিত না হই, যাতে কবিতায় তার ছাপ না পড়ে, তাই আমার সামাজিক ভূমিকা অতটা স্পষ্ট। তুমি যেটাকে আগ্রাসী ভাবছ, সেটা আমার কাছে স্পষ্টতা ছাড়া কিছুই নয়। কে কী বলেছেন সেটা নয়। কেউ ব্যক্তি হিসেবে কিছু বলল কিনা সেটা ব্যাপার নয়। ব্যাপার হলো সে কোন ধারণার  প্রতিনিধি। প্রয়োজনে ধারণাকে আক্রমণ করতে গিয়ে ব্যক্তিকেও আহত করতে হয়। একজন কবির কাজ সমাজকে স্বস্তি দেওয়া নয়। সমাজকে আরামে আর স্থিতাবস্থায় থাকতে না দেওয়াও কবির কাজের মধ্যে পড়ে।


প্রলয় : আজ আপনার কবিতা সম্পর্কে যা মূল্যায়ন, কাল কি তা বদলাবে? এই মূল্যায়ন আপনি চান কেন? কেন প্রচার করেন কবিতা কি? পুনরাধুনিক কি?

অনুপম : কেন প্রচার করি, তার উত্তর তো দিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি ২০১০ পরবর্তী কবির উচিত নিজের কবিতাকে সমাজে পৌঁছে দেওয়ার ভার কোনো পত্রিকা বা প্রতিষ্ঠানের অপেক্ষায় না থেকেই নিজেই তুলে নেওয়া। এটা কবির কাজের মধ্যে পড়ে। মূল্যায় কেন চাইব না? ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে বুদ্ধি দিয়েছেন কেন বলো তো? যাতে সে তাঁর সৃষ্টি দু-চোখ ভরে দেখতে পারে আর মতামত দিতে পারে। ঈশ্বর যদি মায়ায় বিরাজমান, আমি কোন ছার? আমি একজন প্রচারকের ভূমিকায় নিজেকে মেলে ধরতে গিয়ে নিজের মধ্যে কোনো ফাঁক বা ফাঁকি টের পাই না। কাজেই আমি কাজটা পূর্ণ হৃদয়ে করি। আমার পুনরাধুনিক বিষয়ক গদ্যগুলো পড়ো, আবার বলছি, সেখানেই উত্তর আছে।


প্রলয়
:  বিতর্কিত হতে ভালো লাগে কি? না এড়িয়ে যেতে চান না বলেই বিতর্ক আনেন?

অনুপম : অহেতুক বিতর্কিত হতে ভালো লাগে না। তবে প্রয়োজনে বিতর্ক এড়িয়ে যেতেও ভালো লাগে না। ভাই, ইস্কুল-কলেজেই তো বিতর্ক প্রতিযোগিতা হয়। ওটা তো সুস্থ জিনিস। কেউ সেটাকে কদর্য না করে তুললেই হলোব্লু-ফিল্মকে কি তুমি সিনেমা বলবে?


প্রলয় :  কোবি আর কবি এই দুটি শব্দ বিদ্রূপ নাকি শেখা? আপনাকে কেউ  কোবি বলছেন আর আপনি এড়িয়ে যাচ্ছেন না। প্রমাণ করার এত তাগিদ কেন?

অনুপম  :  কোবি বলি সামাজিকভাবে কিছু মানুষকে অস্বস্তি দেওয়ার জন্য। একজন লিখেছিলেন সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি। আমি বলি, সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কোবি। বা উল্টোটাও হতে পারে। কেউ কেউ কবি। আবার বলছি, একজন কবি একজন ট্রাবল মেকার। কবিতাব্যবস্থা যদি পচে গিয়ে থাকে, তার মধ্যে অগণিত পোকা তো জন্মাবেই। তাদের আইডেন্টিটিকে প্রশ্ন তো করতেই হবে! কে করবে প্রশ্ন? আমিই নয় কেন? আমি অস্বস্তিকর প্রশ্নগুলো করতে ভালোবাসি। আমাকে যদি কেউ কোবি বলেন, তিনি তাঁর মত প্রকাশ করছেন। নিজের টাইমলাইনে বা নিজের পত্রিকায় করুন। যদি মতের বদলে বিদ্বেষ প্রকাশ করেন, তাঁর অন্তর্দাহ তাঁরই থাক।

প্রলয় :  বাক্‌’এর চরিত্র সম্পর্কে কিছু বলুন? ‘বাক্‌’এর কবি লেখকদের বৈশিষ্ট্য কি এমন যে শুধু বাক্‌’ এই দেখা যায়?

অনুপম:   বাক্এর চরিত্র সম্পর্কে বরং তোমরা বলো। আমি শুনি। আমার কাজে লাগবে। প্রশংসা-নিন্দার বাইরে তো খোলাখুলি কথা খুব কম লোক বলে। তুমিই বলো।

প্রলয়
:  বাক্‌’এ যারা লেখেন তাঁদের নিয়ে আপনার আত্ম-সমালোচনা নেই কেন?  কেন প্রকাশিত লেখার কোনও সমালোচনা নেই?

অনুপম :  তুমি তোমার বাবা বা মা বা ভাই-বোনের সমালোচনা কি বাজারে দাঁড়িয়ে  করবে? তোমার বাড়ির একটা দেওয়াল যদি বাঁকা হয়, তুমি কি খবরের কাগজে চিঠি লিখবে, নাকি নিজেই মিস্ত্রি ডেকে আনবে? তুমি সাইকেল থেকে পড়ে গেলে নিশ্চয়ই নিজের নামে থানায় ডায়েরি করবে না। সাইকেল চালাতে আরো সতর্ক হবে। বাক্এর যা ত্রুটি, তা আমি জানি। সেটা নিয়ে আমি ভাবি। আমি বদলাই। নিজের কাজের সমালোচনা আমি নিজে কেন করব?  বরং সেটা টের পেলে অযথা বাক্যব্যয় না করে সেটা বদলাব। সেটা বদলাই বলেই পত্রিকাটা ১০০ সংখ্যা পেরিয়ে আজও চলছে।

প্রলয় :  বাক্‌’এ আমার প্রিয় বিভাগ অর্জুন আর রমিতদার বিভাগটি। এটা আমার  কাছে খনিজ সম্পদ। হিংসে। আত্মমগ্নতা। এগুলি কখনো একসাথে প্রকাশিত হবে কি? মুদ্রণ?

অনুপম :  রমিতের বিভাগ আমার নিজের আর তেমন প্রিয় নয়। ওর গদ্য সম্পর্কে আমি শ্রদ্ধা রাখতে পারিনি। যেটা পাঁচ শব্দে বলা যায়, সেটা ও পাঁচশ শব্দে বলেও বলা শেষ করতে পারে না। নিজে যেটা বোঝেনি, সেটাকে আড়াল করে অহেতুক এবং প্রায় অযৌক্তিক শব্দসংস্থান চাপিয়ে দেয়টা ভালো গদ্যকারের ধর্ম নয়।  অর্জুনের বিভাগ তো মুদ্রিত হয়েছে। খবর নাও।

প্রলয়
: বাক্‌’ কি নিজের গোষ্ঠী তৈরি করেছে?  অন্য কোনো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে?

 অনুপম:  বাক্গোষ্ঠীবদ্ধতার বিরুদ্ধে। বিশেষ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয়। গোষ্ঠীর আদল এলেই ভেঙে দেওয়া হয়।

প্রলয়
: বাক্‌’এর ভবিষ্যৎ কি? বাক্‌’এ যারা লেখে তারা সকলেই কি পুনরাধুনিক?  অনুপম মুখোপাধ্যায়ের পর আর কে পুনরাধুনিক কবি আছেন?

অনুপম :  ‘বাক্‌’-এ লেখার জন্য পুনরাধুনিক হতে হয় না। সম্প্রতি আরো কয়েকজন কবি নিজেদের পুনরাধুনিক ঘোষণা করেছেন। একটু সন্ধান করো।

প্রলয় : পুনরাধুনিক বিষয়ে আপনার বই প্রকল্প ও স্ফটিক সম্পর্কে কিছু বলুন

অনুপম: প্রকল্প হলো পুনরাধুনিক ভাবনার রূপায়ণ, আর স্ফটিক হলো ওই বইয়ের কবিতাগুলো।

প্রলয় : এবার ব্যক্তি অনুপম। আপনি কতটা প্রশংসনীয়? কবিতার প্রশংসা চান? প্রচার চান? না চাইলে কি অনুপম মুখোপাধ্যায়কে কেউ খুঁজত না?

অনুপম :  আমি প্রশংসা চাই না। নিন্দাও চাই না। আমার কবিতার তলায় প্রশংসা থাকলে আমি ডিলিট করি না, নিন্দা থাকলে করে দিই। এটুকুই। কেউ আমার বাড়িতে এলে গোলাপ নিয়ে আসুক। গোলাপ আমি পছন্দ করি না। কিন্তু নিয়ে নেব। সে যেন গোবর নিয়ে না আসে। গোলাপ ফেরাই না। গোবর ফিরিয়ে দিই। সবচেয়ে ভালো হয় গোলাপ বা গোবর, কিছু না নিয়ে এসে কথা বললে। আমি সমালোচনার কাঙাল। যদি কেউ আমার লেখার ত্রুটি ধরিয়ে দ্যায়, আমি তার পায়ে পড়ে যাবো। যদি বুঝি সে আমার লেখার উন্নতি দেখতে চায়, তার চরণদাস হয়ে যাবো। আমি প্রশংসনীয় নই, নিন্দনীয়ও নই। আমাকে নিয়ে কথা হলে সেখানে যেন লুকোনো বিদ্বেষ না থাকে, এটুকুই। আর আমি নিজের কবিতার প্রচার করি। করে আনন্দ পাই। আমি বিশ্বাস করি এই সময়ে একজন কবির কর্তব্য নিজের কবিতার প্রচার। সেটার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ যেন তাকে হতে না হয়। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক তাকে আত্মনির্ভর করুক, তার সঙ্গে আত্মম্ভরিতার কোনো ব্যাপার নেই।

প্রলয় :  মুদ্রণ আর আন্তর্জাল পত্রিকার মধ্যে আপনার সমর্থনের বৈষম্য আছে
কেন?

অনুপম : কাগজ আর আন্তর্জাল বলতে চাইছ কি? দুটোই তো মুদ্রণ। এটুকুই সমর্থনের ফারাক আছে যে আমি কাগজকে বর্তমান আর অতীতের সম্পদ মনে করি, আন্তর্জালকে ভবিষ্যতের। আমি তো নিয়মিত কাগুজে পত্রিকায় লিখি। ততদিনই লিখব যতদিন কাগজের প্রাসঙ্গিকতা থাকবে। যেখানে পাঠক পাবো, সেখানেই যাবো, যদি সেখানে যাওয়ার পথে নোংরা ছড়ানো না থাকে। আর ৫০ কপির লিটিল ম্যাগাজিন আজকের দিনে অবান্তর। সম্পাদকের অহং তৃপ্তি পায় হয়তো বা কেরিয়ারের সুবিধা হয়। তাছাড়া ওগুলোর কোনো কাজ নেই।


প্রলয় : বাক্‌’ যদি আগামীকাল ওয়েবম্যাগাজিন হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক পুরস্কার পায়  তবে কি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা বদলাবে? নাকি প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা করবে?  

অনুপম : সমাজে সংগঠিত সবকিছুই তো প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা একটা অবান্তর ধারণা। বিশেষ প্রতিষ্ঠানের বিশেষ কাজ এবং বিশেষ দিকের বিরোধিতা করা যায়। বাক্আগামী পাঁচ বছর কোনো বাঙালি প্রাতিষ্ঠানিক পুরস্কার নেবে না। কথা দিলাম। এই কারণেই কথা দিতে পারছি যে আজ যে কোনো বাঙালি প্রতিষ্ঠানের দেওয়া সাহিত্য-পুরস্কারকে সন্দেহ করা যায়। তবে পরে যদি ব্যবস্থা বদলায়, ভেবে দেখব। সর্বভারতীয় বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের ব্যাপারে এখনই ভেবে দেখব। সিস্টেমের বাইরে গিয়ে কাজ করায় আমি বিশ্বাস করি না। সেটা কবির কাজ নয়। কবিতাপত্রিকারও নয়। সিস্টেমের মধ্যে থেকেই তার সমালোচনা করা মানায়। সন্ন্যাসীকে মানায় না গৃহীর নিন্দা করা। প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা বলতে আমি বুঝি সমাজবিরোধিতা। কবি সমাজবিরোধী নন। তুলসীতলায় যে প্রদীপ জ্বলে সেও একটা প্রতিষ্ঠানের হয়েই জ্বলে,  তার নাম পরিবার। তাই না?

প্রলয়
: বাংলাদেশের কবিতার বাঁক কবিদের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য কি হতে  পারে?

অনুপম: বাংলাদেশে ভারতের চেয়ে অনেক উন্নত কাজ হচ্ছে কবিতার ক্ষেত্রে। ওখানকার কবিরা অনেক জ্যান্ত, প্রাণবন্ত, আন্তরিকবাঁকগুলো সম্পর্কে ওখানকার কেউ বললেই ভালো হয়। আমার অধিকার নিয়ে আমার সংশয় আছে, কাঁটাতারের সংশয় নয়, জলমাটির সংশয়।

প্রলয় : কোথায় আলাদা পুরুলিয়ার কবিতা আর পদ্মানদীর কবিতা?

অনুপম যেখানে আলাদা নির্মল হালদার আর আল মাহমুদের কবিতা। বিশেষ জলমাটি আর আবহাওয়া বিশেষ কবিতার জন্ম দ্যায়। বিশেষ খাদ্যাভ্যাস বিশেষ কবিতার জন্ম দ্যায়। যাপন আর কবিতা অঙ্গাঙ্গী। কাজেই ইতিহাস আর ভূগোল ছাড়া কবিতাকে ব্যাখ্যা করা যায় না বলেই আমার বিশ্বাস। তোমার কবিতা আর আমার কবিতাও আলাদা হবে। উত্তর কলকাতার কবিতা আর দক্ষিণ কলকাতার কবিতাও আলাদা হবে। যদি না হয়, তাহলে তা কপি-কবিতা। আমার ভাষায় কোবিতা। হা হা হা হা...


















4 কমেন্টস্:

  1. সাক্ষাৎকারটি পড়ে অনুপমকে আরও বুঝতে পারছি। সাহিত্যে নিজস্বতা ওঁর আছে, অভিব্যক্তির ক্ষেত্রে একটা আলাদা জগতের খোঁজ সর্বদা ওঁকে আগ্রহী করে তুলেছে। পুনরাধুনিক ব্যাপারটিতে ওঁকে যেমন আলাদা করে দেখার সুযোগ পাই, তেমনি কৌতূহলী হয়ে উঠি। এতে গতানুগতিকতা পরিহার করার ক্ষেত্র তৈরি হয়। অনুপম যথেষ্ট সাহসী, মননশীল, এবং গবেষকও। আমাদের দুর্বলতা আছে তাঁর প্রতি।

    উত্তরমুছুন
  2. আপনাকে অনেক ভালো লাগে। বিশেষ করে আপনার বাচন ভঙি

    উত্তরমুছুন
  3. আপনাকে অনেক ভালো লাগে। বিশেষ করে আপনার বাচন ভঙি

    উত্তরমুছুন
  4. অনুপমের কবিতা লেখার শৈলী আমার ভালো লাগে। পড়ি। তাই বলে আমাকেও ওরকম লিখতে হবে তা নয়। যে কয়েনেজটা ও ব‍্যবহার করছে সেটাও আপত্তিকর নয়। ওর ছড়িয়ে পড়া শ্বাসমূল থেকে আমিও তো নিঃশ্বাস নিই।

    উত্তরমুছুন