কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৮

সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ




ফোন


লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। নানাবিধ কারণে এর আগে অনেকদিন লেখা হয়নি। অনেকগুলো লেখার চাপ ছিল। লেখার পাঠানোর জন্যে বারবার ফোন আসছিল
আমি যখন লিখি তখন অন্যদিকে মন থাকে না। লেখার মধ্যে ডুবে যাই। অনেক সময় সেলফোনের কথাও মনে থাকে না। চার্জ শেষ হয়ে বন্ধ থাকে সময় সময়।

আমার লেখার চাপ, স্ত্রী শাহানা পারভীন বোর্ডের খাতা দেখায় ব্যস্ত; সেলফোনটা পাশের রুমে। রাত তখন সাড়ে বারোটা কী পৌনে একটা হবে।  পাশের রুমে সেলফোনটা অনেকক্ষণ ধরে বাজছে। অবাক হলাম না। এ সময়ে আমার প্রচুর কল আসে। শাহানা গিয়ে ফোনটা ধরলো। আমার আগেই বলা ছিল, খুব জরুরি ফোন না হলে আমাকে না দিতে। ফোনে কথা বলে শাহানা আমার কাছে এলো।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কার ফোন?
শাহানা উত্তর দিল, তোমার এক বন্ধু ফোন করেছিল।  
- কী নাম? 
- কী যেন নাম বলল... কায়সার হামিদ না হামিদ কায়সার!
- কেন ফোন করেছিল?
- বলল এই মাঝরাতে তোমার সাথে গল্প করতে নাকি ওনার খুব ইচ্ছে করছে।
- তুমি কী বললে?
- আমি বললাম, উনি এখন লেখায় ব্যস্ত আছেন, কাল সকালে ফোন করবেন
- কী করেছো তুমি!
- কেন, তুমিই তো বলেছিলে জরুরি ফোন না হলে তোমাকে না দিতে।
- এর  চেয়ে জরুরি ফোন যে আমার জীবনে আর নেই সে কথাটা আমি তোমাকে কী করে বোঝাবো! ও আমার জীবনের সেরা বন্ধু। কতদিন ধরে ওর  ফোন নাম্বার খুঁজছি। ওর সাথে কথা বলার জন্যে মুখিয়ে আছি।
- বেশ, এখন তো উনি জেগেই আছেন, তুমি ফোন করে কথা বলো। তোমার বেস্টফ্রেন্ড, তুমি সারারাত কথা বলো। আমার কোনো আপত্তি নেই।

শাহানার কথাটা আমার খুব পছন্দ হলো। হাতের লেখাটা শেষ করে ওই নাম্বারে ফোন করলাম। ফোন সুইড অফ। বারবার ফোন করলাম। একই উত্তর,দিস নাম্বার ইজ নট এ্যাবেলএ্যাবল নাও, প্লিজ ট্রাই লেটার’।
রাতে ভালো করে ঘুমোতে পারলাম না। সুপ্ত আমাকে কেন ফোন করেছিল, কী কথা বলতে চেয়েছিল? সুপ্তকে বলার জন্যে কত কথা জমে আছে আমারও বুকের ভেতর। যাইহোক নাম্বার যখন পাওয়া গেছে তখন আর অসুবিধে নেই। সকালেই কথা বলা যাবে।

অনেক রাতে ঘুমোতে যাবার কারণে সকালে একটু দেরিতে আমার ঘুম থেকে  ওঠার অভ্যেস। ভোর পাঁচটার দিকে সেলফোনটা বাজতে থাকলো। এত সকালে কেউ ফোন করলে আমি খুব বিরক্ত হই। ঘুমের ঘোরে আজেবাজে কথাও বলে ফেলি। অনিচ্ছেয় ঘুমের মধ্যে ফোন ধরলাম ।
- হ্যালো, আমি পাভেল বলছি। খবর শুনেছিস?
- কোন পাভেল?
- আরে দোস্ত, আমি আমি!
এবার হুঁশে এলাম।
- কী খবর, দোস্ত?
- খবর কিছু জানিস না?
- না, কী খবর?
- কাল রাত তিনটে নাগাদ সুপ্ত মারা গেছে।

এক ঝটকায় উঠে বসলাম। আমার সারা শরীর কাঁপতে থাকলো। কে যেন আমার বুকের ওপর একখানা দশ টনের ভারি পাথর চাপিয়ে দিল। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে আমার।
সুপ্ত মানে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হামিদ কায়সার। যে কাল রাতেও আমাকে ফোন করেছিল। আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছিল। আমার কথা বলতে খুব কষ্ট হলো । তবু জিজ্ঞেস করলাম, কীভাবে?
- হার্ট এ্যাটক।
আমি আর কোনো কথা বলতে পারলাম না। আমার দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো গালে। গাল বেয়ে কপোলে। ভাসিয়ে দিল বুকের উষ্ণ চরাচর। আমি স্তব্ধ হয়ে বিছানার ওপর বসে থাকলাম। আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হতে থাকলো তীব্র থেকে তীব্রতর।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন