কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১ নভেম্বর, ২০১৭

দীপঙ্কর লাল ঝা

মুছুয়া শিং


আমগাছে ভূত। এটার নাম বাহাদুরপাড়া। শীতে জ্বর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুছুয়া সিং, মস্ত পালোয়ান। বাংলো দারোয়ান, বচ্চালোগ তাড়াতে জানে। তার ছোট্ট ঘর থেকে মাঝে মাঝে খুব সুন্দর চাল ভাজার গন্ধ আসে। একদম তুলতুলে ঘিএর গন্ধ। জিজ্ঞেস করলে বলে, কী বলি বিটুয়া, আজকাল যা ঘুটার দাম, এই পাশের খামার লিয়ে কিতনা দিন চইলবে?
আর এদিকে শুটকিও আসছে না, আরে ও শুটকি, আরে চাল লিয়ে যা! শুটকি কে কাকা? আরে ওই আম গাছের গিলহরিটার নাম শুটকি। কাকা, শুনলাম খুব ভালো আপনার গিরামের গল্প জানেন?
--হ, হ, হ, ! হা, সে বহুত দিন আগের ব্যাপারহামার পত্নী রাতের বেলা বটি লিয়ে মাছ কাটছিলো। হাতে থোড়া ছাই লাগিয়ে নিলে অসুবিধে হয় না। কাটতে কাটতে অনেক আগেই ছিলে থাকা মুখ থেকে বিকেল নেমে গেছে। তো এত স্পিডে কাটছিলো, মনে হচ্ছিল আঙুল মাছ কাটছে , নাহ, মাছ আঙুল কাটছে! আমি বললাম, আরে দাড়াও দাড়াও, একটু ধীরে । এই বলতেই লুগাই সপাট হাতের পাঁচ  আঙুল কেটে ফেললে। বাপু , কী বলি , আমি তো ভয়ে পুরো ফালুদা হয়ে গিয়েছিলাম! তারপর একটা বড় মাছের মতো কানকো উঁচু করে আর আমার ছেলে  মেয়ে ঘর থেকে হাতপাখা লিয়ে হাওয়া করতে করতে মাছের ডানা গজিয়ে উড়িয়ে দিলো। বাপু আমার কাছে এখনো সেই আঙুলগুলো আছে। এই দেখো গলায় মালা করে রেখেছি।
--এই শালা, কী মানুষ রে বাবা! তারপর কী হলো?
--আর বলো না বাবুয়া, পরশু চাঁদ থেকে এক বুড়ি এক চিঠি পাঠিয়েছিল। তাতে লেখা --
এই আমি ভুর-ভুর বুড়ি। আমার ছেলে পেয়েছে এক ছুরিপেনশন নিতে চলে গেছে ঘুড়ি। দাঁত খুঁজলে খুজলি হয়। বেঁচে আছি, কপালেতে ট্যাবলেট ভাঁজ, গুটুরগু গুটুরগু বুকে আছে খুব কম ভাব।
দশ মাস হয়ে গেলো, ছেলে পাঠায় না পয়সা-টাকা। তুমি ভাই লাঠিয়াল, দাও দুটো খাঁড়া!  
তো আমি পুরো ডান্ডা নিয়ে করেছি তার পাছা ঠান্ডা। বুড়ি বেশ ভালো আছে। বুড়ি বেশ গাছে আছে। আম গাছে ভূত।   
--তারপর?
--সেদিন বুড়ির তিন নাতি নাতনি উঠোনে বসে মজার সাথে লেখাপড়া করছিল। এবং তার সামনে দিয়ে আসছিল খুব সুন্দর নিম্বু পাতার গন্ধ। তা পাশে খেটকু কুত্তার ভালো লাগেনি। পাশের বাড়ির মিছিয়া দিদা আচলের গিঠে করে নিয়ে আসে  পায়েসফল, সে বেশ চালপ্রসাদ চেটে পুটে একেবারে নাতির আঙুল আঠা। খেটকুয়া পুরো অলিগলি নাপিজোখ করে এসে বই শুখা শুরু করে দিল। নাতনি ফিরিয়া গেছে হাতে স্টিলের গিলাস লিয়ে। এ বিটিয়া থোড়া পানি পিলা, গলা শুখিয়ে যাচ্ছে। আরে থোড়া হাত দিখা? ইটা কবে চুরি করলি? আরে তুই মার্বেল লিয়ে কি করবি? আরে দাদুয়া, গাছ থেকে ফল পেরে লিবো। দেখবি আমার গিলহরিটার যাতে কিছু না হয়। আমগাছে ভূত।
--তারপর?  
আরে একি! মুছুয়া সিং ফট করে মুখের সামনে ডিবিয়া ধরে বলছে, বিটুয়া কাল রাতে চুরি হয়েছে এখানে, খুন হয়েছে চৌধুরীবাবু। সবাই দরজার খিল এঁটে নিজের বচ্চালোগণকে ভয় দেখিয়ে শুইয়ে রেখেছিতুমিও কিন্তু নড়বে না। গল্প শুনে যাবেআরে রুক, থোড়া খেয়ে লি।
মুছুয়া সিং দাঁতের মধ্যে চালভাজা রেখে কড়মড় করতে করতে  বলা শুরু করলেনইতিমধ্যে মোচে চাল আটকে গেছে , তিনি একদম মুখ দিয়ে সুরুৎ করে টেনে আবার বলা শুরু করলেন
--আমি তখন জবান আছি। শরীরে দ্বিগুণ শক্তি। লাঠি তখন যার পিঠে পড়তো সে  একেবারে আঠারো দিন উঠতে পারতো না। চাবুক। আমাদের গেরামে দুটো শের ঢুকে গিয়েছিল। খান বাবুর একটাই চৌকি, আকাশের নিচে, সেখানে তিনি খৈনি বানাচ্ছিলেন, এ শের না বিল্লি, শালা মুরগি চোর, মার তালি, সে কি আর বলবো বাপু, ওই তালির মধ্যে যে মসলা তা পেয়ে ওই শের আর কোনোদিন আসেনি। খান  বাবা হালকে করে কান খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন, আরে এ ঝুমকি, আরে একটু কল থেকে জল তুলে দে। ঝুমকির ঠান্ডা মিষ্টি জল। হামার গলায় পানের মোহরির মতো আছড়ে পড়ছে নক্ষত্র। আহা! প্রচন্ড ঝরে নিমফুল। আমগাছ দূরে  থাকতে বলছে...


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন