কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০১৭

ফারহানা রহমান

এভাবেই মায়ার আলোয় ভেসে থাকি 



আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে,
আমার মুক্তি ধুলায় ধুলায় ঘাসে ঘাসে...

এই যে এত আলো চারদিকে ঝলমল করছে, আমাকে তো কই মুক্তি দিতে পারলো না! মুক্তি দিলো আঁধার। যে খরস্রোতা জলের উপর ঘর বানিয়ে আজন্ম প্রতীক্ষায়  বসে আছি, আর বানভাসির চোখ দিয়ে গুনে চলেছি আঁধার আকাশের অজস্র    তারা। এভাবেই তো আমি সুদূর অতীত থেকে জোৎস্না ভাঙার আগেই পাখিবনে ঢুকে পড়ি আর অমাবস্যা তিথির শেষের প্রহর পর্যন্ত গুনে যাই রাতজাগা তারাপথ অনিরুদ্ধ, ঊষা, চিত্রলেখওগো চিত্রলেখ, তুমি তো এখনো কালপুরুষ শিকারীর কোমরবন্ধের পাশে বসে আছো। তবে কীসের জন্য এতসব প্রতিশ্রুতি? ঘুড়ির উৎসব শেষ হলে যে অপেক্ষার রেশ লেগে থাকে, চোখের গহীনে, তাকেই কি তুমি তাহলে অনুপ্রেরণা বলে জানো? আর এই যে আমরা দুজন মানুষ এভাবে কখনো বা হাতে হাত রেখে হেঁটে গেছি বনের সরু রাস্তায় অথবা মানিকজোড় শাপের মতো জড়িয়ে ধরে কাটিয়েছি বিষাদের কত দুপুর, তাকে তুমি কী নাম দেবে বলো? কী সম্পর্কের জালে বাঁধবে আমাকে তুমি? অথবা তোমার নিজেকেই...     

আচ্ছা, কখনো কি দেখেছো, হারানো গন্ধের মতো মিশে আছে ঐ যে বিচ্ছেদের নীল দূরদিগন্ত জুড়ে? ঘুঙুরের কান্নার মতো গলে গলে পড়ে পিঙ্গল সব রাত? আহা...
ডান্স মি টু দ্য এন্ড অফ লাভ!  

দৃশ্যের বাইরেও যতটা দৃশ্য দেখবে বলে তুমি আবিষ্ট হয়ে আছ, তার আলোছায়া কখনো ছুঁতে পারেনি স্যাক্সাফোনের ধুন অথচ নৃত্যের মতো আঁকড়ে ধরা তোমার চুম্বনের ভ্রমণ শেষে, জলস্রোতে তোমার দেখা পাবো বলে কতদিন এভাবে অন্ধকারের দীঘিতে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালিয়েছিহয়তো তুমি এখনো ভাবছো মানুষের বোধের মধ্যে খেলা করে যে সব বিচিত্র রংধনু তাদের মায়ার গহন থেকেই নেমে আসবে কোনো একদিন শিশিরের শ্বেত...  
  
প্রতিটি মানুষের মধ্যে যে বিপুল বিরহের মহাসাগর 
তারই অন্ধকার কূপে
ডুবে মরে অসংখ্য মানুষ!

দুরন্ত অন্ধকার ডানা ঝাপটায় উরন্ত পাখির মতো। কখনো কি ভেবেছো এই ধূসর শহরে ইটের অরণ্যে খেলা করে কত শত শকুনের ডানা, তাতে নেমে আসে গভীর কোনো শীতের জীবাশ্ম! ঘোর লাগা চোখে তোমার দুর্নিবার শাসন কুয়াশার মতো লাগে। এই নিঝুম সাগরপাড়ে সারাদিন ধরে সুর এঁকেছি রংতুলির আঁচড়েপ্রুশিয়ান ব্লু গাউনে জড়ানো কেতকীগন্ধ। পায়ের ঘুঙুরে বেঁধেছি মহুয়াফুল...


তুমি বলেছিলে এই বণিক সভ্যতার দেশে ধূসর ফেনার ধূলিঝড় ওড়ে পথের দুয়ারেপাতাঝরার ক্লান্তির মাঝে নিঃশব্দ কান্নার মতো বসন্ত আসেমসৃণ পিচের রাস্তা গিয়ে মেশে গভীর সমুদ্রের প্রেমে...

আমি তোমারই, তোমারই, তোমারই নাম গাই
আমার নাম গাও তুমি...”

ওগো মায়া! বলো, কোন প্রাচীন ভাস্কর্যের অচঞ্চল চোখের গভীরতা তুমি এঁকে চলেছো আমার মনের ক্যানভাসে? চাঁদের আলোয় নামিয়েছো গণিকাদের ধূপছায়াআর যারা ছুঁয়েছিল তোমার বেওয়ারিশ ঠোঁটের প্রহসন তাদেরই দিয়েছো অজস্র অশ্রুর মতো বলাকার হিমযে পাথরের বুকে আমি ছিটিয়ে দিয়েছি বৃষ্টির ফোঁটা। সেখানেই উৎসবে মেতেছে শব্দ

যে অখণ্ড শূন্যতায় আমি ভেসে আছি, বোধ আর হৃদয়ের আড়ালে রেখেছি যে হাড়ের কঙ্কা্‌ তার বুকের অলিন্দে অলিন্দে নিঃস্ব কুঠুরিতে লুকিয়ে রেখেছি এক মুঠো প্লাবনের মতো নুন   

সেই মেঘের ভেলাতেই জ্যোৎস্নার থালা উদ্ভ্রান্তের মতো আবেশ মাখায় আমাকেঅথচ বিষণ্ণ দুপুরগুলোকে গিলে যাচ্ছে দেখো সৌখিন স্কচ হাতে একঝুড়ি মাংসের পেয়ালা। আমি আধঘুম জাগা চোখে দেখি 

দীর্ঘ উড়ালের পর 
তুষারহীন দেহ উপত্যকা
আর সারি সারি কুমারীদের পূজা অর্চনার কালে  
এত যে উৎসব, এসবই কি মৃত্যুর  
নাকি ভিপ্রেশনের বিভ্রম?




0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন