কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ৩ মার্চ, ২০১৮

দেবযানী বসু




হরবোলা


প্রতি পাঁচ বা দশ মিনিট অন্তর মুরগির মরণডাক শুনতে শুনতে পঁচাশি বছরের বৃদ্ধ অবিনাশ চক্রবর্তীর এখন বিরক্তিই লাগে চলছে ভালো দাদাদের টু পাইস রাজনীতি অথবা মহিমাময় ভাষায় বললে অর্থনীতির কাঠামোয় টাঙানো মাৎস্যন্যায়।  হাট্টাকাট্টা জোয়ান আমীরচাঁদ মুরগির মাংসের দোকান দিয়েছে রাস্তার ধারে মোটা সেলামী দিয়ে উত্তম মন্ডলের ছাতার তলায় আশ্রয় পেয়েছে ডমরুধর বলেছিলেন মশারা যার যার এলাকা ভাগ করে নেয় মশাদের আঞ্চলিক মস্তান তকমা পরা উত্তম মন্ডলের পদনখকণা পেয়ে আমীরচাঁদ ধন্য ঘরে অ্যাজমাধরা বোন বিয়ের যোগ্যা। বিধবা মা ফাতেমা পঙ্গু ক্লাস টেনের পর আর লেখাপড়া চালানো যাচ্ছিল  না অনেক কষ্টে কর্পোরেশনের বিধবাভাতা পাওয়া মায়ের টাকাতেই মুরগির মাংস বিক্রির দোকান তৈরি হলো গত একমাস ধরে দু’ চারটে করে খদ্দের বাড়তে  বাড়তে এখন বেশ রমরমা চুনহাগা মুরগিগুলো পটাপট বিক্রি হচ্ছে প্রথম প্রথম তো সকালের দিকে ঘন্টা তিনেক দোকান চলত এখন রাত দশটা অব্দি কী সেল!  মা বোনের মুখে হাসি ফুটেছে -- গরম গরম খইভাজা বটি ছুরি মাপক যন্ত্র বালতি সব চাচার কাছে পাওয়া
চাচাতো ভাইটি বড় বড় সব পাশ দিচ্ছে চাচার অবশ্য বাজারে দোকান আছে সেটা তিনি হাতছাড়া করতে চান না ওখানে তিনি তার দুলাভাইয়ের ছেলেকে বসিয়েছেন আর পাইকারি বাজারে পরিচিত ব্যবসায়ী ধরিয়ে দেবার কাজটাও চাচা  করে দিয়েছেন
কিন্তু বললে কী হবে, এই যে বড় পাঁচিলটা চলে গেছে ওটা একটা এক বিঘে  জমির একদিকের সীমানা এই বাউন্ডারি লাগোয়া আমীরচাঁদের অস্থায়ী খাঁচাময় দোকান জমিটা মামলার আদর খেয়েছে এখানে ফ্ল্যাট উঠতে এখনো একশো বছর পেরিয়ে যাবে তবে জমিতে সিকিউরিটি মোতায়েন করা আছে এই জমিতেই আগে  আমীরচাঁদরা ছাঁচের বেড়ার ঘরে থাকতো প্রায় কুড়ি বছর ছিল হঠাৎ করে খবর চাউর হলো, এখানে ফ্ল্যাট উঠবে জমি নাকি বিক্রি হয়ে গেছে মালিকপক্ষ কিছুটা  ঠেকিয়ে কিছুটা টাকা দিয়ে দখলদারমুক্ত করে নিয়েছে ওরাও টাকা পেয়ে খালপাড়ে ধানক্ষেতের দিকে সরে গেছে কিন্তু পেটের দায়ে এই অঞ্চলে পা রাখতে হয় এখন সিকিউরিটির কাছে গামলা ওজনযন্ত্র ইত্যাদি জমা রেখে বাড়ি যায় পাঁচিলের গায়ে  দোকানের নাম আর ফোন নম্বর লেখা আছে
মুস্কিল হলো গিয়ে অবিনাশ চক্রবর্তীর ওনারা এখানকার প্রায় একশো বছরের  প্রাচীন বাসিন্দা থাকেন দোতলা এলা মাটি রঙের বাড়িতে ছেলে নাতিপুতি নিয়ে সংসার দোতলার বারান্দায় বসে তাঁর দিন কাটে মাথাটা অনেক দিন আগে বিগড়ে ছিল বারান্দায় বসে বসে আজ বিশ্ব বছর হলো গালাগালি দেন মুটে মজুর  রিক্সাওয়ালা পথ চলতি ভদ্রলোক আর বিশেষ করে সরকারকে সবার গা সওয়া হয়ে গেছে ঠাট্টা মস্করা করে মজা করে লোকজন ক্ষেপিয়ে দেয় আরো মাঝে মাঝে। ওনার ছোটভাই নকশাল আন্দোলনের সময়ে বেওমক্কা মারা যায় পুলিশের  দয়ায় মারা যায় নি নিজের অথবা বিরোধী দল কারো বিশ্বাসঘাতকতার শিকার ছিল সে আর খুনটা রাস্তার মোড়ে হয়েছিল মানে মানুষটা বাড়িতে ঢোকার আগে আক্রান্ত হয়েছিল তার শেষ চিৎকারটা ছিল মর্মভেদী
অবিনাশ চক্রবর্তী কাজকর্ম জীবন নির্বাহ করলেন ঠিকই অবসরের পর সেই সব স্মৃতি ফিরে এল
আজকাল অবিনাশ রাত্রে ভালো ঘুমান না মুন্ডি কর্তিত মুরগিগুলো তাড়া করে তাকে তারস্বরে বারান্দায় বসে তিনি এক সকালে ভয়ার্ত মুরগির  মতো চিৎকার  করতে লাগলেন বাড়ির লোকেরা থামাতে পারে না বাড়ির নিচে লোকজন জড়ো হয়ে গেল
আমীরচাঁদ হাঁ করে দাদুর এই অপূর্ব হরবোলা হবার ক্ষমতা দেখতে থাকে

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন