কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০১৭

শ্যামশ্রী চাকী


বিস্কুট


কামড়ানোর আর নোক পেলি না বাপ? এত্ত চোর, ছ্যাচ্চোড়, ফেরিওয়ালা, নাইটের নোক, লিপ্টের দাদা ওই ছিকিরুটি গেরাড সব বাদ দে আমার নোগেভোগা পটলারেই ধল্লি! আন্নার মাসির ড্যাকড়া সোয়ামীটা রোজ আত্তিরে দজ্জার কোণে  নুইক্যে নুইক্যে ডিম, প্যাঁজ, চ্যানাচুরের প্যাকেট নে যায় তারে ছেইড়ে আমার  কচিটারে পেলি বাপ! আর এগটু আদটু তো কামড়াসনি, ড্যানা দে মাংস বেইরে গ্যাচে! পুজোগন্ডার দিন...!

পটলা এক কোণে দাঁড়িয়ে মন দিয়ে পাইপ পাঁপরভাজা খাচ্ছিলো। ডান হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা, হাতটা দড়ি দিয়ে কাঁধে ঝুলিয়ে দিয়েছে ডাক্তারবাবু ভাঙলে যেমন ঝোলায়। এখন বাঁ হাতটাই ভরসা পটলার। কনুই-এর ফাঁকে পাঁপরভাজার প্যাকেট  আটকে কায়দা করে একটা একটা করে বের করে নিতে হচ্ছে পটলাকেমালতী বাগানের কোণে পটলাকে বসিয়ে রেখে কেয়ারটেকারের বৌ-এর সাথে দুটো সুখ দুঃখের গল্প সারছিল। ডোডো বেরোলে বৌদির ফ্ল্যাটে ঢুকবে। ঠিক তখনি ডোডোর সাথে দেখা...

সাড়ে ন'টায় ডোডোকে পটি আর টয়লেট করানোর জন্য ক্যাম্পাসের বাগানের কোণে আনে ড্রাইভার রাখাল এই সময়টুকুই ডোডো শেকল পরে থাকে শেকলটা  না কি বিদেশ থেকে আনানো এমন ভাবে বানানো হয়েছে যে, এটা পরলে ডোডোর নিজেকে শেকলের জন্য অপমানিত বলে মনে হবে না, বরং আরাম হবে।  ডোডো কিন্তু শুধুমাত্র কুকুর নয়, বরং বৌদির সন্তান! তাই ডোডোকে অন্য সময়ে শেকল পরানো বা আটকে  রাখা মানা। এমনিতেই গরমে ডোডো নাকি রেগে যায়, এসি ছাড়া থাকতে পারে না। এদিকে পুজোর জন্য রাতে দু’ ঘন্টা লোডশেডিং থাকছে আজকাল।

এসব কথা কাল রাতে ওদের আগের ঠিকে মাসি চামেলির কাছে শুনেছে মালতী। চামেলি আর মালতী একই বস্তিতে থাকে এই কাজটা জুটিয়ে দিয়েছিল চামেলিই
-বাপরে যা বাঘের মতো কুত্তা!
-আস্তে!  
চমকে উঠেছিল মালতী হোক নিজের বাড়ি, দেওয়ালেরও কান আছে ডোডোকে কুত্তা বলতে সাহস লাগে, দম লাগে, বুকের পাটা লাগে! চামেলির আর সে ভয় নেই ওবাড়ির কাজ ছ'মাস হলো ছেড়েছে। এখন ডোডোকে আসতে দেখে দূর থেকেই বিড়বিড় করছিল মালতী।

মালতীর জন্য বসে না থেকে বৌদি বোধহয় রান্নার মাসিকে দিয়ে বাসন মাজিয়ে ডোডোর চিকেন সেদ্ধ বসিয়েছেদরজাটা পুরোটা না খুললেও টের পাচ্ছে পটলা। মাংসের গন্ধে ক্ষিদেটা আবার পাক দিয়ে ওঠে পটলার সকালে কেয়ারটেকার কাকু  একটা পাঁচটাকার পাইপ পাঁপড়ের প্যাকেট দিয়েছে, সে আর কতটুকু! কী জানি সারাদিন কেন এত ক্ষিদে পায় পটলার! মা তো পেটে গামছা বেঁধে সারাদিন চালিয়ে  দিতে পারে সাতবাড়ি ঠিকে কাজ করে যে যা দেয়, পোঁটলা বেঁধে নিয়ে আসে পটলার আর ওর দিদির জন্য তারপর বালবের হলুদ আলোতে দিদির চুলের উকুন  বেছে সারাদিনের গল্প বলে দুটো জলঢালা ভাত খায় মা।


 -বৌদি, ডাক্তারবাবু বইলেচে সুঁই নিতে হবেআমি একহপ্তা কাজে আসতে পারবনি কো! ক’টা টাকা ঝেদি দ্যাও পটলাটার ঝন্যি! দেইকচেন তো হাতটা ফালা  হইয়ে গ্যাচে...
-শোন, তোকে আর কাজে আসতে হবে না। আমি লোক দেখে নিয়েছিআর বাইরে বলে বেড়ানো বন্ধ কর যে, ডোডো তোর ছেলেকে কামড়েছে! ডোডো কে জানিস? সিংহের জাত, খাঁটি জার্মান শেফার্ড নোংরা ঘামের গন্ধ নিয়ে ছেলেকে আমার ঘরে  ঢোকাবি আর ও বিরক্ত হবে না? ওর কি অভ্যেস আছে এসব দুর্গন্ধের! বলে দিস তোর ডাক্তারবাবুকে, আমার ডোডোর সব ভ্যাক্সিন নেওয়া আছে... হু! ইঞ্জেকশন  নিতে বলেছে! আমাকে যেন শেখাতে না আসে! তোর টাকা মাস গেলে পাবি এখন যা!
হুড়মুড় করে দরজাটা বন্ধ করে দেয় বৌদি।


পটলা আড়চোখে তাকিয়ে দেখে বন্ধ হয়ে যাওয়া দরজার ফাঁক দিয়ে ডোডোর বিস্কুটের প্লেটের এক ঝলক কী সুন্দর হলুদপানা গোল গর্ত মতো প্লেট, তাতে ওই বিস্কুট! কী যেন নাম বিস্কুটটার, পেডিগ্রি না কী যেন! কাল ক্ষিদের জ্বালায় দুটো বিস্কুট  তুলে নিতেই ডোডো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পটলার ওপরেকামড়ে মাংসতোলা  হাতের মুঠোয় দুটো কুচো মতো বিস্কুট শক্ত করে ধরে রেখেছিল পটলা হাসপাতালে যাওয়ার পথে বাঁহাতে নিয়ে মুখে দিয়েছিল স্বাদ যেন অমৃত! পটলার হাত ধরে মালতী নিচে নামে ক্যাম্পাসে তখন ঢাক বাজছে - মা এলেন মর্ত্যে সিংহের পিঠে চেপে! 

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন