কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ৩ মার্চ, ২০১৮

বহতা অংশুমালী




শিরোনামহীন চারটি কবিতা


(১) 


দুটো তিনটে নরম শব্দের উপর
আজকের বিকেলটি রাখো
তাহলে সেইই যে দুপুরে
উড়ো চুলে বেরিয়ে গিয়েছি
পাখিদের সঙ্গে ফের আসবো না হয় আমি ফিরে
নদীতে রোদ ঝিলমিল করেছে
এমনিই দিয়েছে হাওয়া পাড়ে
এমনিই কাদের কিছু অসংলগ্ন এলোমেলো
রাখালিয়া সহবাস লালচে ধুলোয় উড়ে এলো
সে শুধোলো ঊর্ধ্ববাহু কি আমি করেছি
উড়িয়ে দিয়েছি যত
পেঁজা পেঁজা তুলো তুলো
দুঃখগুলো নদীর উপরে
শহরের একফাঁকে একচিলতে নদী
এত ক্লেদ এত তার সাবানের ফেনা নিয়ে
বয়ে বয়ে যেতে পারে যদি
যদি সে দুপুরে এই কাঙাল চোখকে এক
দৃশ্যও এনে দিতে পারে
আমিও ফিরতে পারি পাখিদের সাথে সাথে
কিছুক্ষণ বসে থেকে
রোগাসোগা নদীটার ধারে


(২) 


যেসব দোকানে ভালোবাসা পাওয়া যায়
আমি পারলেই ফাঁকতালে ঢুকি
না ঢুকতে পারলে তাদের কাঁচের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখি কে কার কানের পাশে চুল সরিয়ে দিলো
কে যেন কাঁদছিলো আর কে পাশে চুপটি বসেছিল
হাতে হাত রেখে
ঠাণ্ডার সময়ে সেই কথা সব নকশা কাটে দোকানের কাচে
মিঠে মিঠে ওম ওঠা ছোট ছোট কথা!
যেসব দোকানে ভালোবাসা পাওয়া যায়!
গ্রামের সব জমির মতো তাদের মালিকানা সঠিক
শহরের সব বাড়ির মতো তাদের নেমপ্লেট দেয়া আছে
সমুদ্রের ধারে সব হোটেলের মতো তারা ব্যক্তিগত বিচে ভাগ করা
শুধু বেড়ার ফাঁক দিয়ে খানিক সুনীল দেখা যায়
শুধু ছাদের উপর উঠলে তাদের বাতাসে চুল ওড়ে
এখন জীবন গেলো আদ্দেক আমার দোকানে
যাই পাওয়া যাক, (হ্যাঁ না হয় আসবেন দরদাম রাখবেন
সে কথা মুলতুবি)
আমি গোপন দালালকে বলে রাখি
আমি সন্দেহজনক সব গলিঘুঁজি ঘুরি
"দেখবেন যদি কোন তারা খসে-
যদি - সমুদ্রের পাশে কোনো সমাধির বালি খোঁড়া হয়"
যদি- সিজিলমিছিল পাড়া দিয়ে কারো শবযাত্রা যায়!"
"দেখবেন, দেখবেন -
আমি রুটি গড়তে পারি, কথা দিয়ে মিনার বানাতে,
আমি বাগানের মাটি খুঁড়তে পারি চারাগাছ,
পারি দাগ মেপে মেপে সব ওষুধ খাওয়াতে
আমি এনযাইমের সাথে এনযাইমের মতো খাপে খাপে মেলাতেও পারি
এমিবার মতো এই অনিয়ত আকার হৃদয়!"
কার্ড রাখবেন, আর খবর দেবেন আমি
সাম্মানিক দেবো, আমি -
একবস্ত্রে এসে ঢুকে যাবো


(৩)


কোন বিভঙ্গটি ভালো লাগলো?
তখন চাঁদের গায়ে চুরচুর মেঘ আর বিস্তীর্ণ রাত
ছোট নদীটির গায়ে চাঁদ
উপলে উপলে লাফ, আমরা রঙ্গে আহা ওরাও রঙ্গে
আমি ফিসফিস করে বলি সেই যে রমণক্লান্ত হয়ে
আমার উপরে নুয়ে থাকলো
মুচকে তৃপ্ত হেসে জানলার থেকে জেনে রাত চলে যায়
পরদিন ঝিক ঝিক ঝম ঝম ট্রেনে উঠে
আমার কপাল থেকে চুল সে সরায়
আহা বয়ে যায় হাওয়া
আর মনে থাকে শুধু এই গাছেদের সরে সরে যাওয়া
কাল সে নরম ছিল, আজকে আমার চোখে ওম
তুলতুলে স্মৃতিটুকু আমি হ্যাণ্ডব্যাগে সেও পকেটে রাখলো
রমণক্লান্ত হয়ে যখন সে আমার ছায়ায়
নুয়ে থাকলো


(৪)


আমি একটা প্রাচীন গোলাপ ছিঁড়ে ছিঁড়ে হাওয়ায় ছড়াচ্ছি
পাপড়িগুলো অনিচ্ছুকের মতোন দূরে
আস্তে আস্তে যাচ্ছে উড়ে
এখন তোমায় এ বুক খুঁড়ে
পাই না আমি,
স্মৃতি আমার রক্তশূন্য -
তাই,
হাওয়াতে ভাসাই
নেমন্তন্ন শুকিয়ে থাকে, পাতার ফাঁকে
খিন্ন কোনো চিলেকোঠার ঘরের ডাকে
খুব পুরনো বসন্তকে ফসিল ক'রে
রাখলো ধরে
মাঝে মাঝে পাতাঝরার রাস্তা দিয়ে
হাঁটলো গিয়ে,
একা
গোলাপটাকে ফেলে দিয়ে ভুল করেছি
তোমার তো নয় আমার ছিলো
তুমি তো নও
হৃদয় নিজেই প্রেম হয়েছে
এমনো হয়
আস্তে আস্তে ছোট্ট ঘরের একলা জীবন
অনেক কিছুই ভালবাসে
আমরা শুধু ভুলে গেছি
মধ্যে দিয়ে স্রোতস্বিনী বইছে সময়


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন