কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৮

সুমী সিকানদার


ফিরছি শুরুতে

গিটারের সুর কোনো ঋতু মানে না। খোলা হাওয়ায় পাখিদের উড়তে আরাম  লাগে। ওরা মানুষের গায়ে গায়ে ওড়ে যেন নক্ষত্র নেমে এসেছে গাছের দূরত্বে। এটেনশনের ভঙ্গিতে দাঁড়ানো পামট্রিগুলো সকল অভিমান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

অচেনা পাখিদের কোনো ভয়ডর নেই। গটগট হাঁটে রাজকীয় গ্রীবা ঠুকরে দিয়ে খায় ডানাহীন মানুষের হাতের ঝাল চিপস উলটে ভয় পেয়ে লোকজন চিপসের প্যাকেট ফেলে পালায়। গিটারের সুর একটানা জট ভেঙ্গে ডাকার সাথে সাথেই সংশয় নিয়ে দুপুর নামে ছদ্মনামে এই ছদ্মনামটা কিন্তু পাড়ার কেউ জানতো  না। প্রথম চিঠি লেখা মারমা মেয়েটিও না। তার  মাতাল রঙ আর উন্মাতাল চোখে ছিলো ঘরপালানো কারিগরি না ঘুমানো গল্প।

গিটার তার চঞ্চল সুর টেনে ধরার সাথে সাথে এতক্ষণের হট্টগোল সব থেমে গেলো কথাগুলো মুখে না বলে যেন লেখা হতে থাকলো কালো স্লেটে সাদা চকে।

গান বেচাকেনার সময় পাখিটাও ঠোঁটে তুলে নেয় স্বরলিপি। পাখির ঠোঁট ভাড়া করে তাকে আলতো চুমু পাঠাই দ্রাঘিমায় তামাম এলাকার ছুটে বেড়ায় লেবু-চা ঘ্রাণ, মশলা চা ঘ্রাণ প্র্যমবুলেটরে আস্ত টলটলে শিশু মাম্মাম শব্দ শোনায়। এ সমস্ত দাবী থেকে নেমে পড়ি ধীরে ধীরে।

আমন্ত্রণ মানেই কান পেতে থাকা দু’দিনের অরণ্য গাঁটছড়া বেঁধেছিলো নুয়ে পড়া বিশাল গাছের নিভৃতে, শান্ত বাঁশের বেদি করা গোলপাতার ছায়ে, স্বচ্ছ জলে অস্বচ্ছ মাছ ডেকে নেবার ছিপে মাছ আসতে ঢের বাকি সেই সুযোগে ফিরছি নির্বাক।

কবিতারা কন্ঠ থেকে ছাড়া পেয়ে দোতালা তিনতলার চোরাচাহনিতে ছুটোছুটি করে  তাকিয়ে থাকা নদীর অংশ হয়ে ছবির পর ছবি সংগ্রহ করে কালো টিপ কপালে ঝুঁকে ঝুঁকে। আমার কিছু সময় বাঁচানো ডাইরীর পাতা হাতে করে ফিরছি এখান থেকেই

চায়ের কাপের তলানিতে সব ছাই ভেঙ্গে পড়ে টুপটাপ তীব্র হুইসেলে মাতে শালিকের হলুদ জোড়া ঠোঁট অল্প আলোয় দ্বিধা কাটে, দাউদাউ বেড়ে ওঠে আকাঙ্ক্ষা এসব থেকে ফিরছি না দেখার পানে। না দেখতে দেখতে, দেখা না হওয়াটাই মুখস্ত হয়ে গেছে। বরং দেখলে কী জবাব দেবো, তা মনে করতে থাকি  জোর করে। জোর করে থাকা যায়, রাখা যায় না।

দিন শেষে নম্রতম আগুন থেকে ফিরছি। আগুন না পুড়িয়ে ভেজাতো সিঁড়িঘরের রোদ চলে যাওয়া খাপছাড়া রঙ। অসময়ের বর্ষাকাল থেকে বাতাবি বিকেলকে  আলাদা করে চেনা যায় না যখন, ঠিক তখনই কবিতারা এক একটা দৃশ্য হয়ে ভাসতো বিভঙ্গে। ফিরছি ফের অন্তরের ডাকাবুকো অন্তরালে।

লিখে লিখে ফিরছি তোমার ফ্যস্টিভ মুড থেকে অনুন্নত আমার টং ঘরে। হোয়াটস অন ইয়োর মাইন্ড?’ মনে কি লালরঙ দ্বিধা আছে? মেসেজের জবাব দিতে ভুলে যাওয়ার পর রিকশার টুংটাং শুনতে ভালো লাগতো না। জ্যামজট ফেলে ছুটে আসতে ইচ্ছে হতো, তোমাকে দুটোলাইন লেখার জন্য। কতবার মাঝপথ থেকে ফিরেছি মুঠোস্পর্শে ফিরিয়ে আনার জন্য বার বার ফিরতে চাওয়ার নাম কি প্রণয়? ফিরছি লাগাতার প্রেম থেকে।
  
ফিরছি তুষারের উপর উপচে থাকা রোদের লাজুক চুমু থেকে। পথের সারি বেঁধে চলা শিশুরা অবাক চোখের শ্যওলমনিতে। তাদের কার চোখে যেন আমাদের  ফুলখুকির নাম ফুটেছিলো আরন্তি ফিরছি আরন্তির আরম্ভে।

হাতের তালুতে মুড়ে রাখা বায়োস্কোপ মুঠো খুলে বেরিয়ে গেছে চেনা না চিনে  অচেনা ঘ্রাণে ভ্রমণ যার স্বভাব, তাকে চেনাগণ্ডির লক্ষণরেখার ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। ঝুলন্ত কাঠের সেতুতে নামে শ্রাবণ ফিরছি ভোর তাকানো কাঠের উষ্ণ পাতাটন থেকে।

ফিরছি ঘোলা হয়ে থাকা বোতাম কথা লুকানোর অছিলায়। টুংটাং ভাবনা যখন ঘুমে জড়ায় তাবৎ নিশ্চিন্ত হেলানের আশ্বাসে আমি সাবধানে চুমু খাই ঘুমন্ত তোমার চোখে ফিরছি প্রথম লেখায় প্রথম দেখায়, মোড়কহীন উন্মোচিত গোটা গোটা অক্ষরে। ফিরছি অপ্রচলিত কবিতায়

ইঁদারায় দড়ি ফেলে তুলি গতশীতের নদী ফিরিয়ে আনি মাইনাস দাপট।  জ্যাকেটের পকেটে ঢোকানো কিছু কুয়াশায় ঘুমিয়ে গেছে বিবাদ  অনুবাদে  কফির সমতল বুকে আকি ফাইনার্টস। ফাইন আর্টস থেকে ফিরছি তুরন্ত।

হেঁটে যেতে যেতে ছায়া খুঁজি নিজেই নিজের। হারানো থাকুক অবিরাম লুকিয়ে থাকা। ফিরছি উন্মাতাল প্রথম পেগের আগে আগেই, প্লেটে ভাজা বাদাম এবং মাখা চানাচুরের মদির ভাষা ফিরছি হাত ধরতে চাওয়া ইচ্ছের আগেও ফিরছি বইমেলায় আচমকা পাওয়া কন্ঠের ইশারার আগে আগে

সব কিছু থেকে ফেরা শেষে ফিরিয়ে নিয়েছি বন্ধু হবার একমাত্র আবেদন
চুপি চুপি ফিরছি এবারের গাঢ়কালির উৎসর্গে, মাঝরাতে


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন